ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

খোশ আমদেদ মাহে রমজান

প্রকাশিত: ০৯:৫৮, ১৬ মে ২০১৯

 খোশ আমদেদ মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ পবিত্র মাহে রমজানের আজ দশম দিবস। আমরা অতিবাহিত করছি রহমতের দশক। আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে মাগফিরাতের দশক। আলহামদুলিল্লাহ! এ মাস আত্মগঠনের। ইসলামী অনুশাসনগুলো ক্রমেই অভ্যস্ত হয়ে উঠার মধ্যেই সিয়াম সাধনার পূর্ণতা। রজনীভাগকে আল্লাহতায়ালা ঘুমের জন্য নির্ধারণ করেছেন। কিন্তু জীবনের কোন কোন অংশে এ ঘুম আরাম আয়েশের চেয়েও আল্লাহ তায়ালার করুণাপ্রাপ্তির জন্য সময়দানকেই মহানবী (স.) ও তার পুণ্যাত্মা সাহাবয়ে কেরাম, পরবর্তী বুজুর্গানে দ্বীনের কাছ থেকে মহানুভব চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও মুমিন জীবনের সর্বোচ্চ শিখরে আরোহণের সোপান বলে আমরা বুঝতে শিখেছি। সে অনুশীলন হচ্ছে আমাদের এ মাসের তারাবির নামাজ, তাহাজ্জুদের নামাজ ও সেহরি গ্রহণের মধ্য দিয়ে। আজ পবিত্র তাহাজ্জুদ নামাজ সম্পর্কে কিছু কথা। তাহাজ্জুদ হচ্ছে রূহ ও আত্মার শক্তি সঞ্চয়ের এক বলিষ্ঠ মাধ্যম। ঝিমিয়ে পড়া হৃদয়কে উষ্ণ সজীব রাখার এক শ্রেষ্ঠতম উপায়। এ জন্যই আল কোরানে, আল্লাহপাক মুসলমানদের বারবার তাকিদ করেছেন তাহাজ্জুদ তথা ‘কেয়ামুল্লায়ল’ সম্পর্কে। কেয়ামুল্লায়লে (ঘুম থেকে উঠে সুখশয্যা ত্যাগ করে আল্লাহর দরবারে নামাজে দাঁড়ানো) অভ্যস্ত পুণ্যাত্মা ব্যক্তিদের এমন উচ্ছ্বসিত প্রশংসা আল্লাহ পাক করেছেন যেন এর মর্যাদা ও গুরুত্ব ফরজের চেয়ে কোন অংশেই কম নয়। পেয়ারা নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) ঘরে সফরে সর্বদা অত্যন্ত পাবন্দির সঙ্গে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতেন। এমনকি কর্মক্লান্তি ও ঘুমের প্রচ- চাপের কারণে কখনও তাহাজ্জুদ ছুটে গেলে দিনে তিনি তা আদায় করে নিতেন। ফলে বহু সংখ্যক আলিম এ মতো প্রকাশ করেছেন যে, সম্ভবত তাহাজ্জুদ নামাজ তার ওপর ফরজ ছিল। আল কোরানে আল্লাহপাক তার প্রিয় হাবীবকে (স.) সম্বোধন করে ইরশাদ করেছেন : ‘হে বস্ত্রাবৃত! রাতে (নামাজে) দাঁড়িয়ে থাকুন। হ্যাঁ রাতের কিয়াদাংশ ব্যতীত। অর্থাৎ অর্ধরাত্রি কিংবা তার চেয়ে কিছু কম করুন। কোরান খুব স্পষ্টরূপে তিলাওয়াত করুন। আমি অচিরেই আপনার ওপর এ গুরুভার বাণী অর্পণ করছি’। (সুরা মুয্যমমিল)। অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে ‘এবং রাতের কিছু অংশেও আপনি তাহাজ্জুদ পড়ুন যা আপনার জন্য অতিরিক্ত। অচিরেই আপনার প্রতিপালক আপনাকে ‘মাকামে মাহমুদে’ স্থান দেবেন।’ -(সুরা বনী ঈসরাঈল: ৭৯)। তাহাজ্জুদের নামাজের প্রতি আ হযরত (স.)-এর আত্মনিমগ্নতা একথাই প্রমাণ করে যে, এর বিশেষ আমলটির প্রতি তার পবিত্র হৃদয়ে ছিল অপরিসীম প্রেম ও সুগভীর অনুরাগ। তাহাজ্জুদের নামাজে দাঁড়িয়ে তিনি এমনই আত্মনিমগ্ন হয়ে পড়তেন এবং এত দীর্ঘ কিয়াম ও রুকু করতেন যে, তার কদম মুবারক ফুলে উঠত। বুখারী ও মুসলিম শরীফে হযরত মুগীরা বিন শুবা (রাদি.) বর্ণনা করেছেন: একবার রাসুলে কারীম (স.) এত দীর্ঘ কিয়াম করলেন যে, তাঁর কদম মুবারক ফুলে গেল। আরজ করা হয়, হে আল্লাহর রাসূল (স.) আল্লাহ তো আপনার অগ্র - পশ্চাৎ গোনাহ (যদি তা থেকে থাকে) ক্ষমা করে দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করলেন, তাই বলে কি আমি একজন কৃতজ্ঞ বান্দা হবো না?] পুণ্যাত্মা সাহাবা কিরামের জীবন চরিত্র, সিরাত ইতিহাস ও হাদিস সম্ভার পর্যালোচনাকারী যে কোন ব্যক্তি খুব সহজেই এটা উপলব্ধি করতে পারেন যে, যুগে যুগে সর্বত্র তাহাজ্জুদের আমল জারি ছিল। বরং তাহাজ্জুদ তথা কেয়ামুল্লায়লই ছিল পুণ্যাত্মা সাহাবা, তাবেয়ী ও তাবে তাবেয়ান (রাদি.)-এর বৈশিষ্ট্য। সাহাবাদের বিষয়ে হযরত ইমাম হাসান বসরীর চেয়ে ঘনিষ্ঠভাবে আর কে জানতে পারেন? পরবর্তীদের জন্য তিনি সাহাবা কিরামের পুণ্য চিত্র একে গিয়েছেন এভাবে: ‘সত্যের ডাক তাদের কানে পৌঁছা মাত্র তারা তা গ্রহণ করে নিলেন। এই সত্যের বিশ্বাস তাদের হৃদয়ের গভীরে শিকড় গেড়ে বসল। ফলে হৃদয় বুদ্ধি এমনকি তাদের চোখের দৃষ্টিও আল্লাহর ভয়ে, তাকওয়া ও পরহেযগারিতে অবনত হলো। আল্লাহর কসম, যদি তোমরা তাদের দেখতে তোমাদের একথাই মনে হতো যেন, সব কিছুই সচক্ষে দেখেই তারা বিশ্বাস করছেন। তর্কপ্রিয় ও গোড়া লোকদের মতো তারা ছিলেন না। এরা সেই পুণ্যবান জামাআত যারা আল্লাহর নির্দেশ শোনার সঙ্গে সঙ্গেই মস্তক অবনত করে দিতেন...। তাদের রাত্রি যাপন সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে : ‘আর যারা রাত্রি যাপন করে আপন প্রতিপালকের দুয়ারে সিজদা ও কিয়ামে মগ্ন থেকে।’ - (সুরা ফুরকান : ৬৪)। আসুন, মাহে রমজানে অন্যান্য ভাল গুণাবলি ও মুমিনী চরিত্রের মধ্যে আমরা তাহাজ্জুদ নামাযকেও চর্চা করি এবং হৃদয় দিয়ে তা আল্লাহকে পাওয়ার অন্যতম ওয়াসিলা মনে করি।
×