ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মিমিন ও বিড়ালছানা

প্রকাশিত: ০৯:০৩, ১৮ মে ২০১৯

  মিমিন ও বিড়ালছানা

জ্যোৎস্নালিপি ॥ ছোট্ট মিমিন এত দুরন্ত, চোখের পলকে আড়াল হয়ে যায়। বাড়িময় সে যখন ছুটে বেড়ায়। মা কান পেতে সেই নূপুরপরা আদরমাখা পায়ের শব্দ শোনে। শব্দ মিলিয়ে গেলে মায়ের ভীত চোখ এদিকে-ওদিকে খুঁজে বেড়ায় তার ছানাটিকে। ছানাটি কখনও কখনও গুটি গুটি পায়ে মায়ের পেছনে এসে দাঁড়ায়। মা বুঝতে পেরে জড়িয়ে ধরে তাকে আদর করে। ছানাটিও মায়ের গালে, নাকে ঠোঁট ঘষে। রাতে মাকে জড়িয়ে সে যখন ঘুমায়, তার শ্বাস গাঢ় হয়। মা টের পেয়ে আরও গভীর করে বুকে জড়িয়ে ধরে। মা একটু চোখের আড়াল হলে মা মা বলে কান্না জুড়ে দেয়। সে যদি বলে, মা মা; মাকে বলতে হবে কী কী? মিমিনের বয়স এখন চার। বাসার গলিতেই মিমিনের স্কুল। মাকে প্রতিদিনই মিমিনের ঘুমের মধ্যেই স্কুল ড্রেস পরিয়ে অনেক চেষ্টা করে স্কুলে নিয়ে যেতে হয়। এইটুকু শিশুকে সকাল সকাল ঘুম থেকে তুলে স্কুলে দিতে খুব কষ্ট হয় মায়ের। এ ক’দিন তো মিমিন একেবারেই স্কুলে যেতে চায় না। কারণ মিমিনদের ঘরের খাটের নিচটায় জন্মেছে চারটি বিড়ালছানা। সে দিনের বেশিরভাগ সময় বিড়ালছানাগুলোর আশপাশে ঘুরঘুর করে। মা বিড়ালটা থাকলে অবশ্য কাছে যেতে সাহস করে না। যদি কামড়ে দেয়। মা চারটা বিড়ালছানা নাম দিয়েছে- অ আ ই ঈ। বিড়ালছানাগুলো চুকচুক করে দুধ খায় আর মিউ মিউ করে। মিমিন বলে, অ আমার কছে এসো? তুমি আমার সঙ্গে স্কুলে গেলে তোমায় আমি চকোলেট দেব। অ বলে, মিউ মিউ। মা বলে, মিমিনসোনা অ বলছে চকোলেট খেলে দাঁতে পোকা হয়। তোমার সুন্দর সাদা সাদা দাঁত ময়লা হয়ে যাবে। অ তো তোমার বন্ধু ওকে তুমি চকোলেট দিয়ে দাও। মিমিন স্কুল ব্যাগ থেকে দু’হাতের মুঠোভরে চকোলেট বিড়ালছানাগুলোর সামনে রাখতেই ওরা কাছে ঘেঁষে আরও বেশি বেশি মিউ মিউ করে। মিমিন জানতে চায়- এবার ওরা কি বলছে, মা বলে, ওরা বলছে মিমিন চিপস খেয়ো না। ভাল বাচ্চারা চিপস খায় না। চিপস খেলে পেট ব্যথা করে। আর খাব না। শুধু আজ। আবার বিড়ালছানা দুটো মিউ মিউ করে। আচ্ছা আর খাব না। এবার ওরা চারজনেই একসঙ্গে ডাকতে থাকে- মিমিন বলে, আচ্ছা ঠিক আছে কোকও খাব না। ললিপপ খাব না, কিচ্ছু খাব না। ওরাও চুপ করে যায়। এর মধ্যে বিড়াল মা চলে আসে। মা আসার সঙ্গে সঙ্গে ছানাগুলো তার পিছু পিছু যেতে থাকে। মা বিড়ালটা মিমিনের মায়ের পাশে ঘুর ঘুর করলে মা ওদের একটা বাটিতে দুধ খেতে দেয়। বিড়ালছানাগুলো ক’দিনেই