ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা দক্ষিণে দৃশ্যমান পরিবর্তন আনতে পেরেছি ॥ খোকন

প্রকাশিত: ১০:১০, ১৮ মে ২০১৯

 ঢাকা দক্ষিণে দৃশ্যমান  পরিবর্তন আনতে  পেরেছি ॥ খোকন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দায়িত্ব গ্রহণের পর গত চার বছরে ঢাকা দক্ষিণের দৃশ্যমান ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছেন বলে দাবি করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। নাগরিকদের অধিক সেবা প্রদান করতে রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরেশনের ন্যায় ঢাকার বিভিন্ন সেবাদানকারী সংস্থাগুলোকেও দুই ভাগ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মেয়র। একইসঙ্গে পুরান ঢাকাকে রিডেভেলপমেন্ট করে নতুন রুপে গড়তে চান বলে জানিয়েছেন মেয়র। শুক্রবার রাজধানীর একটি হোটেলে ডিএসসিসির ৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে মেয়র এসব কথা বলেন। পরে ডিএসসিসি দোয়া ও ইফতার মাহফিলের অয়োজন করে। এ সময় স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শেখ মোঃ আব্দুল্লাহ ওয়াসার এমডি প্রকৌশলী তাকসিন এ খান, কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, বিভিন্ন মিডিয়ার সাংবাদিকসহ ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বিভিন্ন ওয়ার্ড ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলরসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। মেয়র বলেন, আমরা কাউন্সিলর ও সকল শ্রেণীর নাগরিকদের সহায়তায় ঢাকাকে বাসযোগ্য স্মার্ট, আধুনিক ও মানবিক ঢাকায় রুপান্তর করতে চাই। গত চার বছরে ঢাকা দক্ষিণের উন্নয়নে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টার পাশপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্নভাবে উৎসাহ সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে সর্বাত্মক সহায়তা করেছেন। যার অবদান অনস্বীকার্য। আশা করি প্রধানমন্ত্রীর এ সহযোগিতা অব্যাহত থাকবেন যতদিন না আমরা আধুনিক ও উন্নত ঢাকা গড়তে সক্ষম না হই। মূলত আগামীর ঢাকা বিনির্মাণে বর্তমানের ন্যায় প্রধানমন্ত্রীর সাহায্য কামনা করছি। মেয়র বলেন, নাগরিকদের বিভিন্ন ধরনের নিরিবচ্ছিন্ন সেবা প্রদান করতে হলে সিটি কর্পোরেশনের মতোই সেবার পরিমাণ বাড়াতে দুই ভাগ করতে হবে। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত দীর্ঘ বছরে জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেবাদানকারী সংস্থার সেবা তুলনামূলকভাবে বাড়েনি। তাই সেবাদানকারী সংস্থাকেও উত্তর দক্ষিণে দুই ভাগে ভাগ করতে হবে। মেয়র বলেন, সিটি কর্পোরেশনকে দুই ভাগে ভাগ করার প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত ছিল খুবই সুদূরপ্রসারী। রাজধানী ঢাকার আকার দিন দিন বড় হচ্ছে। তাই যেভাবে সিটি কর্পোরেশনকে বিভক্ত করা হয়েছে, সেভাবে সেবাদানকারী অন্য সংস্থাগুলোকেও দুই ভাগে ভাগ করা উচিত। এতে নাগরিকদের কাক্সিক্ষত সেবা আরও দ্রুততম সময়ে তাদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া যাবে। সময় এসেছে এখন এটা নিয়ে আলোচনা করার। নাগরিক সেবা ও নগরের উন্নয়নে এখনও বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে থাকা সমন্বয়হীনতার বিষয়টি স্বীকার করে মেয়র বলেন, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতা এখনও অনেক বড় মাপের প্রতিবন্ধকতা। নগর ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে এই প্রতিবন্ধকতা দূর করতে পারলে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা যাবে। সাঈদ খোকন বলেন, বর্তমানে সেবা প্রদান করার জন্য মাত্র ৪০ ভাগ জনবল নিয়ে আমরা দৈনন্দিন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। যা অনেকটা দুসাধ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া রাজধানীতে ৫৬টি সেবাদানকারী সংস্থা কাজ করলেও তাদের মাঝে কোন প্রকার সমন্বয় নেই বলে জানান মেয়র। তাই নগর কর্তৃপক্ষ গঠন করা অতি জরুরী। এর মাধ্যমেই নাগরিকদের প্রয়োজনীয় সেবা দেয়া সম্ভব। সমন্বয় না থাকায় নাগরিকগণও সঠিক সময়ে সেবা পাচ্ছেন না। সুষ্ঠু