ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যে কোন সময় ভাঙ্গা হচ্ছে ডমিনো ফ্লেমিনকো কনভেনশন সেন্টার

প্রকাশিত: ০৮:৪৭, ১৮ মে ২০১৯

যে কোন সময় ভাঙ্গা হচ্ছে ডমিনো ফ্লেমিনকো কনভেনশন সেন্টার

মশিউর রহমান খান ॥ যে কোন সময় ভাঙ্গা হচ্ছে রাজধানীর ফার্মগেটের অনন্য স্থাপত্য শৈলীর স্থাপনা ডমিনো ফ্লেমিনকো কনভেনশন সেন্টার। নির্মাণের দীর্ঘ বছর পর অনুমতি না নিয়ে নক্সা বহির্ভূতভাবে স্থাপনা নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এর কাছে তা প্রমাণিত হওয়ায় যে কোন সময় ভাঙ্গার কাজ শুরু করবে সংস্থাটি। বর্তমানে কিছুটা আইনগত জটিলতা থাকায় ভবনটিকে সিলগালা করে রেখেছে রাজউক কর্তৃপক্ষ। ইমারত বিধিমালা না মানা ও নক্সা বহির্ভূতভাবে এই স্থাপনাটি নির্মাণ করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গবর্ন্যান্স ইনোভেশন ইউনিটে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিশেষ সভার সিদ্ধান্তক্রমে রাজউক ভবনটি ভাঙ্গার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। গবর্ন্যান্স ইনোভেশন ইউনিটের বিশেষ সভায় বলা হয়, ফার্মগেট কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের সামনে ডমিনো ফ্লেমিনকো কনভেনশন সেন্টারটি নির্মাণে রাজউক অনুমোদিত পরিকল্পনা কোনক্রমেই অনুসরণ করা হয়নি। এ স্থাপনা অবশ্যই ভেঙ্গে ফেলতে হবে। আর এটি ভাঙ্গার দায়িত্ব পালন করবে রাজউক। ফার্মগেট কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের উল্টোদিকেই ডমিনো ফ্লেমিনকো কনভেনশন সেন্টারটি ভিআইপি রোডের সঙ্গেই হওয়ায় ও সুন্দর স্থাপত্যশৈলীর কারণে কনভেনশন সেন্টার হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। প্রায় প্রতিদিনই বিয়ে, জন্মদিনসহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠানের ভিড় লেগে থাকত সেন্টারটিতে। রাজউক সূত্র জানায়, ভবনটি ভাঙ্গা নিয়ে কিছু আইনানুগ ব্যবস্থা সম্পন্ন করার বাকি রয়েছে। এর পরপরই যাতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাস্তবায়ন করা যায় তার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে রাজউক। সকল কার্যক্রম শেষে যে কোন সময় ভবনটি ভাঙ্গার কাজ শুরু করবে রাজউক। এদিকে রাজধানী তথা দেশের যে কোন স্থানে আইন বহির্ভূতভাবে ইমারত বিধিমালা না মেনে বা সরকারী নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে বহুতল বা ছোট-বড় যে কোন প্রকার স্থাপনা নির্মাণ করলে অপরাধীদের বিরুদ্ধে কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবে না। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। একই সঙ্গে যত শক্তিশালী বা ক্ষমতাশালীই হোক না কেন তার স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলা হবে বলে জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এমপি। তবে এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারিতে রাজউক একবার ভবনটি ভাঙ্গার চেষ্টা করলে আইনী জটিলতা থাকায় তা ভাঙ্গতে পারেনি। সকল প্রকার প্রস্তুতি নিয়েও শুধুমাত্র ভবনটিকে সিলগালা করে রাখে সংস্থাটি। এ সময় মহাখালী জোনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ কনভেনশন সেন্টারটির আশপাশে ও সামনে থাকা টয়লেটসহ নিয়মবহির্ভূতভাবে নির্মিত কিছু স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলে। এরপর থেকেই ভবনটি কোন কাজে ব্যবহার করছে না ডমিনো কর্তৃপক্ষ। রাজউক সূত্র জানায়, জমির মালিক থেকে ভবন ক্রয় করার পর কোন প্রকার অনুমতি না নিয়েই আবাসিক স্থাপনাটিকে বাণিজ্যিক স্থাপনায় ররূান্তর করে ফেলে সংস্থাটি। যা ইমারত বিধিমালা আইনের সরাসরি লঙ্ঘন। অপরদিকে কোন প্রকার অনুমতি ছাড়া কিভাবে চোখের সামনেই রাজপথের সঙ্গে ফার্মগেটের মতো স্থানে এমন বিশাল স্থাপনা নির্মাণ করা সম্পন্ন হলো এক্ষেত্রে রাজউকের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গণপূর্তমন্ত্রীর মতে, এখন থেকে সকল নিয়ম মেনেই যে কোন ভবন নির্মাণ করতে হবে সংশ্লিষ্ট ভবন মালিক বা উন্নয়নকারী প্রতিষ্ঠানকে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিদ্ধান্ত