সুন্দর নাদুসনুদুস হয়েছে। মিমিন সুযোগ পেলেই ওদের ধরে আদর করে। ওদের সঙ্গে লুকোচুরি খেলে। মা বিড়ালটাও এখন মিমিনকে দেখে ভয়ে থাকে না। বরং নিরাপদ বোধ করে। একদিন কী হয়েছে- মিমিন স্কুল ড্রেস পরে বিড়ালছানাগুলোর কাছে গিয়ে বসে আছে। সেগুলো সে স্কুলব্যাগে করে স্কুলে নিয়ে যাবে। মা বলে, বিড়াল ছানাগুলো তো খুব ছোট স্কুলে যেতে পারে না। সে বলে পারে। বিড়ালছানা আমার সঙ্গে স্কুলে যাবে- এই বলে অ্যাঁ অ্যাঁ... করে কান্নাজুড়ে দেয়। বিড়ালছানাগুলো মিউ মিউ করে মিমিনের চারপাশ ঘুর ঘুর করে। ফিডার দিয়ে মা ওদেরকে দুধও খাইয়ে দেয়। মিমিন নিজেও ফিডার ধরে খুব মজা পেয়েছে। এখন ওরা টেবিলের নিচে ঢুকে বসে আছে। মিমিন টেবিলের নিচ থেকে বিড়ালছানাগুলোকে বের করে আনতে চায়। বিড়ালছানাগুলো মিউ মিউ করে। সে বলে, ঈ আমার কাছে এসো আমি তোমাকে আদর করব। ছানা তাড়াতাড়ি পালিয়ে যেতে চাইলে মিমিন ওদের লেজ ধরে টানাটানি করে। বলে, মা সবাইকে আমার ব্যাগে ভরে দাও। ওরাও আমার সঙ্গে স্কুলে যাবে। মা বলে ছানাগুলোকে স্কুলে নিয়ে গেলে ওদের মা তো কান্না করবে। মন খারাপ করবে। মিমিন বলে, আমি স্কুলে গেলেও কী তুমি মন খারাপ কর? না করি না তো, স্কুলে যাওয়া তো ভাল। মিমিন বলে তাহলে ওরাও আমার সঙ্গে স্কুলে যাবে। মিমিন তোমাকে বিড়াল মা কামড়ে দেবে, কিন্তু ওর ছানাকে স্কুলে নিয়ে গেলে। মা বিড়াল মিমিনের মায়ের পোশাক ধরে টানাটানি করে ডাকতে থাকে। সে মা বিড়ালের পিছু পিছু এসে অবাক হয় জেনে আ নামের বিড়ালছানাটিকে পাশের বাড়ির একজন নিয়ে গিয়েছে। মা বিড়ালটা সেটা বুঝতে পেরে তাকে টেনে এনেছে এখানে। মা বিড়ালটির চোখ ভিজে যায়। পাশের বাড়িতে বিড়ালছানাটি পালবে বলে নিয়ে গিয়েছে। ছানার শোকে বিড়াল মা খাওয়া ছেড়ে দেয় আর বাড়িময় মিউ মিউ করে ডেকে বেড়ায়। আ কে না দেখতে পেয়ে মিমিনেরও খুব মন খারাপ হয়। মিমিনের মা অনেক চেষ্টা করে বিড়াল ছানাটিকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেয়। বিড়াল মা ছানাটিকে পেয়ে মুখ দিয়ে ছানাটির সারা শারীরে আদরে ভরিয়ে তোলে। ছানাটিও মাকে পেয়ে মিয়াও মিয়াও করে তার মন খারাপের খবর জানায়। মিমিনও মায়ের কাছে আদর নেয়। মা বলে, দেখেছো মিমিন ছানাটিকে দেখতে না পেয়ে বিড়াল মায়ের কত কষ্ট হয়েছে। তোমাকে না দেখতে পেলেও আমার এমন কষ্ট হয়। তাই মাকে না বলে কোথাও যাবে না। মিমিন মাথা নাড়ে। বিড়াল মা ছানাগুলোকে সঙ্গে নিয়ে মিমিনের সঙ্গে লুকোচুরি খেলে। অলঙ্করণ : প্রসূন হালদার
×