ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

উৎপাদন হচ্ছে স্বাস্থ্য সহায়ক পণ্য

এক উদ্যমী যুবক ও শত নারী উদ্যোক্তা

প্রকাশিত: ০৮:৪৪, ১৮ মে ২০১৯

এক উদ্যমী যুবক ও শত নারী উদ্যোক্তা

চোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে এক যুবক উদ্যোক্তা আজ দেখিয়ে দিয়েছেন কি করে নিভৃত পল্লীতে নিজের পণ্যকে চেনানো যায়। নিজের পণ্যে নারী সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার পাশাপাশি আবু আছাদের উদ্যোগ এক দুরন্ত সম্ভাবনায় হাতছানি দিয়েছে শত শত নারীর স্বপ্নকে। সেই সব নারীরা প্রতিষ্ঠিত হয়ে উঠেছে আজ এক একজন করে উদ্যোক্তায়। উত্তরাঞ্চলের রংপুর বিভাগের গ্রামে গ্রামে কম পয়সায় সহজে পাওয়া যায়, প্রত্যেক নারী যাতে ব্যবহার করতে পারে, এরকম স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরি করে বিপ্লব সৃষ্টি করেছেন নীলফামারীর ডোমার উপজেলা শহরের থানাপাড়ার আবু আছাদের নেতৃত্বে শত শত নারী। এই যুবক সেফ গ্রুপ অব স্যানি- মার্ট কোম্পানির কমিউনিটি ডেভেলমেন্ট প্রকল্পের উদ্যোক্তা ও ডিবিসিসির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক। এ জন্য তিনি নীলফামারীতে ১২টি নারী সংগঠন তৈরি করে সেই সংগঠনগুলোকে এক একটি কোম্পানিতে রূপ দিয়েছেন। এতে করে এসব ন্যাপকিন সাশ্রয়ী মূল্যে বাজারজাত করায় গ্রামীণ নারীদের যেমন স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ছে, তেমনিভাবে এসব কাজে নিয়েজিত নারীরা ঘরে বসে স্বল্প খরচে তৈরি করে এসব ন্যাপকিন ব্যবহারে উদ্ভূত ও বেকার সমস্যা দূরীকরণে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। তারা তুলা, জাল, গার্ডার ও ফিতা দিয়ে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে স্বল্প খরচে তৈরি করছেন এই স্যানেটারি ন্যাপকিন। আবু আছাদ এই নারীদের পথ দেখিয়ে দেয়ায় ওই নারীরাও আজ নিজেদের উদ্যোক্তা তৈরি করে ফেলেছে। নারীদের স্বাস্থ্যের উন্নতির ব্যাপারে আবু আছাদের স্যানেটারি ন্যাপকিন অবদান সর্বজন স্বীকৃত। এই কাজে জড়িত নারীরাই বলছেন আবু আছাদ আমাদের কাছে একজন আধুনিক বিপ্লবী। সব কঠিন কাজের মতোই ওনার কাজটাও সহজ ছিল না। তাকেও তার পরিবার এবং সামাজিক কুসংস্কারের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়েছে। তিনি একজন পুরুষ হয়েও নারী সমাজের উন্নতির চেষ্টা করে সফলতা পাচ্ছেন। এই কারণে তার সবচেয়ে বড় এবং আন্তরিক প্রচেষ্টাকে কেউ কেউ কটূক্তি করে বিকৃত রুচি বলতেও ছাড়েনি। তবু তিনি যে, কাজের জন্য যুদ্ধ শুরু করে সেটা ছেড়ে দেননি। বরং এসব ন্যাপকিন সাশ্রয়ী মূল্যে বাজারজাত করে প্রসার ঘটিয়ে স্থানীয় বাজারে বিক্রির ব্যবস্থা করেছে। দিনে দিনে এর প্রসার ঘটছে এবং এ কাজে জড়িত নারীদের উপার্জন দিন দিন বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, নীলফামারী সদর, জলঢাকা, ডোমার