রাজউক কর্তৃক বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে আবারও প্রমাণিত হলো অবৈধ কোন স্থাপনাই দাঁড়িয়ে থাকতে দেবে না সরকারের আইন। তাই অবশেষে ভাঙ্গতেই হচ্ছে আধুনিক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নির্মিত কনভেনশন সেন্টারটি। রাজউক সূত্র জানায়, ভবনটির জমির প্রথম মালিক ২০০৬ সালে উক্ত জমিটিতে একটি পাঁচতলা ভবন নির্মাণের অনুমতি নেয়। পরবর্তীতে সে অনুযায়ী নির্মাণ কাজও শুরু করে। কিছুদিন পর উক্ত জমির মালিক মারা যাওয়ার পর ভবনটির নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে ২০১১ সালের নির্মিতব্য ভবনসহ জমিটি কিনে নেয় বেসরকারী ডেভেলপার কোম্পানি ডমিনো লিমিটেড। এরপর কোন প্রকার অনুমতি না নিয়েই ভবনটিকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের জন্য বিশাল আয়তনের কনভেনশন সেন্টার তৈরি করার উদ্যোগ নেয় ডমিনো। একই সঙ্গে মূল নক্সার বেজমেন্ট রাখা হলেও নতুন করে নির্মাণের পর কোন প্রকার বেজমেন্ট না রেখেই ভবনটি নির্মাণ করে ডমিনো। এছাড়া রাজউক থেকে পাঁচতলার অনুমোদন নিয়ে সাততলা ভবন নির্মাণ করা হয়। রাজউকের মহাখালী জোন সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি রাজউকের একটি প্রতিনিধি দল কনভেনশন সেন্টারটি পরিদর্শনে যায়। এ সময় রাজউকের জোন প্রধান ও অথরাইজড অফিসার উপস্থিত ছিলেন। পরিদর্শনের সময় ভবনটি নক্সা বহির্ভূতভাবে নির্মাণের যথেষ্ট প্রমাণ পায় প্রতিনিধি দল। এ সময় ভবনটি ব্যবহার না করার নির্দেশনা প্রদান করে আইনগত জটিলতা শেষে ভবনটি ব্যবহারের জন্য রাজউক কর্র্র্তৃপক্ষ সিলগালা করে দেয়। সরেজমিনে জানা গেছে, সিলগালা করার আগ পর্যন্ত ভবনটিতে ডমিনোর নিজস্ব ১৪ স্টাফ কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে সেখানে মাত্র দুজন স্টাফ ভবনের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন। ভবনটির সিকিউরিটি কমান্ডার মোঃ শাকিল জনকণ্ঠকে বলেন, কনভেনশন হিসেবে চালু থাকা অবস্থায় প্রতি মাসে আয় ছিল প্রায় ১০/১১ লাখ টাকা। ভবনটির নিচে কোন বেজমেন্ট নেই। তবে অতিথিদের গাড়ি রাখার জন্য সামনে জায়গা রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজউকের সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান মোঃ আবদুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, ডমিনো ফ্লেমিনকো কনভেনশন সেন্টারটি সম্পূর্ণ নক্সা বহির্ভূতভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ইমারত বিধিমালা পালন করা হয়নি। ভবনটিকে বাণিজ্যিক ভবনের অনুমতি নিয়ে কনভেনশন সেন্টার হিসেবে ব্যবহার করতে হলে রাজউকের অনুমোদন নিতে হয় যা নেয়া হয়নি। যা পুরোপুরি আইনের লঙ্ঘন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গবর্ন্যান্স ইনোভেশন ইউনিটে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিশেষ সভার সিদ্ধান্তক্রমে ভবনটি ভাঙ্গার দায়িত্ব দিয়েছে রাজউককে। তিনি বলেন, একটি কনভেনশন সেন্টারে নানা অনুষ্ঠানে হাজার হাজার লোক আসা-যাওয়া করে। আইনানুযায়ী যার জন্য বাধ্যতামূলকভাবে বেজমেন্ট নির্মাণ করার কথা থাকলেও এখানে তা করা হয়নি। এছাড়া ডমিনো কর্তৃপক্ষ কোন ধরনের অনুমতি না নিয়েই বাণিজ্যিক ভবনকে কনভেনশন সেন্টারে রূপান্তর করেছে। রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জানুয়ারিতে ভবনটি ভাঙ্গার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু সে সময় নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ভবনটি ভাঙ্গার জন্য সময় চেয়ে আবেদন করে। অপরদিকে আইনানুগ কিছুটা সমস্যা থাকায় আমরা ভবনটিকে না ভেঙ্গে ব্যবহার বাতিল করে সিলাগালা করে দিয়েছি। বর্তমানে সেটি আর ব্যবহার করা হচ্ছে না। তবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশক্রমে অতিদ্রুত আইনানুগ সমস্যা সমাধানের পরপরই যাতে ভবনটি ভাঙ্গার কাজ যে কোন সময় শুরু করা যায় তার জন্য রাজউক পুরোপুরি প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। আইনী প্রক্রিয়া শেষ করে নক্সা বহির্ভূতভাবে নির্মিত ভবনটির বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×