ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শুভঙ্করের ফাঁকি!

প্রকাশিত: ০৮:৪৩, ১৮ মে ২০১৯

 শুভঙ্করের ফাঁকি!

শুভঙ্করের ফাঁকিই মনে হবে। যা নেই, তা রফতানির নামে পদক্ষেপ গ্রহণের আড়ালে কোন সুলক্ষণ পরিলক্ষিত হয় না। বাদামের একটি উন্নত প্রজাতি হচ্ছে কাজু বাদাম। দেশে এই বাদাম তেমন উৎপাদন হয় না। পার্বত্য অঞ্চলে সামান্য পরিসরে যা চাষ হয় তা বাজারে আসে না। দেশীয় বাজারে যে কাজু বাদাম মেলে তার পুরোটাই হচ্ছে আমদানিনির্ভর। এমনকি দেশে কাজু বাদামের চাহিদা কত এবং কী পরিমাণ উৎপাদন হয়, তার সঠিক তথ্য উপাত্তও নেই। আবার দেশে কাজু বাদাম আদৌ উৎপাদন হয় কিনা, তেমন তথ্যও ব্যবসায়ী বা বাণিজ্য দফতরগুলোরও জানা নেই। অথচ দেশ থেকে কাজু বাদাম রফতানির তোড়জোড় শুরু হয়েছে। বায়বীয় বিষয় বৈকি। কাজু বাদাম উৎপাদক, প্রক্রিয়াজাতকারক ও রফতানিকারক সমিতি নামে একটি সংগঠন দাঁড়িয়ে গেছে। বাণিজ্যিক এই সংগঠনকে ‘ক্রাইসেস’ও দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, যা বিস্ময়কর বৈকি। অবশ্য শর্ত সাপেক্ষে এই সংগঠনকে লাইসেন্সসহ রফতানির অনুমোদনও দেয়া হয়েছে। শর্তের মধ্যে রয়েছে, লাইসেন্স প্রদানের ষাট দিনের মধ্যে কোম্পানি আইনের অধীনে যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদফতরে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধনের ষাট দিনের মধ্যে এফবিসিসিআইর সদস্যভুক্তির আবেদন করতে হবে। সংগঠনটির মেমোরেন্ডাম অব এ্যাসোসিয়েশন এ্যান্ড আর্টিকেল অব এ্যাসোসিয়েশনে চব্বিশ জন সদস্যের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর প্রথম পাঁচজন বাংলাদেশ ক্যাস্উি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামের একটি কোম্পানির প্রতিনিধি। যে কোম্পানিতে রয়েছেন সংগঠনের আহ্বায়কও। রয়েছেন একই পরিবারের একাধিক সদস্য। যদিও একটি সংগঠনে এক কোম্পানির একজন প্রতিনিধিই থাকতে পারেন। আবেদনের আগেই এফবিসিসিআই সংগঠনটির লাইসেন্স বাতিলের প্রস্তাব করেছে। এই সংগঠনকে ভুয়া উল্লেখ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠিও দিয়েছে ব্যবসায়ীদের এই শীর্ষ সংগঠন। তারা বলেছে, আহ্বায়ক যে কোম্পানির প্রতিনিধি দাবি করছে সে কোম্পানিটি যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদফতরে নিবন্ধিত নয়। এ ছাড়া একই ব্যক্তি আগে ‘বাংলাদেশ অর্গানিক প্রোডাক্ট ম্যানুফ্যাকচার্স এ্যাসোসিয়েশন’ এবং ‘বাংলাদেশ সয়াবিন ও সয়াফুড প্রডিউসার এ্যাসোসিয়েশন’ নামে দুটি সংগঠনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে লাইসেন্স নিয়েছেন। ওই সংগঠন দুটির পক্ষ থেকে এফবিসিসিআইর কাছে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশে কাজু বাদাম নামে মাত্র উৎপাদন হয়। রফতানি হওয়ার মতো উৎপাদন পরিস্থিতির কোন তথ্য বা খবর এফবিসিসিআইর কাছে নেই। ফলে কাজু বাদাম উৎপাদকদের সাংগঠনিক কোন সুবিধার প্রয়োজন হলে বাংলাদেশ এগ্রো প্রসেসরস এ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ এগ্রো বেজড প্রডাক্ট প্রডিউসার এ্যান্ড মার্চেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের সহায়তা নিতে পারে। এসব বিষয় তুলে ধরে সংগঠনটির অনুকূলে বরাদ্দ করা লাইসেন্স বাতিলের অনুরোধ করেছে এফবিসিসিআই। কিন্তু লাইসেন্সপ্রাপ্তরা ভিন্নমত প্রকাশ করছে। তারা বলছেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে যখন বাণিজ্য সংগঠন লাইসেন্সের জন্য আবেদন করা হয় তখন এফবিসিসিআইর মতামত চেয়েছিল মন্ত্রণালয়। কিন্তু তারা আপত্তি করেনি, এখন অহেতুক আপত্তি জানাচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব এখন বিষয়গুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পদক্ষেপ গ্রহণ। যদিও লাইসেন্স প্রদানের আগেই তাদের এ বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করা সঙ্গত ছিল। এটা তো বাস্তব যে, কোন খাতের সংগঠনের জন্য ন্যূনতম উৎপাদন ও বাণিজ্যিক কর্মকান্ড থাকা দরকার। সংগঠন করা হয় সংশ্লিষ্ট খাতের সমস্যা সমাধান ও সম্ভাবনা কাজে লাগানোর জন্য। কাজু বাদাম রফতানির নামে আদতে তা হলে কি হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাদেরই স্পষ্ট করতে হবে এ ক্ষেত্রে ‘শুভঙ্করের ফাঁকি’ রয়েছে কি না।
×