ও ডিমলা উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এলাকায় ১২টি স্যানি-মার্ট কোম্পানিতে ৬৭০ নারী ও ১০ কিশোর কাজ করছে। তাদের স্যানি মার্ট কোম্পানিগুলো হলো ডোমার উপজেলার সদর ইউনিয়নে সেফ স্যানি-মার্ট, বোড়াগাড়ী ইউনিয়নে একতা স্যানি-মার্ট, বামুনিয়া ইউনিয়নে আসমানী স্যানি-মার্ট, গোমনাতী ইউনিয়নে সোনালিকা স্যানি-মার্ট, হরিণচড়া ইউনিয়নে গোলাপ স্যানি-মার্ট, জোড়াবাড়ি ইউনিয়নে দোলন চাপা স্যানি-মার্ট, সোনারায় ইউনিয়নে আদর্শ স্যানি-মার্ট, জলঢাকা উপজেলায় মীরগঞ্জ ইউনিয়নে চমক স্যানি-মার্ট, গোলনা ইউনিয়নে চাইল্ড কেয়ার স্যানি-মার্ট, ডিমলা উপজেলায় গয়াবাড়ি ইউনিয়নে সোনামণি স্যানি-মার্ট, নীলফামারী পৌরসভায় স্যান-জিন স্যানি-মার্ট, সদর উপজেলার চওড়া বড়গাছা রূপালী স্যানি-মার্ট। ওই ১২টি কোম্পানির মূল পৃষ্ঠপোষকতায় আছেন আবু আছাদ। উত্তরাঞ্চলের গ্রামে কম দামী প্যাড বাজারে আসার আগে, গ্রামীণ নারীদের নাগালের বাইরে ছিল স্যানিটারী প্যাড। বেশির ভাগ গ্রাম্য মহিলা এটাকে প্রাচুর্য বলে মনে করতো এবং এর পিছনে অর্থ ব্যয় করা ছিল অপ্রয়োজনীয়। তারা মনে করতেন এর পিছনে টাকা খরচ করার থেকে রোজকার খাবার, দুধের পিছনে খরচ করা ভাল। সেই তারা অস্বাস্থ্যকর জীবন বেছে নিয়েছিলেন। বিগত সময়ের এক জরিপে দেখা যায় শতকরা ৭০ জন মেয়ে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিত মেনস্ট্রুয়েশনের কারণে। তাদের স্যানিটারি ন্যাপকিন সম্বন্ধে কোন অভিজ্ঞতাই ছিল না। ১০০ জনের মধ্যে ৭৫ জন গ্রামের মহিলা স্যানিটারি প্যাডের পরিবর্তে অপরিষ্কার কাপড়, বালি বা ছাই ব্যবহার করে থাকে শুধু মেনস্ট্রুয়ল স্বাস্থ্যবিধি সম্বন্ধে সচেতনতার অভাবে। যখন এক গ্রাম্য মহিলাকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তার উত্তর ছিল, যে জিনিসকে ব্যবহার করে কিছুক্ষণ পর ফেলে দিতে হবে, তার পেছনে ব্যর্থ পয়সা খরচ করে লাভ কি! এই উত্তর শুনে আমাদের হয়তো হাসি পাবে। কিন্তু এই উত্তরে গ্রামীণ উপার্জনের অবস্থার সেই পরিপ্রেক্ষিতে এবং স্যানিটারি প্যাডের দাম মাথায় রেখে গ্রাম্য মহিলাদের দৃষ্টিকোণ বোঝা যায়। কথা প্রসঙ্গে আবু আছাদ ২০০৯ সালের একটি ঘটনা তুলে জানান নবম শ্রেণীতে পড়ুয়া কিশোরী স্কুলে যাওয়ার পর একটু পরপর উসখুস করছিল। এক সময় সে অজ্ঞান হয়ে গেল। তারপর মারা গেল। পোস্টমর্টেম করার পর কিশোরীর জরায়ুতে দুটি সাপের বাচ্চা পাওয়া যায়। ঘটনাটি যশোরের ঝিকরগাছার। ওই কিশোরীর মাসিক হয়েছিল। সে মাসিকের পুরনো কাপড় শুকাতে দিয়েছিল কোন স্যাঁতসেঁতে জায়গায়। সেখান থেকেই হয়তো সাপের বাচ্চা দুটো কাপড়ে লাগে। কিন্তু স্কুলে গিয়ে অস্বস্তি হলেও কাউকে বলতে পারেনি সে কথা। আবু আছাদ আরও দুটি ঘটনার কথায় জানান নোয়াখালীর হাতিয়া দ্বীপের ১১ বছরের কিশোরী সানজিদা সুলতানার হঠাৎ পেটে ব্যথা। তারপর আকস্মিক