ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তাপমাত্রার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রোগী

রাজধানীতে ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ

প্রকাশিত: ০৯:৪০, ১৮ মে ২০১৯

 রাজধানীতে ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রাজধানীতে নতুন ভাগে আক্রান্ত ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। স্বাভাবিক অবস্থার দ্বিগুণ নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছে আইসিডিডিআরবিতে। শুক্রবার এখানে গড়ে ঘণ্টায় প্রায় ২৫ নতুন রোগী ভর্তি হয়। রাজধানীতে ডায়রিয়া প্রাদুর্ভাবের স্বাক্ষ্য দিচ্ছে আইসিডিডিআরবির এমন চিত্র। নগরীর শিশু হাসপাতালসহ অন্য সব হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতেও বেড়ে গেছে নতুন ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা। আইসিডিডিআরবি কর্তৃপক্ষ জানায়, তাপমাত্রার সঙ্গে ডায়রিয়া জীবাণুর যোগসূত্র রয়েছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে ডায়রিয়ার জীবাণু যেন উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। গত এক মাস ধরে নগরীতে তাপমাত্রা ৩৪ থেকে ৩৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে থাকছে। তাপমাত্রার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নতুন করে আক্রান্ত ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। নগরীতে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। চলতি মাসে তাপমাত্রা বাড়লে ডায়রিয়া পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটতে পারে। ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব মে থেকে শুরু হয়ে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত থাকে। কিন্তু এবার তাপমাত্রার কারণে গত এপ্রিল মাস থেকেই শুরু হয়। গত কয়েকদিন ধরে প্রতিদিন নতুন ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা ৬শ’ জনের নিচে নামেনি। শুক্রবার নতুন রোগী বৃদ্ধির সংখ্যা অব্যাহত থাকে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, গরম না কমলে নতুন রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকবে। সরেজমিন দেখা গেছে, চিকিৎসক, নার্স ও স্বেচ্ছাসেবকদের কাটছে ব্যস্ত সময়। মূল গেট পার হলেই জরুরী বিভাগের সামনে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৮টি ট্রলি ও হুইল চেয়ার। রোগী আসা মাত্রই ট্রলিতে করে ভেতরে নিয়ে যাচ্ছেন আনোয়ার হোসেন। তিনি জনকণ্ঠকে জানান, কয়েকদিন ধরে সকলের ব্যস্ততা বেড়ে গেছে। আসা মাত্রই রোগী ভেতরে নিয়ে যাচ্ছি আমরা। দেরি না করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন নার্স ও চিকিৎসকরা। আগত রোগীদের অধিকাংশই শিশু বলে তিনি জানান। ওয়ার্ডের ভেতরে প্রবেশ করে দেখা গেছে, খালি বেড নেই। রোগী ভর্তি প্রতিটি ওয়ার্ড। নতুন ভর্তি ও বিদায়ী রোগীর মধ্যে সামঞ্জস্য রাখার চেষ্টা করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু অনেক সময় নতুন ভর্তি তুলনায় বিদায়ী রোগীর সংখ্যা কমে যায়। আইসিডিডিআরবির চিকিৎসক, নার্স ও স্বেচ্ছাসেবকদের সর্বদা ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। নতুন রোগী আসা মাত্রই ওয়ার্ডের ভেতরে নিয়ে যাচ্ছেন নার্স ও স্বেচ্ছাসেবকরা। নগরীর কুড়িল এলাকার ৩৫/সি হোল্ডিংয়ের বাসিন্দা ৫ বছরের শিশু নাজিম। শিশুটির সঙ্গে আছেন মা জামিলা বেগম। বুধবার দুপুরে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় নাজিমকে। মা জামিলা বেগম জনকণ্ঠকে জানান, বাসায় খাবার স্যালাইন দেয়ার পরও বাচ্চার কোন উন্নতি হয়নি। বিরামহীনভাবে চলতে থাকে পাতলা পায়খানা। খুবই দুর্বল হয়ে পড়ে সে। অবশেষে শিশুটিকে নিয়ে আসা হয় হাসপাতালে। তার অবস্থা এখন বেশ উন্নতি হয়েছে। তিনি আরও জানান, এলাকায় ওয়াসার পানি নিয়মিত পাওয়া যায় না। দূষিত পানি খাওয়াতেই আমার বাচ্চা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে জামিলা বেগম মনে করেন। আইসিডিডিআরবির বৈজ্ঞানিক ডাঃ আজহারুল ইসলাম খান জনকণ্ঠকে জানান, স্বাভাবিক অবস্থার তুলনায় একটু বেশি নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছে। তবে সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিত করা না গেলে এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে নতুন রোগীর সংখ্যাও বাড়তে থাকবে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যের প্রতি সচেতন থাকার জন্য তিনি বিশেষভাবে পরামর্শ দিয়েছেন।
×