ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘মাল্টি ক্লায়েন্ট সার্ভে’ কাজ পাচ্ছে টিজিএস স্লামবার্জার জেভি

প্রকাশিত: ০৯:৩৯, ১৮ মে ২০১৯

 ‘মাল্টি ক্লায়েন্ট সার্ভে’ কাজ পাচ্ছে টিজিএস স্লামবার্জার জেভি

রশিদ মামুন ॥ টানা তিন বছরের বেশি সময় নানা নাটকীয়তার পর অবশেষে সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে মাল্টি ক্লায়েন্ট সার্ভে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ওই সময় প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রে কাজ পাওয়া আন্তর্জাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানি টিজিএস-স্লামবার্জার জেভি কে চুক্তি সই করতে সম্প্রতি পেট্রোবাংলা থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে। পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, গত ৭ মে পেট্রোবাংলা টিজিএস-স্লামবার্জারকে চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে স্লামবার্জারকে এ্যাওয়ার্ড নোটিস দেয়ার পাশাপাশি তাদের প্রতিনিধিকে চুক্তির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। স্লামবার্জার চাইলে এখন সুবিধাজনক কোন সময়ে পেট্রোবাংলার সঙ্গে চুক্তি সই করবে। দেশের জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন থেকেই সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে আসছিল। সেক্ষেত্রে তৃতীয় কোন পক্ষকে দিয়ে জরিপ করে সাগরে সম্পদ সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেয়ার ওপর জোর দিয়ে আসছিল তারা। সরকার এর আগে উদ্যোগ নিলেও বিশেষ কোন পছন্দর কোম্পানিকে কাজ দিতে না পারায় প্রভাবশালী একটি মহল মাল্টি ক্লায়েন্ট সার্ভের চুক্তি তিন বছরের বেশি সময় ঠেকিয়ে রেখেছিল। ২০১২ সালের ১৪ মার্চ মিয়ানমারের কাছ থেকে এক লাখ ১১ হাজার ৬৩১ বর্গকিলোমিটার এবং ২০১৪ সালের ৮ জুলাই ভারতের কাছ থেকে বাংলাদেশ পায় ১৯ হাজার ৪৬৭ বর্গকিলোমিটার। সব মিলিয়ে এক লাখ ৩১ হাজার ৯৮ কিলোমিটারের বিশাল সমুদ্র এলাকায় তেল গ্যাস অসুন্ধান করার সুযোগ সৃষ্টি হয়। যা বাংলাদেশের মোট ভূখ-ের কাছাকাছি। জ¦ালানি বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে মাল্টিক্লায়েন্ট সার্ভের জন্য দুই দফা দরপত্র আহ্বান করা হয়। কিন্তু দুবারই অনুসন্ধান কোম্পানি স্লামবার্জার সর্বনিম্ন দরদাতা হয়। কিন্ত সেখানে বিশেষ কারো পছন্দের কোম্পানি সর্বনিম্ন দরদাতা না হওয়াতে স্লামবার্জারকে কাজ না দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়। সবশেষ আইনমন্ত্রীকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করে দেয়া হয়। ওই কমিটিও স্লামবার্জারকে কাজ দেয়ার সুপারিশ করে। কিন্তু জ্বালানি বিভাগের একজন সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তার নির্দেশে আইনমন্ত্রীর ওই রিপোর্ট আর আলোর মুখ দেখেনি। অভিযোগ রয়েছে, সাবেক ওই কর্মকর্তা নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন সরকারের উচ্চ পর্যায়ের করা এই প্রতিবেদনটি। ওই কর্মকর্তার অবসরে যাওয়ার পর আবার মাল্টিক্লায়েন্ট সার্ভের কাজ দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। এখন ভারতীয় কোম্পানি অয়েল এ্যান্ড ন্যাচারাল গ্যাস কর্পোরেশন (ওএনজিসি) অগভীর সমুদ্রে ৪ এবং ৯ ব্লকে এবং কোরিয়ান কোম্পানি পোসকো দাইয়ু গভীর সাগরের ১২ নম্বর ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ করছে। আর বাকি ২৩ ব্লক পড়ে রয়েছে। বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় মোট ২৬টি ব্লক রয়েছে। এরমধ্যে ১১টি অগভীর আর ১৫টি গভীর সমুদ্রে রয়েছে। জ¦ালানি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, আমাদের সাগরে কি পরিমাণ তেল-গ্যাস রয়েছে তার সঠিক কোন ধারণা নেই কারো কাছে। প্রাথমিক একটি ধারণা পাওয়া গেলেও আন্তর্জাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানিগুলো তার ভিত্তিতে আগ্রহ দেখাতে পারতা। কিন্তু আমাদের এখানের কোন্ ব্লকে কি আছে না আছে তা কেউ জানে না। ফলে বার বার দরপত্র আহ্বান করা হলেও আগ্রহী বড় কোন কোম্পানিকে পাওয়া যাচ্ছে না। কাজ পাওয়া নরওয়ে এবং ফ্রান্সের যৌথ কোম্পানি টিজিএস-স্লামবার্জারের কর্মকর্তারা শীঘ্রই ঢাকা আসছেন। শীতের আগেই চুক্তি করে অন্যসব কাজ শেষ করা হলেও এই মৌসুমেই জরিপ করা সম্ভব।
×