ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘কণ্ঠস্বর নয়, আত্মার শক্তিতে গাইতেন সুবীর নন্দী’

প্রকাশিত: ১০:১৪, ১৮ মে ২০১৯

 ‘কণ্ঠস্বর নয়, আত্মার শক্তিতে গাইতেন সুবীর নন্দী’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তোমাকে কত যে বেসেছি ভালো/সে কথা তুমি যদি জানতে ...। শিল্পীর প্রতি ভালবাসার প্রকাশ ঘটল তারই গাওয়া শ্রোতাপ্রিয় সঙ্গীতের সুরে। গানে গানে ও বক্তার কথনে ব্যক্ত হলো বাংলা গানের কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী সুবীর নন্দীর প্রতি গভীর অনুরাগ। সেই সূত্র ধরে শিল্পীর কীর্তিকে স্মরণ করে বক্তারা বললেন, চলে গেছে দেহখানি রয়ে গেছে কণ্ঠস্বরটি। মানুষ বেঁচে থাকে তার কর্মে। তাই সুবীর নন্দী না থাকলেও মাঝে বেঁচে থাকবে তার গান। কণ্ঠ নয় হৃদয় দিয়ে গাইতেন এই শিল্পী। তার গানগুলোকে সংরক্ষণ করতে হবে। ছড়িয়ে দিতে হবে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে। শুক্রবার বিকেলে শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে এ স্মরণানুষ্ঠানের আয়োজন করে সঙ্গীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ। মঞ্চের একপাশে রাখা ছিল পুষ্পমালায় জড়ানো সুবীর নন্দীর প্রতিকৃতি। ছবির সামনে মৃদু আলো ছড়িয়ে জ্বলছিল প্রদীপ। এমন আবহের মঝে সহযোদ্ধাকে স্মরণে মঞ্চে আসেন পরিষদের সভাপতি তপন মাহমুদ। ভালবাসা জানিয়ে গাইলেন- জীবন মরণের সীমানা ছাড়ায়ে/বন্ধু হে আমার রয়েছ দাঁড়ায়ে ...। এই পরিবেশনার মাধ্যমে শুরু হয় স্মরণসভা। গান শেষে গীতিকবি রফিকউজ্জামান পাঠ করেন সুবীর নন্দীকে নিবেদিত প্রার্থনাপত্র। এরপর শিল্পীর স্মৃতিচারণ এবং বর্ণিল সঙ্গীত জীবনের ওপর আলোকপাত করেন কণ্ঠশিল্পী, সুরকার, সঙ্গীত পরিচালকসহ বিশিষ্টজনরা। আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে ভেসে বেড়িয়েছে সুবীর নন্দীর গাওয়া গানের সুর। সুবীর নন্দীকে স্মরণ করে কথা বলেন সঙ্গীত পরিচালক সুজেয় শ্যাম ও অনুপ ভট্টাচার্য, নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, সাংবাদিক আবেদ খান, শিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায়, ফকির আলমগীর, খুরশীদ আলম, আকরামুল ইসলাম, সাদিয়া আফরিন মল্লিক, কবি নাসির আহমেদ, সুরস্রষ্টা মাকসুদ জামিল মিন্টু, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডাঃ সামন্ত লাল সেন, বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক নারায়ণ চন্দ্র শীল, শিল্পীর ভাই সুবিনয় নন্দী প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য দেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ রায়। সুজেয় শ্যাম বলেন, অনেক শ্রমের ফসল হিসেবে তৈরি হয় একজন শিল্পী। তেমনই এক সঙ্গীত সাধক ছিলেন সুবীর নন্দী। রামেন্দু মজুমদার বলেন, কণ্ঠ নয় হৃদয় দিয়ে গান গাইতেন সুবীর নন্দী। সেজন্যই তার গান দাগ কেটেছে শ্রোতার হৃদয়ে। তার মৃত্যু নেই। গানের মাঝেই বেঁচে থাকবেন সুবীর নন্দী। ফকির আলমগীর বলেন, অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী এই শিল্পী ছিলেন সহজ-সরল মনের এক মানুষ। আর শিল্পী হিসেবে সে এতটাই সমৃদ্ধ যে বলা যায়, চলে গেছে দেহখানি রয়ে গেছে কণ্ঠস্বরটি। কথা শেষে শিল্পীকে উৎসর্গ করে গেয়ে শোনান ‘সুরে বেঁধেছো জীবন তোমার/ শিল্পী সুবীর নন্দী’। সুবীর নন্দীর ‘পাহাড়ের কান্না দেখে তোমরা তাকে ঝরনা বলো’ গানটি গেয়ে শোনান ডালিয়া নওশিন। শেখ জসিম পরিবেশন করেন ‘বন্ধু হতে চেয়ে তোমার শত্রু বলে গণ্য হলাম’। অন্তু খন্দকার গেয়ে শোনান ‘কত যে তোমাকে বেসেছি ভালো’। আবেদ খান বলেন, মানুষকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে, তার কর্মকে বিবেচনা করতে হবে। সে কাজটাই সুবীর নন্দী করেছেন। তার মতো আরেকজন শিল্পীকে পেতে হলে দীর্ঘকাল অপেক্ষা করতে হবে। রথীন্দ্রনাথ রায় বলেন, সুবীর নন্দী সহজেই যে কোন গানের ভেতর ঢুকে যেতে পারতেন। কণ্ঠ নয় তিনি আত্মার শক্তিতে গান গাইতেন। সুবীর নন্দী সেই কাজটি করেছেন। গানকে গান নয়, প্রার্থনা মনে করতেন । আকরামুল ইসলাম বলেন, সুবীর নন্দী সঙ্গীতকে সাধনা মনে করতেন । সুরের মাঝেই তিনি স্রষ্টার সান্নিধ্য পাওয়ার চেষ্টা করতেন। অনুপ ভট্টাচার্য বলেন, কেউ কেউ বলেন মান্না দে’র মতো গাইতে চেষ্টা করত সুবীর নন্দী। কিন্তু সুবীর নন্দীর কোন গান আমার কাছে এতটাই ভাল লাগত যে মনে হতো, মান্না দে গাইলেও হয়তো এত ভাল হতো না। নারায়ণ চন্দ্র শীল বলেন, বাংলাদেশ বেতারে সুবীর নন্দীর গানগুলোকে সংরক্ষণের বিষয়ে কিছু পরিকল্পনা হাতে নেয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে কারো কোন পরামর্শ থাকলে বেতার কর্তৃপক্ষকে জানাবেন। সামন্ত লাল সেন বলেন, সুবীর নন্দীর স্মৃতিকে ধরে রাখতে পারলে, তা থেকে নতুন প্রজন্ম শিখতে পারবে। স্বাগত বক্তব্যে বিশ্বজিৎ রায় জাদুঘর কিংবা শিল্পকলা একাডেমিতে সুবীর নন্দীর নামে একটি কর্নার চালুর জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রতি অনুরাধ জানান।
×