ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হাইকোর্টের মন্তব্য

বায়ুদূষণ ও জলাবদ্ধতা রোধে দুই সিটির অবহেলা

প্রকাশিত: ০৯:০৮, ১৬ মে ২০১৯

বায়ুদূষণ ও জলাবদ্ধতা  রোধে দুই সিটির অবহেলা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মশা, বায়ুদূষণ ও জলাবদ্ধতা রোধে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবহেলা রয়েছে বলে মন্তব্য করেছে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে আদালতে দাখিল করা প্রতিবেদনে ঢাকায় বায়ুদূষণ রোধে গৃহীত পদক্ষেপগুলো যথাযথভাবে উঠে না আসায় ফের অসন্তোষ প্রকাশ করেছে আদালত। দুই সিটি কর্পোরেশনের (ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার উদ্দেশে আদালত বলেছে, আপনারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, আদালতের আদেশ আপনাদের মানতে হবে। নগরীকে বাসযোগ্য করতে যে পদক্ষেপ নেয়া দরকার তাই করুন। আগামী ২৬ জুনের মধ্যে এ বিষয়ে পুনরায় অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান দুই নির্বাহীকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান এবং বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার এ আদেশ প্রদান করেছে। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন এ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। আর আদালতের তলব আদেশের ব্যাখ্যা দিতে হাজির হয়েছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী মোঃ আবদুল হাই এবং দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী মোস্তাফিজুর রহমান। তাদের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন আইনজীবী ড. নুরুন্নাহার নূপুর। আদালতের আদেশের পর ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার বলেন, ‘এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার বায়ুদূষণের মাত্রা পরিমাপ করে এবং দূষণ রোধে কী কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তার ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছিল হাইকোর্ট। যার ধারাবাহিকতায় আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছিল। কিন্তু বায়ুদূষণ রোধের উপযুক্ত জবাব ওই প্রতিবেদনে না উঠে আসায় সন্তুষ্ট হতে পারেনি আদালত। তাই গত ৫ মে ঢাকার দুই সিটির প্রধান নির্বাহীকে তলব করেছিল হাইকোর্ট। বুধবার তারা আদালতে হাজির হয়ে প্রতিবেদন দাখিল করে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। কিন্তু আদালত সে ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হতে না পেরে তাদের আবার অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে সময় দিয়েছে। শুনানির শুরুতে দুই সিটির নির্বাহীরা বায়ু দূষণরোধে গৃহীত পদক্ষেপগুলো প্রতিবেদন আকারে আদালতে দাখিল করেন। সরকার মেট্রোরেলসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প হাতে নেয়ায় বায়ুদূষণ রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে তারা আদালতকে জানান। তখন আদালত বলে, ‘বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রজেক্টের কাজের সময় আপনাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা দেখা যায় কেন? আপনারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় খোঁড়াখুঁড়ি করেন। তাই সমন্বিতভাবে কাজ করবেন। এছাড়া নাগরিক যেসব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে তাও আপনারা নিশ্চিত করবেন। পয়োনিষ্কাশন, জলাবদ্ধতা ও মশা নিধনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। আদালত বলে, ‘সামনে বর্ষা মৌসুম আসছে। একটু বৃষ্টি হলেই বিভিন্ন এলাকায় হাঁটুপানি উঠে যায়। আবার মশার উৎপাতও বেড়ে যায়। তাই আগামী বর্ষায় মশার উৎপাত কমাতে পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। বাংলাদেশে অনেক বিদেশী বসবাস করেন, বেশ কয়টি দূতাবাসও রয়েছে। দেশে বিনিয়োগের আরও সম্ভাবনা রয়েছে। তাই সেগুলো লক্ষ্য রাখতে এবং সচেতন হয়ে আরও কর্মমুখী হতে হবে।’ আদালত আরও বলে, জনগণ যেভাবে ট্যাক্স দিচ্ছেন তাতে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা পাওয়া তাদের অধিকার। তাই সব অনিয়ম ও প্রতিবন্ধকতা থেকে বেরিয়ে অচিরেই সব সমস্যা সমাধান করতে দুই সিটির নির্বাহীদের নির্দেশ দেন আদালত। এর আগে গত ২৭ জানুয়ারি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় হিউম্যান রাইটস এ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে রিট আবেদনটি দায়ের করেন এ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। সে রিটের শুনানি নিয়ে গত ২৮ জানুয়ারি ঢাকার বায়ুদূষণ বন্ধে রুল জারি করে হাইকোর্ট। রুল জারির পাশাপাশি বায়ুদূষণ রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশও দেন।
×