ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

‘রসপুরাণ’ মনোজ্ঞ নাট্য প্রযোজনা

প্রকাশিত: ০৮:৪৩, ১৬ মে ২০১৯

 ‘রসপুরাণ’ মনোজ্ঞ  নাট্য প্রযোজনা

এই মাসের ৩ তারিখ সন্ধ্যায় রামায়ণ মহাভারত এবং এই উপমহাদেশের ধ্রুপদী নাটকের কিছু নির্বাচিত অংশের সমন্বয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার এ্যান্ড পারফর্মেন্স স্টাডিজ বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রছাত্রীদের উপস্থাপনায় এক মনোজ্ঞ নাটক প্রযোজনা দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট ম-ল মঞ্চে। এই নাট্য উপস্থাপনা যেমন নাটকের ছাত্রছাত্রীদের জন্য ছিল একটি বড় চ্যালেঞ্জ এবং দর্শকদের জন্য ছিল শিক্ষণীয় ও উপভোগ্য। তেমনি নাটকের উপস্থাপনাও ছিল নিখুঁত ও শ্রমসাধ্য যা কেবল সম্ভব হয়েছে অভিনেতাদের কঠোর শ্রম, শৃঙ্খলাবোধ, মনস্কতা ও নাট্য শিল্পের প্রতি অনুরাগ থেকে। নাটকের শিরোনাম, ‘রসপুরাণ’। আদি নাট্য শাস্ত্রবিদ ভরতমুনির নাট্য শাস্ত্রের আটটি রসের সমাহারে নাটকটি গ্রথিত হয়েছে। নাট্যশাস্ত্রে বিধৃত সব ধ্রুপদী নাট্যক্রিয়াই এই প্রযোজনায় অনন্য দক্ষতার সঙ্গে উপস্থাপিত হয়েছে; যা ছিল নাট্য শিক্ষার্থীদের জন্য যেমন শিক্ষণীয় তেমনি দর্শকদের জন্য নব-প্রাপ্তি। বীর, বীভৎস ও হাস্যরস নান্দনিকভাবে উপস্থাপিত হয়েছে, যা বাকি অন্য পঞ্চম রস থেকে দর্শকবৃন্দ সহজে চিহ্নিত করতে পেরেছে। প্রশংসনীয় বাচিক ও দৈহিক অভিনয়, পোশাক, শব্দ-সঙ্গীত, আলো ও দৃশ্য সজ্জা সংবলিত ১ ঘণ্টা ২০ মিনিটের এই নাট্য প্রযোজনাটি ছিল অনুপম। দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রছাত্রীরা যে এত সুন্দর কাজ করতে পারে, তা আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না। আমি নাট্য- উপস্থাপনা শেষে ভরতমুনির নাট্য শাস্ত্রের অষ্ট-রস নিয়ে ভাবতে শুরু করেছি। মহাভারত, রামায়ণ আর কৃষ্ণ লীলা এবং মণিপুরী নৃত্যশৈলী নিয়েও নতুন করে ভাবতে শুরু করেছি। মুণিপুরী নৃত্যশৈলী বাঙালীর শিল্পকলা ও সাহিত্যের প্রধান ঋত্বিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে প্রভাবিত করেছিল, যা পরবর্তীতে ইন্দোনেশিয়ায় জাভা দ্বীপে এবং বাংলা লোকজ নৃত্য ও উপমহাদেশের অন্যান্য ধ্রুপদী নৃত্য শিল্পের সমন্বয়ে রবীন্দ্রনৃত্য-কলার রূপ পরিগ্রহ হয়। ড. আহমেদুল কবির, চেয়ারম্যান থিয়েটার এ্যান্ড পাফর্মেন্স স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এই নাট্য প্রযোজনার নির্দেশকের দায়িত্ব পালন করেছেন, যে কাজটিকে অত্যন্ত শ্রমসাধ্য বলে আমি চিহ্নিত করতে চাই। এই বিভাগের শিক্ষক রূপদর্শী, শাহমান মৈশানের এই নাট্য সংকলনও প্রশংসার যোগ্য। মানুষের সভ্যতার অগ্রগিত ঘটেছে যুদ্ধ, হত্যা, ভয়, ক্রোধ, ঘৃণা, হিংসা এই সকল নেতিবাচক মানব-প্রবণতার মধ্য দিয়ে, যা থেকে আমরা আজও মুক্ত হয়নি। পাশাপাশি, বিশ্ব মানব হিসেবে আমরা ভালবাসা, সৌহার্দ্য, প্রেম-প্রীতি, সৌন্দর্য বোধ বর্জিত নই। বলা হয়, মানুষ ঈশ্বরের ও ইবলিশের সমন্বয়ে সৃষ্ট; এই নাট্য প্রযোজনা মন্যুষত্ব ও শুভবুদ্ধির দ্বার খুলে দেবার জন্য একটি বড় প্রয়াস। নাটকটি শেষ হয় রাধা-কৃষ্ণের প্রেমের উপখ্যানের একটি নান্দনিক উপস্থাপনার মাধ্যমে। ঘৃণার বিপরীতে ভালবাসারই জয় হয়। যুদ্ধের বিপরীতে শান্তিরই জয় হয়। অভিনন্দনের যোগ্য এই নাটকের রূপদর্শী নির্দেশক, সকল কুশীলব এবং কলা-কুশলীরা। এই নাট্য প্রযোজনা বহুদিন দর্শকদের স্মৃতিতে জাগরুক থাকবে। জয় হোক নাটকের, জয় হোক মানবতার। আতাউর রহমান অভিনেতা, নাট্য নির্দেশক, লেখক ও কবি ২১ শে পদকপ্রাপ্ত
×