ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইংলিশ ফুটবলে জয়জয়কার

প্রকাশিত: ১২:০৫, ১৫ মে ২০১৯

ইংলিশ ফুটবলে জয়জয়কার

এরচেয়ে স্বর্ণসময় বোধহয় আর আসেনি ইংলিশ ফুটবলে। অতীতের বদনাম ঘুচিয়ে ইংল্যান্ডের ক্লাবগুলো এখন নিজেদের ইতিহাসে সাফল্যময় সময় অতিবাহিত করছে। ইংল্যান্ড জাতীয় দলও তাক লাগানো সাফল্য পাচ্ছে। ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে ফুটবলের জনকরা চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলেও চৌকস পারফর্মেন্স প্রদর্শন করে সেমিফাইনালে খেলেছিল। এরপর ইউরোপের ক্লাব ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়েও চোখ ধাঁধানো সাফল্য পাচ্ছে ইংল্যান্ডের ক্লাবগুলো। ইউরোপিয়ান ফুটবলে সবচেয়ে মর্যাদার আসর চ্যাম্পিয়ন্স লীগ। এবার ২০১৮-১৯ মৌসুমে আসরের ফাইনালে উঠেছে লিভারপুল ও টটেনহ্যাম হটস্পার। চ্যাম্পিয়ন্স লীগে অল-ইংলিশ ফাইনাল নিশ্চিতের একদিন পরই ইউরোপের দ্বিতীয় সেরা আসর ইউরোপা লীগেও দুই ইংলিশ ক্লাব ফাইনালের টিকেট পেয়েছে। সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগ জিতে ফাইনালে উঠেছে চেলসি আর্সেনাল। এর মধ্য দিয়ে ইংলিশ ক্লাবগুলোর জয় জয়কারই শুধু হয়নি, গৌরবময় অনেক রেকর্ডের সঙ্গী হয়েছে তারা। মেস্টালায় ম্যাচের শুরুতে গোল করে ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা জাগিয়েছিল ভালেন্সিয়া। তবে পিয়েরে-এমেরিক আউবামেয়াংয়ের হ্যাটট্রিকে ফিরতি লেগেও জিতে ইউরোপা লীগের ফাইনালে উঠেছে আর্সেনাল। স্প্যানিশ ক্লাবটির মাঠে শেষ চারের ফিরতি পর্বে ৪-২ গোলে জিতে দুই লেগ মিলিয়ে ৭-৩ ব্যবধানে এগিয়ে ফাইনালে উঠেছে উনাই এমেরির দল। প্রথম লেগে লন্ডনের এমিরেটস স্টেডিয়ামে ৩-১ গোলে জিতেছিল আর্সেনাল। একই সময়ে শুরু হওয়া চেলসি ও ফ্রাঙ্কফুর্টের মধ্যে সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগের আরেক ম্যাচ ১-১ গোলে ড্র হয়। দুই লেগ মিলে স্কোরলাইন ২-২ হলে ম্যাচ অতিরিক্ত সময় হয়ে গড়ায় টাইব্রেকারে। তাতে ৪-৩ ব্যবধানে জয় পায় মাওরিসিও সাররির দল চেলসি। চেলসির জয়ের নায়ক গোলরক্ষক কেপা। জার্মান ক্লাব ফ্রাঙ্কফুর্টের শেষ দু’টি পেনাল্টি শট তিনি দক্ষতার সঙ্গে রুখে দেন। আগামী ২৯ মে আজারবাইজানের বাকুতে শিরোপা লড়াইয়ে মুখোমুখি হবে চেলসি ও আর্সেনাল। এরপর আগামী ১ জুন স্পেনের মাদ্রিদের ওয়ান্ডা মেট্রেপলিটানো স্টেডিয়ামে চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনালে মুখোমুখি হবে লিভারপুল ও টটেনহ্যাম হটস্পার। পরশু রাতের পর প্রথমবারের মতো ক্লাব পর্যায়ে ইউরোপের শীর্ষ দুই ফুটবল প্রতিযোগিতার ফাইনালে পা রেখেছে একই দেশের চারটি ক্লাব। এর আগে ক্লাব পর্যায়ে ইউরোপের শীর্ষ কোন প্রতিযোগিতার ফাইনালে দুটি দলই ইংল্যান্ডের এমন ঘটনা ঘটেছে মাত্র দুইবার। ১৯৭১-৭২ মৌসুমে উয়েফা কাপের ফাইনালে ওলভারহ্যাম্পটনকে হারিয়েছিল টটেনহ্যাম। আর ২০০৭-০৮ মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনালে চেলসিকে হারিয়ে শিরোপা ঘরে তুলেছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। ইউরোপা লীগ ও চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ফাইনাল মিলে চারটি দলের মধ্যে তিনটি স্প্যানিশ দল ছিল একবার। ২০১৫-১৬ মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনালে মুখোমুখি হয় মাদ্রিদের দুই ক্লাব এ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ ও রিয়াল মাদ্রিদ। আর ইউরোপা লীগের শিরোপা জয় করে সেভিয়া। অর্থাৎ সাব্র্কি বিচারে