সেবা প্রদান করতে সংস্থাগুলো আর্থিক প্রশাসনিক ও ক্ষমতা প্রদান করতে হবে। শুধুমাত্র সমন্বয় না থাকায় যে কোন প্রকার উন্নয়নমূলক কর্মকা- করলেও ব্যাপক সমস্যার সৃষ্টি হয়। মেয়র বলেন, আমি পুরান ঢাকাকে রিমডেলিং ও রিডেভেলেপিং করে নতুন করে গড়ে তুলতে চাই। এজন্য একটি পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। যা আগামীতে সবার সঙ্গে আলোচনা করেই বাস্তবায়ন করা হবে। সবার সহযোগিতা পেলে এর মাধ্যমে পুরান ঢাকার চেহারা পাল্টে দেয়া সম্ভব হবে। কি কি উন্নয়ন করা সম্ভব হয়েছে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, যে ঢাকা ছিল অন্ধাকারাচ্ছন্ন, ভাঙ্গা রাস্তার পার্ক ফোয়রা আর খেলার মাঠে নেশাখোরদের আড্ডা থাকত। সেই ঢাকায় এখন প্রতিটি গলিতে এলইডি বাতি জ্বলে, পাকগুলোর্কে বিশ্বমানের করে গড়ে তোলা হয়েছে ও হচ্ছে। খেলার মাঠে এখন খেলাই হয়, প্রায় ৯০ ভাগ রাস্তার উন্নয়ন করা হয়েছে। নাগরিকদের জীবনমান উন্নয়নে বিভিন্ন জনসম্পৃক্ত প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। একে এক দৃশ্যমান উন্নয়নে ঢাকা দক্ষিণের চেহারাই পাল্টে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। চার বছর আগের ঢাকা আর এখনকার ঢাকা ব্যাপক পার্থক্য চোখে পরে। আগামী এক বছরে আরও অনেক পরিবর্তন দেখতে পারবেন। কি কাজ করেছি তা জনগণের কাছে বিচারের ভার দিলাম। জলসবুজে ঢাকা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন শেষ হলে এ নগরী এক নতুন দৃষ্টিনন্দন লাভ করবে। এর আগে এক লিখিত বক্তব্যে নিজের চার বছরের দায়িত্বকালে নানা উন্নয়ন পদক্ষেপের বর্ণনা দিয়ে এই নগরপিতা বলেন, বিগত চার বছরে নগর ও নগরবাসীর উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে গেছি। শহরজুড়ে এলইডি বাতি স্থাপন, জলাবদ্ধতা নিরসন, সয়ক ও ফুটপাত সংস্কার, খেলার মাঠ-পার্ক উন্নয়ন, ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ভেজালবিরোধী অভিযানসহ বেশকিছু কাজ আমরা সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করেছি। তবে মেয়র হিসেবে আমার কাজের মূল্যায়ন নগরবাসী করবেন। তবে এতদিনে নগরে একটি দৃশ্যমান পরিবর্তন আনতে পেরেছি আমরা। আমি কতটুকু সফল বা ব্যর্থতা তারাই বলবেন। আমি শুধু এটুকু বলতে পারি যে কোথাও কোথাও অনেক সফলতা পেয়েছি আবার কোথাও কোথাও সাময়িকভাবে সফলতা আসেনি। তবে তার জন্য হাত গুটিয়ে বসে থাকিনি, থাকব না। সবাইকে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। নতুন যুক্ত হওয়া ৮টি উন্নয়নের জন্য ৭৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। শান্তিনগর ও নাজিম উদ্দীন রোডের ৪০-৫০ বছরে জলাবদ্ধতা দূর করতে সক্ষম হয়েছি। কোরবানির পশুর বর্জ্য ২৪ ঘণ্টায় দূর করতে সক্ষম হয়েছি। যাত্রী ছাউনি নির্মাণ করা, যানজট নিরসনে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণসহ, বাস রুট রেশনালাইজেশন করা, বৃত্তাকার বাস সার্ভিস চালু করা, পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যাল কারখানা স্থানান্তর করা, যাত্রী ছাউনি নির্মাণ করা, ডিজিটাল যাত্রী ছাউনি নির্মাণ, পাবলিক টয়লেট নির্মাণ, বিনামূল্যে দরিদ্র ও অসহায়দের দাফনের ব্যবস্থা করা, রাজস্ব কার্যক্রম অটোমেশন করা, মশক নিধনে বিশেষ ক্রাশ প্রোগ্রাম পরিচালনা করা, খাল দখল থেকে উদ্ধার, তথ্যপ্রযুক্তির সমন্বয় করে উন্নয়ন কর্মকা- পরিচালনা করা, আধুনিক জবাইখানা নির্মাণ করা, ইটেন্টারিং ও লোকেশন ট্রোকিং সিস্টেম চালু করা, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ডিজিটাল হাজিরা চালুসহ নাগরিক উন্নয়নে কাজ করতে নানা প্রযুক্তির ব্যবহার করছে ডিএসসিসি। এছাড়া বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা, আধুনিক কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ করা, অবৈধ ব্যানার ফেস্টুন অপসারণ করাসহ বৃদ্ধদের শেষ জীবনে অসহায় জীবন থেকে মুক্তি দিতে সদরঘাটে ৬ তলা বৃদ্ধাশ্রম নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়া নানা উন্নয়ন কর্মকান্ড চলমান রয়েছে। নাগরিক উন্নয়নে নেয়া সকল প্রকল্প বাস্তবায়ন করা গেলে ঢাকা দক্ষিণের চেহারাই পাল্টে যাবে।
×