ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে গণভবনে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী;###;দেশের মানুষের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হোক, দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হোক গত ৩৮ বছরে এমন কোন কাজ করিনি

আস্থা ধরে রাখতে হবে ॥ দেশের জন্য কাজ করায় আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছে

প্রকাশিত: ১০:৩১, ১৮ মে ২০১৯

আস্থা ধরে রাখতে হবে ॥ দেশের জন্য কাজ করায় আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পঁচাত্তরের পর এত বড় দায়িত্ব আমাকে নিতে হবে এটা কখনও আমি ভাবিনি, চাইওনি। এটা চিন্তাতেও ছিল না। দেশের জন্য কাজ করতে এবং গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনতে দেশে ফিরেছিলাম। এজন্যই দিনের পর দিন সংগ্রাম করেছি। কেননা, গণতান্ত্রিক ধারা ছাড়া দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নতি সম্ভব নয়। বাংলাদেশের মানুষের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হোক, বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হোক, গত ৩৮ বছরে এমন কোন কাজ আমি করিনি বা আমার পরিবারের কোন সদস্য কখনও করেনি। নিজেদের চাওয়া-পাওয়ার জন্য কাজ করিনি, কাজ করেছি দেশের মানুষের জন্য। শুক্রবার ছিল বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। দিনটিতে সকালে গণভবনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগ-আপ্লুত কণ্ঠে এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি আরও বলেন, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। এই দেশটা যেন আবারও স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের হাতে না যায়। কেউ যেন দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে। সেদিকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। তিনি বলেন, স্কুল জীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম। তারপর কলেজ এবং ইউনিভার্সিটিতে তখনও ছাত্রলীগেরই সদস্য ছিলাম। আমার রাজনীতি ছাত্ররাজনীতি থেকেই শুরু। তবে কখনও কোন বড় পোস্টে ছিলাম না, পোস্ট চাইওনি কখনও। আমরা পদ সৃষ্টি করে এবং সবাইকে পদে বসানো এই দায়িত্বটাই পালন করতাম। যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি তখন বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির একজন সদস্য ছিলাম। তিনি বলেন, ক্ষমতায় থেকে দেশের জন্য কাজ করার কারণেই মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছে আওয়ামী লীগ। আর এ কারণেই শুধু দেশে নয় গোটা উপমহাদেশে আওয়ামী লীগ শুধু একটি রাজনৈতিক দল নয় বরং একটি প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছে। দেশবিরোধীরা পঁচাত্তরের পর স্বাধীনতার চেতনা ব্যাহত করেছে। যারা স্বাধীনতা ও দেশের চেতনায় বিশ্বাস করে না পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে তারা ক্ষমতায় থাকার কারণে যে আদর্শ নিয়ে এদেশ স্বাধীন হয়েছিল তা বাস্তবায়ন হয়নি। বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, যারা বারবার চেয়েছে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে, তারা সফল হয়নি। আওয়ামী লীগ কিন্তু আওয়ামী লীগের মতোই ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে। আজকে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ এক নম্বর রাজনৈতিক দল। যে দল মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছে। সেই আস্থা ও বিশ্বাস আমরা দেখতে পেয়েছি এবারের নির্বাচনে। নারী-পুরুষ থেকে শুরু করে প্রথমবার ভোটার হওয়া তরুণরা সবাই আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে তাদের আস্থা, বিশ্বাস ও সমর্থন ব্যক্ত করেছে। এর কারণ হলো-আমরা যে ক্ষমতায় থেকে মানুষের জন্য কাজ করেছি, মানুষের জন্য স্নান করেছি, মানুষের ভাগ্য গড়ার জন্য যে কাজগুলো করেছি, সেটা মানুষ উপলব্ধি করতে পেরেছে। এটা ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যে কোন রাজনৈতিক নেতার জন্য এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে, মানুষের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করা। নইলে ক্ষমতায় থাকলে সাধারণত মানুষের জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়। কিন্তু আমরা ক্ষমতায় এসে মানুষের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছি বলেই মানুষের ভোট আমরা পেয়েছি। জনপ্রিয়তা ও সমর্থন দুটোই বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হোক, বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হোক, গত ৩৮ বছরে এমন কোন কাজ আমি বা আমার পরিবারের কোন সদস্য কখনও করিনি। আমরা যতবার ক্ষমতায় এসেছি, মানুষের জন্য কাজ করেছি, তত মানুষের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছি। তিনি আরও বলেন, ব্যক্তিগত জীবনে কী পেলাম, না পেলাম সেই চিন্তা করি না। দেশের মানুষের জন্য কতটুকু করতে পারলাম, কতটুকু দিতে পারলাম সেটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা। টানা ৩৮ বছর দলের সভাপতি থাকা বোধহয় একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তখন উপস্থিত নেতাকর্মীরা সমস্বরে ‘না’ বলে ওঠেন। তারা শেখ হাসিনার উদ্দেশে বলেন, ‘আপনিই সঠিক নেতা, আপনার হাতেই দেশ ও দল নিরাপদ। আপনাকেই এ দায়িত্ব চালিয়ে যেতে হবে।’ জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আমার মনে হয় আপনাদেরও সময় এসেছে, তাছাড়া বয়সও হয়েছে, এ বিষয়গুলো তো দেখতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে যখন ফিরেছিলাম (১৯৮১ সালের ১৭ মে), সেদিন আকাশ মেঘেঢাকা ছিল। প্রচন্ড ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছিল। ফ্লাইটটি বাংলার মাটি ছুঁয়েছে, ট্রাকে করে আমাদের নিয়ে আসা হচ্ছে। ওই সময় ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে হাজার হাজার মানুষ এসেছিল। এয়ারপোর্ট থেকে সংসদ ভবন পর্যন্ত এত মানুষের ঢল যে এইটুকু পথ আসতে প্রায় চার ঘণ্টা সময় লেগে গিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার সেই নির্মম ঘটনার কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, মাত্র ১৫ দিন আগে, জুলাই মাসের ৩০ তারিখে ছোট বোন রেহানাকে নিয়ে আমি জার্মানিতে গিয়েছিলাম। রেহানা পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কলেজে গেলাম। সবাইকে রেখে গিয়েছিলাম, কামাল, জামাল, রাসেল। মাত্র ১৫ দিনের মাথায় শুনলাম, আমাদের কেউ নেই, আমরা নিঃস্ব। আমাদের দেশেও আসতে দেয়া হলো না। দেশের জন্য কিছু করার তাগিদ থেকেই ফিরে এসেছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি সিদ্ধান্ত নিলাম দেশে আসব। আমি জানি না কী করব, কোথায় থাকব, কই যাব। অনেক বাধা, অনেক বিপত্তি। তবু সিদ্ধান্ত নিলাম, আমাকে আসতেই হবে। বঙ্গবন্ধুই রাজনৈতিক আদর্শ ছিলেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, রাজনীতির কাজ করে যেতাম আব্বার আদর্শ নিয়ে। তিনি দেশের জন্য কাজ করেছেন। বছরের পর বছর জেল খেটেছেন। আমরা কখনও টানা দুই বছরও আব্বাকে জেলের বাইরে পাইনি। এ নিয়ে আমাদের কোন হা-হুতাশ ছিল না। আমার মা খুব চিন্তাশীল ছিলেন, তিনি বাসাও দেখতেন, বাইরেও দেখতেন। সাংসারিক কোন ঝামেলা তিনি আব্বাকে দিতে চাইতেন না। আমাদের দাদা-দাদি, চাচারা পারস্পরিক সহযোগিতা করতেন। কাজেই এমন একটি পরিবেশ থেকে আমরা উঠে এসেছি, যে মাথাতেই ছিল দেশের জন্য কিছু একটা করে যেতে হবে। দেশে ফেরার পরের প্রতিকূল পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে ফেরার পর থেকেই পদে পদে বাধা। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না, তারাই তখন ক্ষমতায়। ১৯৭৫ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত ১৯টি ক্যু হয়েছিল। এক সামরিক শাসকের মৃত্যুর পর আরেক সামরিক শাসক এলো। আমরা আওয়ামী লীগ কিন্তু গণতন্ত্রের জন্য একটার পর একটা সংগ্রাম করেই গেছি। কারণ আমরা বিশ্বাস করি, গণতান্ত্রিক ধারা আর ব্যবস্থা ছাড়া দেশের উন্নয়ন করা সম্ভব না। পঁচাত্তর পরবর্তী সময় ছাড়াও ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত হাজার হাজার নেতাকর্মীকে নির্যাতন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তা সত্ত্বেও দলকে টিকিয়ে রাখতে যারা অবদান রেখেছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ঠিক যেভাবে গড়ে উঠেছিল, ঠিক সেভাবেই আজ বাংলাদেশের এক নম্বর পলিটিক্যাল পার্টি। যেভাবে মানুষের আস্থা, বিশ্বাস আমরা অর্জন করেছি তা আমরা দেখতে পাই এবারের নির্বাচনে। আজ বাংলাদেশ সারাবিশ্বে সম্মানের সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছে। মানুষ বলে, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। আমি জানি না, যখনই একটা কাজ সফলভাবে করি, তখন শুধু আমার এটাই মনে হয় যে, নিশ্চয় আমার আব্বা-আম্মা বেহেশত থেকে দেখছেন। সকালে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ দলটির শীর্ষ নেতারা প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারাও প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা সপরিবারে নিহত হওয়ার পর বেশ কয়েক বছর বিদেশে নির্বাসিত থেকে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। দেশে ফিরে আসার আগে বিদেশে থাকা অবস্থায় তিনি আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন। এরপর থেকে তিনি টানা ৩৮ বছর বাংলাদেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক সংগঠনের আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ১৯৯৬ সালের আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এক টার্ম ও ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকে টানা তিনবার মিলিয়ে বাংলাদেশে ইতিহাসে ৪ টার্ম প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন শেখ হাসিনা।
×