এ পরিস্থিতিতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে সে। লজ্জায়-ভয়ে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। আর মাসিকের কারণে নিয়মিত স্কুলে না যাওয়ায় লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায় আরেক কিশোরীর। শেষে মা-বাবার চাপে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয় তাকে। এরকম অসংখ্য কিশোরী মাসিক বিষয়ে অজ্ঞতার কারণে মৃত্যুঝুঁকিসহ শিক্ষা গ্রহণ থেকে ছিটকে পড়ছে। দেশের বেশিরভাগ স্কুল-কলেজের টয়লেট মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় উপযোগী নয়। নারী ও মেয়েদের মধ্যে স্যানিটারি প্যাডের ব্যবহার বাড়লেও মাসিকের সময় ব্যবস্থাপনায় রয়ে গেছে অনেক সমস্যা। স্কুলে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহের অভাব, পরিষ্কার টয়লেটের ঘাটতি, গোপনীয়তার অভাব স্কুলগামী মেয়েদের জন্য এ সময়টি আরও জটিল করে তোলে। এতে বাড়ছে স্কুলে মেয়েদের অনুপস্থিতির হার। তিনি বলেন, সরকার স্কুলগুলোকে মাসিকবান্ধব করে তুলতে প্রজ্ঞাপন জারি করলেও বাস্তবতা ভিন্ন। ওয়াটার এইডের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশের ৮২ শতাংশ স্কুলে মাসিক ব্যবস্থাপনায় যথাযথ কোন সুযোগ নেই। এ কারণে শিক্ষার্থী অনুপস্থিতির হারও বেশি থাকে। অপরদিকে, ইউনিসেফের তথ্যানুযায়ী, জীবনের প্রথম মাসিকের অভিজ্ঞতা অনেক মেয়ের কাছেই ভয়াবহ এক অভিজ্ঞতা। কারণ এ বিষয়ে তাদের কাছে কোন তথ্য থাকে না, এমনকি মায়েরাও কন্যা সন্তানের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেন না। ২০১৪ সালের বাংলাদেশ ন্যাশনাল হাইজিন বেসলাইন সার্ভে থেকে জানা যায়, দেশের ৪০ শতাংশ মেয়ে মাসিক ঋতুচক্রের সময়ে তিনদিন স্কুল যায় না এবং এই ৪০ শতাংশের তিনভাগের এক ভাগ মেয়ে জানিয়েছে, স্কুল কামাই দেয়ার কারণে তাদের লেখাপড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এখনও মাত্র দশ শতাংশ নারী স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করে আর বাকি ৮৬ শতাংশ নারী ব্যবহার করে পুরনো কাপড়। অপরদিকে, মাত্র ৬ শতাংশ মিন্সট্রুয়াল হাইজিন ম্যানেজমেন্ট স¤পর্কে স্কুলে জানতে পারে। স্কুলে টয়লেটগুলোতে কাপড় পরিবর্তন করার সুযোগ ও ব্যবহৃত ন্যাপকিন ফেলার ব্যবস্থা না থাকায় মাসিকের দিনগুলোতে স্কুলে যেতে এমনকি ঘর থেকে বের হতেও অস্বস্তিবোধ করে অনেক মেয়েই। অথচ স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতি ছয় ঘণ্টা অন্তর ন্যাপকিন পাল্টানো দরকার। তা না হলে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে এবং নানা রোগ দেখা দিতে পারে। আবু আছাদ বলেন, ১০০ জনের মধ্যে ২৩ জন পরিণত বয়সের মেয়ে পড়াশোনা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় সর্বজনীন শৌচালয়ের অভাবে। এটা ছিল এক ভয়াবহ পরিস্থিতি। গত ১০ বছরে একটা আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসার চেষ্টা করেছি গ্রাম পর্যায়ে। তিনি উল্লেখ করে বলেন, বিভিন্ন বড় কো¤পানির প্যাকেজিং এবং ব্যাডিংয়ের কারণে মূল্য বেশি হয়। তাই সিদ্ধান্ত নেই যে অন্য কো¤পানির তুলনায় অতি সামান্য খরচে স্যানিটারি প্যাড বানাবেন। তার এই চেষ্টার ফলে এখন নীলফামারীসহ বিভিন্ন গ্রাম্য মহিলারা এই প্যাড ব্যবহার করতে পারছেন। আবু আছাদের কথা বাংলাদেশের বেশিরভাগ দ্রব্য মধ্যবিত্ত এবং উচ্চ অর্থ উপার্জনকারীদের জন্য তৈরি হয়। ফলে অনেক অত্যাবশ্যক দ্রব্য গ্রামীণ জনসংখ্যার নাগালের বাইরে থাকে। এই জন্য তার জিনিস শুধু গ্রাম্য মহিলাদের জন্য তৈরি। এইভাবে উনি সমাজের নিম্ন শ্রেণীর লোকদের জন্য ভাল স্বাস্থ্যবিধি এবং স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরি করে আয় উপার্জনের ব্যবস্থা করেছেন। যেন গ্রামীণ মহিলারা মেনসট্রুয়েশন সম্বন্ধে বিকৃতভাবে ভাবা বন্ধ করে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে আজ অনেকে স্বীকার করে বলছেন গ্রামীণ মহিলাদের জন্য আছাদ যা করেছেন তা সত্যই প্রশংসার যোগ্য। আসা করা যায় তার এই চেষ্টায় বাধাধরা অজ্ঞ মানসিকতা বদলাবে এবং গ্রামীণ নারীদের স্বাস্থ্য সচেতনসহ উপার্জনে ক্ষমতাশীল করে তুলবে। ডিমলা উপজেলার গয়াবাড়ি ইউনিয়নের সঠিবাড়ি গ্রামের সোমা আক্তার (২২) বলেন, আমি সোনামণি স্যানি-মার্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সেফ গ্রুপ অব স্যানি-মার্টের নির্বাহী পরিচালক। আবু আছাদের মাধ্যমে আমরা ৬০ সদস্য মিলে সোনামণি স্যানি-মার্ট গঠন করি। প্রথমে আমরা প্রতিজন পাঁচ শত টাকা করে পুঁজি বিনিয়োগ করে এখন আমাদের জনপ্রতি পুঁজি দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার টাকা করে। তিনি বলেন, দিনে দিনে আমাদের আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। ওই প্রতিষ্ঠানের সদস্য গোলাপী বেগম (৩০) বলেন, আমরা সাংসারিক কাজের পাশাপাশি একাজ করে সংসারে সহযোগিতা করতে পারছি, তেমনিভাবে গ্রামের পিছিয়ে পড়া নারীদের স্বাস্থ্যসম্মত ন্যাপকিন ব্যবহারে উৎসাহিত করছি। এতে করে নারীদের দূরারোগ্য ক্যান্সারসহ নানা রোগ প্রতিরোধে সচেতনা বাড়াতে কাজ করছি। জলঢাকা চাইল্ড কেয়ার স্যানি-মার্ট কোম্পানির পরিচালক (অর্থ) আমিনা আক্তার (২০) বলেন, আমরা ৬০ জন মিলে করা এই কোম্পানি ৩ বছর ধরে পরিচালনা করছি। শুরুতে লোকসান হলেও এখন প্রতিজন মাসে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা আয় করছি। এতে আমাদের সংসারের সচ্ছলতা বাড়ছে, নারীদের বেকার সমস্যা দূর হচ্ছে। ডোমারের হরিণচড়া ইউনিয়নে গোলাপ স্যানি-মার্ট এর পরিচালক (অর্থ) পূর্ণিমা রায় (২২) বলেন, আমাদের প্রতিটি কোম্পানির সদস্যরা স্কুল ও কলেজের ছাত্রী। কিছু গৃহবধূ রয়েছে। তবে স্কুল কলেজের ছাত্রী হিসেবে আমরা স্যানিটেশন ন্যাপকিন বা প্যাড তৈরি করে নিজেরাই নিজেদের উন্নতির পাশাপাশি গ্রামের নারীদের এটি ব্যবহারে স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমিয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেয়েদের খেলাধুলার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেছেন। দেশের গ্রামে গ্রামে মেয়েদের বিভিন্ন খেলাধুলার প্রচলন রয়েছে। মেয়েরা খেলছে। এ ক্ষেত্রে স্যানিটারি ন্যাপকিন প্যাড বিশেষ ভূমিকা রাখছে। এ বিষয়ে আবু আছাদ জানান, আমি ডিবিসিসির মাধ্যমে খেলাধুলার মানোন্নয়নে মাঠপর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে ইউনিসেফের তৎকালীন রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের চাইল্ড প্রোটেকশন কর্মকর্তা মোঃ আজিজুর রহমানের সঙ্গে পরিচয় হয়। তার পরামর্শে আমি প্রায় ১০ বছর আগে সেফ গ্রুপ অব স্যানি-মার্ট গঠন করি। এখানে আমাকে সহায়তা করেন ঢাকার কেন্দ্রীয় ডিবিসিসির সভাপতি এএসএম মহসীন আলী (সাজ্জাদ চৌধুরী)। তাদের পরামর্শে নীলফামারীর বিভিন্ন ইউনিয়নের নারী উদ্যোক্তাদের সংগঠিত করে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করি। এভাবে ১২টি আলাদা আলাদা কোম্পানি করে দেই। যা তারা নিজেরাই পরিচালনা করছেন। ১২টি কোম্পানির প্রতিটির সদস্য সংখ্যা ৬০ জন করে। প্রতিটি কোম্পানি ৬টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে দিনের নির্দিষ্ট একটি সময়ে একত্রিত হয়ে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে ন্যাপকিন তৈরির কাজ করেন। তিনি বলেন, আমাদের প্রতিটি (৮টির) ন্যাপকিনের উৎপাদন খরচ হয় ১৬টাকা। বিক্রয় করা হয় ৩০ টাকা থেকে ৩৫ টাকা পর্যন্ত। বাজারে যে কোন ন্যাপকিন সর্বনি¤œ ৬০ টাকার নিচে পাওয়া যাবে না। তিনি বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এর সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করছি। ভবিষ্যতে সারা দেশে এর বাজার তৈরি করতে আমরা কাজ করছি। তিনি এর প্রসারতা বৃদ্ধিতে নীলফামারীর প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌরসভা এবং নীলফামারী সংলগ্ন অন্য জেলাগুলোতে তার এই উদ্যোগ সম্প্রসারণের চেষ্টা করছেন। এ জন্য তিনি সরকারী সহযোগিতা পেলে এর প্রসার আরও বাড়ানো সম্ভব হবে বলে দাবি করেন। নীলফামারী জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন বলেন, সেফ স্যানি-ম্যাটের এটা ভাল উদ্যোগ। এখানে বেকার নারীদের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি গ্রামের নারীদের স্বাস্থ্য সচেতনতায় সহায়ক ভূমিকা রাখছে। তিনি বলেন, যারা ভাল ব্র্যান্ডের ন্যাপকিন ব্যবহার করতে পারেন না, তারা স্বল্পমূল্যে এটা ব্যবহার করে উপকৃত হচ্ছে বলে জানতে পেরেছি। নারীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমাতেও এটি সহায়ক বলে আমি মনে করি। -তাহমিন হক ববী, নীলফামারী থেকে
×