ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

টেকসই উন্নয়নে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন ॥ মেয়রের হস্তক্ষেপে আধুনিকতার ছোঁয়া

প্রকাশিত: ০৮:৪৮, ১৮ মে ২০১৯

  টেকসই উন্নয়নে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন ॥ মেয়রের হস্তক্ষেপে আধুনিকতার  ছোঁয়া

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ টেকসই উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে একসময়ের প্রাচ্যের ভেনিসখ্যাত বরিশাল মহানগরী। সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর কঠোর হস্তক্ষেপে সিটি কর্পোরেশন থেকে শুরু করে নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের সর্বত্র আধুনিকতার ছোঁয়া পৌঁছতে শুরু করেছে। সূত্র মতে, সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমেই বিসিসিকে শতভাগ দুর্নীতিমুক্ত করার জন্য গভীর তদন্তের মাধ্যমে অতীতের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছেন। পরবর্তীতে সিটি কর্পোরেশনে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ শ্রমিকদের উপস্থিতি শতভাগ নিশ্চিত করতে বায়োমেট্রিক সেন্সর সিস্টেম মেশিন স্থাপন করেছেন। পরবর্তীতে নগরীর বিভিন্ন বাসা-বাড়ির কর ফাঁকি ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর ট্রেড লাইসেন্সবিহীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে শতভাগ সফলতা হয়েছেন। বর্তমানে তিনি (মেয়র) নগরবাসীর নানা সমস্যা সমাধানে টেকসই উন্নয়নে কাজ শুরু করেছেন। ফলশ্রুতিতে দীর্ঘদিনের খানাখন্দে ভরা নগরীর জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে চলছে সংস্কার কাজ। এ কাজের প্রায় সব করা হচ্ছে অত্যাধুনিক মেশিনের সাহায্যে। এছাড়া পাথরসহ মানসম্পন্ন সামগ্রী ব্যবহার নিশ্চিত করা হচ্ছে। সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর করা নিয়ম অনুযায়ী সংস্কার কাজের টেন্ডারে যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ পেয়ে থাকে তাদের পাঁচ বছরের শর্ত দিয়ে থাকেন বিসিসি’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এই সময়ের মধ্যে সড়কে কোন ক্ষয়ক্ষতি হলে তার দায়-দায়িত্ব ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নিতে হবে। মেয়রের শর্ত অনুযায়ী-মানসম্মত টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে সংস্কার কাজে ব্যবহার করা সামগ্রী হতে হচ্ছে উচ্চমানের। যেমন সংস্কার কাজে ইট নয় পাথর ব্যবহার করতে হবে। মানসম্পন্ন বিটুমিনসহ অন্যান্য সামগ্রী ব্যবহার, কাজের সময় সড়কের তাপমাত্রাকে গুরুত্ব দেয়া, সংস্কার কাজে বেভার মেশিন, এসপল্ট মিক্সি প্লাট, তিন ধরনের রোলারসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার বাধ্যতামূলক। সংস্কার কাজে ব্যবহৃত সামগ্রীর মান যাচাইয়ের কাজ করে থাকেন বিসিসি’র প্রকৌশলীরা। আর গুণগত মানসম্পন্ন কাজ নিশ্চিত করার জন্য সম্পূর্ণ কাজটি সরাসরি তদারকি করেন মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। ফলে দুর্নীতি করার আর কোন সুযোগ নেই। এর সুফলও ইতোমধ্যে পেতে শুরু করেছেন নগরবাসী। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তারুণ্যের প্রতীক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের (বিসিসি) মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর নগরীর কিছু সড়ক জরুরী ভিত্তিতে টেকসই সংস্কার করা হয়। আর এ কাজে আনা হয়েছে আমূল পরিবর্তন। বিসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ হুমায়ুন কবির বলেন, বর্তমান মেয়র দায়িত্ব গ্রহণের পর নগরীর আমতলার বিজয় বিহঙ্গ থেকে শুরু হয়ে জিলা স্কুলের মোড় হয়ে সদর রোড, স্ব-রোড, পশালপুর ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটারের জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক সংস্কার কাজ সদ্য শেষ হয়েছে। সর্বশেষ নগরীর জেল খানার মোড় থেকে হাসপাাতাল রোড হয়ে বিএম কলেজ রোড থেকে নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল পর্যন্ত সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। আড়াই কিলোমিটারের এই সড়ক আগামী সাতদিনের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। বরিশাল মেট্রোপলিটন প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ জনকণ্ঠকে বলেন, শুধু লোক দেখানো উন্নয়ন নয়, নগরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল টেকসই উন্নয়ন। কারণ টেকসই উন্নয়ন না হলে শুধু অর্থের অপচয়ই হয় না, এতে ভোগান্তিও ডেকে আনে। মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর কাজ দেখে মনে হচ্ছে বরিশাল নগরীকে টেকসই উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তার কাজে ইতোমধ্যে নগরবাসীর মধ্যে ব্যাপক প্রশংসার সৃষ্টি হয়েছে। সড়কের পাশাপাশি নগরীর থেকে জলাবদ্ধতা দূরীকরণেও তিনি (মেয়র) উদ্যোগ নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে নগরীর জলাবদ্ধতার কারণ হিসেবে ড্রেনে পলি জমে ভড়াট হয়ে যাওয়ার বিষয়টি তিনি নিজে স্ব-শরীরে খুঁজে বের করে এমনকি মেয়র নিজেই ড্রেনের মধ্যে নেমে কাজের পরীক্ষা করে তা অপসারণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। ফলে জলাবদ্ধতা কমে এসেছে। তিনি আরও বলেন, এককথায় নগরীতে টেকসই উন্নয়ন মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর হাত ধরেই চলমান রয়েছে। আধুনিক হচ্ছে ময়লা খোলা ॥ মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর উদ্যোগে এই প্রথমবারের মতো নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নির্মিত হবে আধুনিক মানের পরিবেশবান্ধব সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্লান্ট। এরই মধ্যে মেয়রসহ সংশ্লিষ্টরা সদর উপজেলার চরবাড়িয়া এলাকায় প্লান্টটি নির্মাণের জন্য আট একর জমি নির্ধারণ করে পরিদর্শন করেছেন। খুব শীঘ্রই প্লান্টের কাজ শুরু করা হবে। নগরী থেকে সকল ময়লা পরিষ্কার করে সেগুলোকে প্লান্টের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে আধুনিক মেশিন দ্বারা রিসাইকেল করে সার, বিদ্যুত ও তৈল তৈরি করা হবে। সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় ও আধুনিক মেশিন দ্বারা বর্জ্য রিসাইকেল করায় এতে পরিবেশের কোন ধরনের ক্ষতি হবে না। পাশপাশি অনেক বেকার লোকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশবিদরা। ফিরে আসবে নগরীর সৌন্দর্য ॥ সিটি মেয়র নগরীর সৌন্দর্য বিনষ্ট করে যত্রতত্রভাবে অপরিকল্পিত টেলিফোন, ডিস, ইন্টারনেট ও বিদ্যুতের তার ঝুলানো স্ব-চোখে পরিদর্শন করেন। সিটি মেয়র বলেন, ক্যাবল ব্যবসায়ীরা বিশেষ করে ইন্টারনেট, ডিস ও টেলিফোন ব্যবসায়ীরা এলোমেলোভাবে তাদের কোম্পানির ক্যাবল সংযোগ দেয়ায় বিভিন্ন সময় দুর্র্ঘটনা ঘটছে। পাশাপাশি নগরীর সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। তাই নগরীর সৌন্দর্য রক্ষায় ও জনস্বার্থে সকল ব্যবসায়ীদের ক্যাবলগুলো নিজ দায়িত্বে পরিকল্পিতভাবে গুছিয়ে সংযোগ দেয়ার জন্য প্রাথমিকভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নির্দেশ অমান্যকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে পরবর্তীতে বিসিসি কর্তৃপক্ষ কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সিটি মেয়র নগরীর আমানতগঞ্জ এলাকার শহীদ সুকান্ত বাবু শিশু পার্ক ও বঙ্গবন্ধু উদ্যান সংলগ্ন গ্রীন সিটি পার্ক পরিদর্শন করে ঈদের আগে শিশু বিনোদনের অন্যতম এ পার্ক দুটি চালু করার নির্দেশনা প্রদান করেছেন। বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ ॥ পবিত্র রমজান মাসে ভ্রাম্যমাণ গাড়ির মাধ্যমে সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন ১৫ হাজার লিটারের ওপরে বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। নগরীর বিভিন্ন এলাকা বিশেষ করে কলোনিগুলোতে রমজানের শুরুর দিকে বিশুদ্ধ খাবার পানির সঙ্কট দেখা দেয়ার পর সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর নির্দেশে এ কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। এ কাজে কর্পোরেশনের পানি বহনকারী গাড়ি (ভাউজার) একটি, সাতটি ট্রাক, ১৪টি পানির বড় ট্যাঙ্কি ও একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা বা ট্রলার ব্যবহার করা হচ্ছে। মেয়র নিজ হাতে পানির মান পরীক্ষার পর এ পানি নগরবাসীর মধ্যে সরবরাহ করা হয়। লাইটের সঙ্গে ফেস ডিটেক্টর ক্যামেরা ॥ খরচ বাচাতে নগরীর বৈদ্যুতিক পোস্টের সঙ্গে আধুনিক এলইডি লাইট (বাতি) সংযোজন করা হচ্ছে। পাশাপাশি এরসঙ্গে পোস্টেই থাকছে ফেস ডিটেক্টর উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সিসি ক্যামেরা ও সাউন্ড সিস্টেম। এরইমধ্যে বিষয়টি নিয়ে চায়না সাউদার্ন পাওয়ার গ্রিড এনার্জি ইফিসিএন্সি এ্যান্ড ক্লিন এনার্জি কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে সিটি মেয়রের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। খুব দ্রুত কোম্পানিটির সঙ্গে ১০ বছরের চুক্তি স্বাক্ষর করবে বিসিসি। সূত্র মতে, সকল ডিভাইজগুলো নিয়ন্ত্রিত হবে সফটওয়ারের মাধ্যমে। খুদে বার্তার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে যে কোন ধরনের যান্ত্রিক ত্রুটি আগাম জানিয়ে দিবে এ সফটওয়্যার। প্রতিটি লাইটের সঙ্গে সিসি ক্যামেরা ও মাইক থাকায় নগরবাসীকে যে কোন মেসেজ জানানো যাবে অতিদ্রুত। বেওয়ারিশ কুকুরের আশ্রয়স্থল ॥ নগরীর রাস্তার বেওয়ারিশ কুকুরের জন্য একটি আশ্রয়স্থল বা পুনর্বাসন কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা করেছে সিটি কর্পোরেশন। যা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এরইমধ্যে সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনা করে সম্ভাব্য একটি জায়গা নির্ধারণ করে তা পরিদর্শনও করেছেন। আগামী তিন মাসের মধ্যে নগরীর ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের নদী তীরের নির্বাচিত তিন একর সম্পত্তিতে কুকুর পুনর্বাসন কেন্দ্রের কাজ শুরু করা হবে। ভোটের মাধ্যমে প্যানেল মেয়র নির্বাচন ॥ এবারই সর্বপ্রথম ভোটের মাধ্যমে সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ১৬ মে। পরিষদের স্বচ্ছতা বজায় রাখতে এ ভোটের ব্যবস্থা করেছেন মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। এর আগের পরিষদে মেয়র তার পছন্দ অনুযায়ী প্যানেল মেয়র নির্বাচিত করতেন। এ বিষয়ে সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ জনকণ্ঠকে বলেন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে আমি নগরীর টেকসই উন্নয়ন করতে চাই। এর মধ্যদিয়ে সম্পদের অপচয়রোধ করা সম্ভব। নগরীর চলমান উন্নয়নের কাজ নিয়ে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আমার চিন্তা কিছু টাকা বেশি গেলেও একবারে টেকসই কাজ করা। নগরবাসীর কাছ থেকেই শুনেছি, এ ধরনের কাজ আগে কখনই হয়নি। একাধিকবার অর্থ ব্যয় না করে একবারে টেকসই উন্নয়ন হওয়ার পর যে টাকা থাকবে, তা বর্ধিত এলাকার উন্নয়নে ব্যয় করা হবে।
×