ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘শওকত ওসমানের লেখার মূল বিষয় ছিল মানুষ’

প্রকাশিত: ১১:২০, ১৫ মে ২০১৯

‘শওকত ওসমানের লেখার মূল বিষয় ছিল মানুষ’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলা সাহিত্যে শওকত ওসমান শুধু একটি নাম নয়। আপন সৃষ্টির ঐশ্বর্যে তিনি পরিণত হয়েছিলেন প্রতিষ্ঠানে। তিনি ছিলেন বাংলা সাহিত্যের এক অসাধারণ লেখক। হিউমার বা সাট্যায়ারধর্মীর রচনাশৈলীতে এই ভূখ-ে কেউ তাঁকে অতিক্রম করতে পারেননি। আর তার লেখার মূল বিষয় ছিল মানুষ। সেই মানুষ ও মানবতাবাদ নিয়েই কেটেছে তার সৃজনশীল ভুবন। মহৎ এই মানুষটির সঙ্গে ছিল তরুণ লেখকদের দারুণ সখ্য। বঙ্গবন্ধুর মতো ব্যবহারের পাশাপাশি লেখালেখির ক্ষেত্রে তরুণ লেখকদের নানাভাবে প্রেরণা যোগাতেন। সমাজতন্ত্রী চিন্তাধারায় বিশ্বাসী এই মানুষটির কাছে মানবতাই ছিল জীবনের সবচেয়ে বড় আদর্শবোধ। তাই তার চেতনাকে ধারণ করে আপন মাটির প্রতি ঋণ পরিশোধে দায়িত্ব পালন করতে হবে সবাইকে। এভাবেই সমাজমনস্ক কালজয়ী লেখক শওকত ওসমানের মূল্যায়ন করলেন লেখক, গবেষক ও ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক। মঙ্গলবার শওকত ওসমানের ২১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় তিনি এসব কথা বলেন। শওকত ওসমানের প্রয়াণবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণানুষ্ঠানের আয়োজন করে কথাশিল্পী শওকত ওসমান স্মৃতি পরিষদ। সকালে জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল পরিষদের সভাপতি ভাষা সংগ্রামী ডাঃ আহমদ রফিকের সভাপতিত্বে পিতৃস্মৃতিচারণ করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। শওকত ওসমানের বর্ণিল জীবন নিয়ে কথা বলেন জাতীয় কারিকুলাম ও টেক্সট বুক বোর্ডের (এনসিটিবি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক কফিল উদ্দিন আহাম্মদ, এনসিটিবির সদস্য অধ্যাপক রতন সিদ্দিকী, গণগ্রন্থাগার অধিদফতরের মহাপরিচালক আবদুল মান্নান ইলিয়াস। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক দিপু সিদ্দিকী। পিতাকে নিয়ে স্মৃতিচারণে ইয়াফেস ওসমান বলেন, লেখালেখি ও শিক্ষকতার বাইরে এসরাজ বাজাতে পছন্দ করতেন বাবা। প্রতিদিন সকালবেলায় নিয়ম করে সেটা বাজাতেন। আমাকেও তার সঙ্গে গাইতে হতো। বাবার খুব পছন্দের ছিল ‘তুমি নির্মল কর মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে’ গানটি। আমার মনে হয়েছে, তিনি নিজেকে শুদ্ধা রাখার জন্যই এ গানটি গাইতেন। শুদ্ধ মানুষ হিসেবে বাঁচতে হলে নিজেকে অনেক কিছু থেকে সরিয়ে রাখতে হয়। বাবা সেটা পেরেছিলেন। একজন লেখক হিসেবে এই মাটি যে কতটা খাঁটি সেটা তিনি যথার্থভাবে উপলব্ধি করেছিলেন। তিনি ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন বাংলার মাটি তৈরি হয়েছে জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার জন্য। তাই তিনি যা কিছু লিখেছেন সবটাই মানুষের জন্য। মানবতার জন্য উৎসর্গ করেছিলেন জীবনকে। লোভ-লালসা ছাড়া যে মানুষ হয়, সেটা শওকত ওসমানকে না দেখলে জানা হতো না। এই মাটিতে এ রকম মানুষ আরও আছেন। আমরা তাদের চিনতে পারি না। নিজেদের ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থেই তার মতো মানুষকে নিয়ে আমাদের আলোচনা করতে হবে। অন্য বক্তারা বলেন, শরীরীভাবে না থেকেও কর্মের মাঝেই মাঝে বেঁচে থাকবেন শওকত ওসমান। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাতিঘর। দেশ ও দেশের মানুষই ছিল তার সৃষ্টিশীলতার মূল উৎস। এ কারণে দেশের অবস্থা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এক রচনায় শওকত ওসমান লিখেছিলেন, সামাজিক সম্পদের বদলে বেড়েছে ব্যক্তির বৈভব। বৈভবে ঠেস দিয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রকে বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছে ব্যক্তি। ব্যক্তিগত সম্পদ গড়ার নেশাগ্রস্ততা মানুষকে তার চারপাশের জনমানুষ সম্পর্কে একেবারে নির্বিকার করে ফেলল। সবারই যে মানোন্নায়ন ঘটতে পারে, শেষ পর্যন্ত এই বোধটিই অননুভূত রয়ে গেল।
×