ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

দূষিত সিরিঞ্জে এইডস ছড়িয়েছেন পাকিস্তানী চিকিৎসক

প্রকাশিত: ০৮:৩৯, ১৮ মে ২০১৯

 দূষিত সিরিঞ্জে এইডস ছড়িয়েছেন  পাকিস্তানী চিকিৎসক

পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশে এক চিকিৎসক এইচআইভি দূষিত সিরিঞ্জ ব্যবহার করে চার শ’র বেশি মানুষের শরীরে এইডসের জীবাণু ছড়িয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই শিশু। মাত্র কয়েক সপ্তাহের পরীক্ষায় এ সংখ্যা বেরিয়ে এসেছে বলে সাংবাদিকদের জানান স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। আলজাজিরা। সিন্ধু প্রদেশের লারকানার ওয়াসাউ এলাকার প্রতিটি পরিবার ভয়াবহ আতঙ্কের মধ্যে দিন পার করছে। গত মাসের শেষদিকে দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগ ওই গ্রামে এইচআইভি শনাক্তের জন্য একটি অস্থায়ী ক্লিনিক স্থাপন করেছে। ক্লিনিকের সামনে জড়ো হওয়া উদ্বিগ্ন মা-বাবা তাদের সন্তানদের পরীক্ষাগারের এক কক্ষ থেকে অন্য কক্ষে নিয়ে যাচ্ছেন। তাদের একজন মুখতার পারভেজ। মেয়ের পরীক্ষা করাতে তিনি ক্লিনিকে এসেছেন। কয়েকদিন ধরে মেয়ের জ্বর, যা মুখতারকে দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। সেখানে আসা অনেক মা-বাবা ইতোমধ্যে সত্য কথাটি জেনে গেছেন। নিসার আহমেদ নামে এক ব্যক্তি ওষুধের খোঁজে ক্লিনিকে ঘোরাঘুরি করছেন। মাত্র তিনদিন আগে তিনি জানতে পেরেছেন তার এক বছর বয়সের মেয়ে এইচআইভি আক্রান্ত। ক্ষুব্ধ কণ্ঠে তিনি বলেন, যে চিকিৎসক এত শিশুর সর্বনাশ করেছে তার ওপর গজব পড়বে। এ খবর শুনে আমার পুরো পরিবার ভেঙ্গে পড়েছে। এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে লারকানার উপকণ্ঠে ১৮ শিশুর শরীরে এইচআইভি ধরা পড়লে টনক নড়ে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের। এরপর স্বাস্থ্য বিভাগ ওই এলাকায় বড় পরিসরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালালে সংখ্যাটি কয়েকগুণ বেড়ে যায়। স্বাস্থ্য বিভাগ পুলিশের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করলে লারকানা পুলিশ সেখাকার সরকারী হাসপাতালের চিকিৎসক মুজাফফর ঘাংরোকে গ্রেফতার করেন। তার বিরুদ্ধে এইচআইভি দূষিত সিরিঞ্জ ব্যবহার করে ‘৯০ রোগীর’ শরীরে এইডসের জীবাণু ছড়ানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। নিজেও এইচআইভি সংক্রমিত। যদিও মুজাফফর তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, এটা তার বিরুদ্ধে সিন্ধু স্বাস্থ্য কমিশনের ‘ষড়যন্ত্র’। এমনকি তিনি নিজের এইচআইভি সংক্রমণের কথাও জানতেন না বলে দাবি করেন। এ ঘটনা পাকিস্তানজুড়ে হইচই ফেলে দিয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ ওই এলাকায় বড় পরিসরে এইচআইভি পরীক্ষার উদ্যোগ নেয়। আর তাতেই বেরিয়ে আসে আরও ভয়ঙ্কর সত্য। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান, গত কয়েক সপ্তাহের পরীক্ষায় তারা চার শতাধিক এইডস আক্রান্ত ব্যক্তিকে শনাক্ত করেছেন। যাদের বেশিরভাগই শিশু। এ ঘটনার পর বিশেষজ্ঞরা স্বাস্থ্য বিভাগকে সতর্ক করে পাকিস্তানজুড়ে এ ধরনের পরীক্ষা চালানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ, দেশটিতে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে হাতুড়ে চিকিৎসকরা চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। ওয়াসাউ এলাকার পরিস্থিতি বর্ণনায় অস্থায়ী ক্লিনিকের এক চিকিৎসক বলেন, তারা দলে দলে আসছে। এত মানুষের পরীক্ষা করতে ও আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এবং লোকবলের অভাবও প্রকট। আক্রান্ত শিশুর ভবিষ্যত কী হবে তা নিয়ে আতঙ্কিত এক নারী কাঁদতে কাঁদতে বলেন, কে আমার মেয়ের সঙ্গে খেলবে? বড় হলে কে তাকে বিয়ে করবে? নাম প্রকাশ না করা ওই নারীর চার বছরের মেয়ে এইডস আক্রান্ত। পাকিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলের সিন্ধু প্রদেশে এক লাখের বেশি এইচআইভি পজিটিভ লোক আছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার এইডস নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচীর কর্মকর্তা সিকান্দার মেমন। তবে সরকারীভাবে নিবন্ধিত রোগীর সংখ্যা মাত্র দশ হাজার ৩৫০। নিবন্ধিত দুই হাজার চার শ’ রোগী নিয়ে এইডস আক্রান্তের দিক থেকে সিন্ধু প্রদেশের শীর্ষে রয়েছে লারকানা জেলা। ১৯৮০-র দশকে প্রথম এইচআইভি ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত সারা বিশ্বে সাত কোটি ৬০ লাখ এইডস সংক্রমিত ব্যক্তিকে পাওয়া গেছে। চিকিৎসা আবিষ্কৃত না হওয়া এই রোগে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন প্রায় সাড়ে তিন কোটি মানুষ।
×