ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নেই চোরাচালান রোধে কার্যকর ব্যবস্থা

বেনাপোল চেকপোস্টে সাধারণ যাত্রীরা সেবাবঞ্চিত

প্রকাশিত: ০৯:৪২, ১৮ মে ২০১৯

 বেনাপোল চেকপোস্টে সাধারণ যাত্রীরা সেবাবঞ্চিত

স্টাফ রিপোর্টার, বেনাপোল ॥ আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন কাস্টমস ও দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল। এপথে প্রতিদিন দেশী-বিদেশী পর্যটকসহ বিপুলসংখ্যক যাত্রী যাতায়াত করে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে। এই চেকপোস্ট কাস্টমস ইমিগ্রেশনে আধুনিকতার ছোঁয়া না লাগায় নানা সমস্যায় জর্জরিত পাসপোর্টধারী যাত্রীরা। যাত্রীদের অভিযোগ, সরকারকে নির্ধারিত ফি দিয়েও কাক্সিক্ষত সেবা মিলছে না। সর্ববৃহৎ স্থলবন্দরের এমন অব্যবস্থাপনায় তারা হতাশ। বেনাপোল এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ আন্তর্জাতিক স্থলবন্দর। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য, চিকিৎসা, ভ্রমণ ও কূটনৈতিক কাজে পাসপোর্টধারী যাত্রীরা এ পথেই বেশি যাতায়াত করেন। সরকারের হিসাব মতে, প্রতিদিন পাঁচ থেকে আট হাজার যাত্রী এই পথে ভারতে আসা-যাওয়া করেন। যাত্রীপ্রতি সরকার ৫শ’ টাকা ভ্রমণ কর আদায় করে। ফলে প্রতিবছর এখান থেকে সরকারের আয় হয় ১শ’ কোটি টাকা। এছাড়া যাত্রীদের যাতায়াত সুবিধার জন্য যাত্রী টার্মিনালেই বাসের টিকেট কাউন্টার, ক্যান্টিন, বিশ্রামাগার, হুইল চেয়ার, টয়লেট ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ বাবদ আরও ৪৫ টাকা হারে কর আদায় করা হয়। কিন্তু গত তিন বছরে টয়লেট ছাড়া অন্য কোন সেবা দিতে দেখা যায়নি। প্রতিবছর এ খাত থেকে সরকার রাজস্ব পায় প্রায় সাত কোটি টাকা। গত কয়েকদিনে বেনাপোল চেকপোস্ট, ইমিগ্রেশন, কাস্টমস ও যাত্রী টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, দিনের বেশিরভাগ সময় যাত্রীদের দীর্ঘ লাইন। পাঁচ শতাধিক যাত্রী লাইনে দাঁড়িয়ে থাকলেও নেই বসার পর্যাপ্ত আসন। সেখানে মাত্র ১শ’টি আসনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ফলে যাত্রীদের রোদ, বৃষ্টিতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এদিকে, যাত্রী টার্মিনালে পরিবহনের সাইনবোর্ডের দেখা মিললেও কাউকে টিকেট বিক্রি করতে দেখা যায়নি। চোরাচালান প্রতিরোধে সেখানে স্ক্যানিং মেশিন থাকলেও প্রায়ই সেটি অচল থাকে। আরও জানা গেছে, যাত্রীর ছদ্মবেশে এই চেকপোস্ট দিয়েই শুল্ক ফাঁকি দিয়ে পণ্য আনা-নেয়া করা হচ্ছে। ইমিগ্রেশনের জনবল সঙ্কটে যাত্রীদের দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করতে হয়। অসুস্থ ও প্রতিবন্ধী যাত্রীরা হুইল চেয়ার ও ট্রলি না পেয়ে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। ভারত থেকে বাংলাদেশে আসা যাত্রী অজিৎ রায় বলেন, কাস্টমসে সাইনবোর্ডে লেখা আছে হুইল চেয়ার ব্যবহার করুন। কিন্তু কোথায় হুইল চেয়ার? ট্রলিও খুঁজে পেলাম না। এ শরীর নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে কষ্ট হয়। এমন অব্যবস্থাপনায় আমরা খুবই হতাশ। যাত্রী আনোয়ার হোসেন বলেন, ভারত থেকে ফেরার সময় পরিবারের জন্য সামান্য কেনাকাটা করেছি। কিন্তু এগুলো দেশে আনতে বিভিন্ন জায়গায় ঘুষ দিতে হয়েছে। এছাড়া কাস্টমসে স্ক্যানিং মেশিনে ব্যাগ চেক করার পরও বন্দর ও আমড়াখালীতে বিজিবি সদস্যরা ব্যাগ তল্লাশি করছে। সাধারণ যাত্রীদের জন্য এটা হয়রানি ও যন্ত্রণার। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান লিটু বলেন, আমি ভারতে চিকিৎসা শেষে বাড়িতে ফিরছিলাম। সঙ্গে তেমন কিছু ছিল না। তারপরও কাস্টমস সদস্যরা জানান টাকা না দিলে ব্যাগ ছাড়া হবে না। পরে পরিচয় দিয়ে রক্ষা পাই। বেনাপোল বন্দর পরিচালক (ট্রাফিক) প্রদোষ কান্তি দাস বলেন, বেনাপোল যাত্রী টার্মিনালে প্রয়াজনীয় উন্নয়ন কাজ শুরু হয়েছে। আপাতত ভবনে জায়গা সঙ্কটে যাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত আসনের ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না। পরিবহন কাউন্টারগুলোও একই কারণে এখানে বসতে পারছে না। টার্মিনালের পাশে আরও জায়গা অধিগ্রহণের কাজ চলছে।
×