অল-ইউরোপিয়ান আসরে ইংল্যান্ড ও স্পেনের ক্লাবগুলোর ধারে কাছে নেই অন্য কোন দেশ। এবার স্প্যানিশ ক্লাবগুলোর সাফল্য ছাপিয়ে গেছে চার ইংলিশ জায়ান্ট। ইংল্যান্ডের ফুটবলের জন্য এরচেয়ে সুখের আর কি হতে পারে। তাদেরই চার ক্লাব লিভারপুল, টটেনহ্যাম হটস্পার, চেলসি ও আর্সেনাল চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ও ইউরোপা লীগের ফাইনালে উঠেছে। স্বাভাবিকভাবেই ইংলিশ ক্লাবগুলোর প্রশংসায় ব্যস্ত আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম। ইংল্যান্ডের সাবেকরা তো বটেই, অন্য দেশের কিংবদন্তিরাও ইংলিশ ক্লাবগুলোর প্রশংসায় ব্যতিব্যস্ত আছে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগেও এবার স্মরণকালের সবচেয়ে সেরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে। আর এতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ম্যানচেস্টার সিটি। রানার্সআপ হয়েও রেকর্ড গড়েছে লিভারপুল। এবারের মৌসুমটা তাই ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের ইতিহাসে সেরা কিনা সেই আলোচনাও চলছে। স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনকে প্রিমিয়ার লীগের সেরা কোচ বললেও ভুল কিছু বলা হবে না। ১৯৯২ সালে ইংল্যান্ডের প্রথম বিভাগের নাম ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ হওয়ার পর থেকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে ১৩টি লীগ শিরোপা জিতিয়েছেন এই স্কটিশ। এই ১৩ বারের মধ্যে ফার্গুসনকে লীগ জেতার জন্য সবচেয়ে ‘কষ্ট’ করতে হয়েছিল ১৯৯৯-০০ মৌসুমে, ২০ দলের লীগে সেবার ৯১ পয়েন্ট পেয়ে লিগ জিতেছিল তারা। এ ছাড়া ৭৯-৮০ পয়েন্ট নিয়েও লিগ জেতার নজির আছে ইউনাইটেডের। এসব উদাহরণ দেখে সবচেয়ে কষ্ট লাগবে লিভারপুল কোচ জার্গেন ক্লপের। ৭৯-৮০ পয়েন্ট তো বটেই, ৯৭ পয়েন্ট নিয়েও যে লিভারপুল লীগ জিততে পারেনি। কোন মৌসুমেই শিরোপা জেতার জন্য এত কষ্ট করতে হয়নি ফার্গুসনকে। এর পেছনের কারণ তারকা কোচ পেপ গার্ডিওলা। বেয়ার্নে মিউনিখ আর বার্সিলোনায় থাকার সময় যার সহকারী ম্যানুয়েল এস্তিয়ার্তে বলেছিলেন, লোকটাকে ফুটবলের বাইরে ৩২ মিনিটের বেশি রাখা যায় না। এটার একটা সুন্দর নামও দিয়েছিলেন এস্তিয়ার্তে ‘দ্য রুল অব ৩২ মিনিটস (৩২ মিনিটের বিধান)’। আপনি লোকটাকে ফুটবলের বাইরে টেনে এনে একট রেস্টুরেন্টে নিয়ে যান, বা কোনো একটা দাওয়াতে নিয়ে যান,ফুটবলকে ভুলে সর্বোচ্চ ৩২ মিনিট থাকতে পারবেন লোকটা। এর পরে তিনি ফিরে যাবেন নিজের ফুটবল জগতে। নিজের অবচেতন মনে ফুটবল নিয়ে ভাবা শুরু করবেন টাক মাথার সেই লোকটা। মনের গহীনে পর্যালোচনা করা শুরু করবেন প্রতিপক্ষের শক্তিমত্তা, নিজের খেলোয়াড়দের সর্বোচ্চ উপযোগিতা পাওয়ার উপায় নিয়ে। ম্যানচেস্টার সিটিতে নিজের সাম্রাজ্য গড়ে তোলার ব্যাপারে বদ্ধপরিকর গার্ডিওলা। গতবার ১০০ পয়েন্ট নিয়ে লীগ জেতার পরেও যার তৃষ্ণা একটুও কমেনি। ২০১১-১২ মৌসুমের শেষ ম্যাচের আগে সমান পয়েন্ট ছিল সিটি ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের। ৩৭ ম্যাচ শেষে ৮৬ পয়েন্ট ছিল দুই দলেরই। শেষ দিনে নিজ নিজ ঘরের মাঠে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড নেমেছিল স্যান্ডারল্যান্ডের বিপক্ষে, ম্যানচেস্টার সিটি নেমেছিল কুইন্স পার্ক রেঞ্জার্সের বিপক্ষে। দুই দলের পয়েন্ট সমান থাকলেও গোল ব্যবধানে এগিয়ে ছিল সিটি। ফলে নিজ নিজ ম্যাচ জিতলেও সিটির ঘরে শিরোপা যাওয়ার কথা। ওয়েন রুনির গোলে স্যান্ডারল্যান্ডকে হারিয়ে নিজেদের কাজটা ঠিক ঠিক করে রাখে ইউনাইটেড।
×