ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রাস্তায় রাস্তায় চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি পুলিশের

প্রকাশিত: ১১:০৮, ১৫ মে ২০১৯

রাস্তায় রাস্তায় চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি পুলিশের

শংকর কুমার দে ॥ রমজান উপলক্ষে রাস্তায় রাস্তায় চাঁদাবাজি বন্ধে কঠোর নির্দেশ দিয়ে মনিটরিং করছে সরকার। সারাদেশের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদেরকে এই ধরনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বা পুলিশের কেউ যদি রাস্তায় রাস্তায় চাঁদাবাজি করে এবং তা প্রমাণিত হয় তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে পুলিশ সদর দফতর। পণ্যমূল্য বৃদ্ধি বন্ধ করতে রাস্তায় রাস্তায় চাঁদাবাজি বন্ধে রমজানের শুরুতেই এই ধরনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এবারের রমজান মাসে রাস্তায় রাস্তায় চাঁদাবাজি বন্ধে কঠোর হুঁশিয়ারির পর পণ্যমূল্য বিশেষ করে কাঁচাবাজারে শাক, সবজি জাতীয় পণ্যের বাজার স্মৃতিশীল আছে, যা মূল্য বৃদ্ধি হতে পারেনি বলে পুলিশ কর্মকর্তাদের দাবি। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এ খবর জানা গেছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছরই রমজান শুরু হলে ব্যবসায়ী ও পণ্য পরিবহনের সঙ্গে জড়িত মালিক-শ্রমিকদের অভিযোগ থাকে রাস্তায় রাস্তায় চাঁদাবাজি, তোলাবাজি দিতে হচ্ছে। তাই ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে এ চাঁদার টাকা উঠিয়ে নিচ্ছে, যা শেষ পর্যন্ত ভোক্তার ঘাড়ে গিয়ে চাপছে। কিন্তু এবার সেই ধরনের অভিযোগ এখনও পাওয়া যায়নি বলে পুলিশ সদর দফতরের দাবি। রমজানে মূল্য বৃদ্ধি বন্ধ করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে সরকার। রাস্তায় ট্রাকে চাঁদাবাজির কারণেও পণ্যের মূল্য বেড়ে যায়। তাই রাস্তায় যে কোন ধরনের চাঁদাবাজি যাতে না হয় প্রয়োজনে সরকার মনিটরিং করছে। পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রতিবছরই রমজান মাস এলে পুলিশের বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ রাস্তায় রাস্তায় পণ্যবাহী ট্রাকে চাঁদাবাজি করছে। এ জন্য এবার রমজানের শুরুতেই এটা বন্ধ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রতিটি পয়েন্টে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হবে। চাঁদাবাজির জন্য মানুষকে বেশি টাকা দিয়ে পণ্য ক্রয় করতে হবে এটা মেনে নেয়া যায় না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। চাঁদাবাজি ঠেকাতে থানা, পুলিশ, এসপি লেভেল ছাড়াও প্রয়োজনে কল সেন্টার করে দেয়া হবে। যাতে যে কেউ চাঁদাবাজির বিষয়ে জানাতে পারে। আর সেভাবে ব্যবস্থা নেয়া যায়। ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা বলেছেন, পণ্য পরিবহনে পুলিশের বেপরোয়া চাঁদাবাজি আগের মতোই রয়েছে। এর ওপর ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের চাঁদা মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে এ চাঁদার টাকা উঠিয়ে নিচ্ছে। যা শেষ পর্যন্ত ভোক্তার ঘাড়ে গিয়ে চাপছে। কিন্তু প্রকাশ্যে তা অভিযোগও করা যাচ্ছে না। অভিযোগ করলে আরও বিপদ। তাই চাঁদাবাজির হিস্যাটা মিটানো হচ্ছে গোপনে। তবে এখনও রমজানের শুরু, শেষটায় ঈদ পর্যন্ত ভালোয় ভালোয় শেষ হলেই হলো। রাজধানীর পাইকারি কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ীদের জিজ্ঞেস করলেই তারা অভিযোগ করেন, রংপুর বা বগুড়ায় যে সবজির দাম ১০ টাকা কেজি, তা ঢাকায় এসে দাম বেড়ে হয়ে যায় ৪০ টাকা কেজি। বিক্রেতাদের প্রশ্ন করলে তারা বলে, পথে পথে চাঁদাবাজি হয়। এই চাঁদাবাজির জন্য আর ভোগ্য পণ্যের দাম বাড়ার কোন সুযোগ বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশ ট্রাক ও কভার্ডভ্যান মালিক সমিতি সূত্রে অভিযোগ করা হয়েছে, সড়ক বা মহাসড়কে পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল করতে এক-একটি স্পটে আগের মতোই ৫০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হচ্ছে। এই চাঁদা যেমন হাইওয়ে পুলিশ নেয়, তেমনি মালিক ও শ্রমিক সমিতির নামেও আদায় করা হয়। তাই ডিসি-এসপিদের এ ব্যাপারে সতর্ক করে বাস্তবিক অর্থে কোন লাভ হচ্ছে না। বরং এতে হয়রানি উল্টো বেড়েছে বলে দাবি করেন ওই নেতা। পণ্য পরিবহনের সঙ্গে জড়িত মালিক-শ্রমিকরা বলেছেন, পণ্য পরিবহনে চাঁদাবাজি আগের বছরগুলোর মতো নেই, এটা সত্য। তবে চাঁদাবাজি নেই এটাও সত্য নয়। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে চাঁদাবাজি বাড়ছে। চাঁদাবাজিতে রাজধানী হিসেবে পরিচিত বগুড়ার স্থান। এ শহরের ওপর দিয়েই উত্তরাঞ্চলের ১৬টি জেলায় প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার যানবাহন চলাচল করে। উত্তরাঞ্চলের বিশাল শস্যভা-ার থেকে সারাদেশে বিভিন্ন ধরনের পণ্য পরিবহন করা হয়। অথচ সেখানকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা নিলে মূল্য বৃদ্ধি রোধে সুফল বয়ে আনতে পারে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রমজানের শুরুতেই বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষদের নিয়ে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যেসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তার মধ্যে বাজার মনিটরিং অন্যতম। এরপর আছে পণ্যের মূল্য তালিকা তৈরি। অথচ বাজার নিয়ে সরকারের একাধিক সংস্থা কাজ করলেও একটির সঙ্গে অন্যটির কোন সমন্বয় নেই। ফলে বাজার মূল্য তদারকির ক্ষেত্রে সরকারের নীতিনির্ধারণী বিষয়গুলোর ওপর প্রভাব পড়ছে না। এ কারণে বাজারের বাস্তব অবস্থার সঙ্গে সরকারী তথ্যের কোন মিল থাকছে না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী প্রতিটি বাজারে পণ্যের মূল্য তালিকা টাঙানোর কথা থাকলেও অধিকাংশ বাজার কমিটি তা মানছে না। কোন কোন বাজারে মূল্য তালিকার সাইনবোর্ড থাকলেও তা নিয়মিত লেখা হচ্ছে না। আবার বেশকিছু বাজারের মূল্য তালিকা টাঙানোর সাইনবোর্ড বেশ আগেই উধাও হয়ে গেছে। এছাড়া অধিকাংশ বাজারেই মূল্য তালিকার চেয়ে বেশি দরে জিনিসপত্র দেদার বিক্রি হচ্ছে। অথচ মনিটরিং কমিটি বাজারে ঢোকামাত্র তারা ভোল পাল্টে ফেলছে। ফলে এ তদারকির বরাবরই ফল শূন্যই থাকছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, চাহিদার তুলনায় নিত্যপণ্যের মজুদ অনেক বেশি। তাই এবারের রমজানে পণ্যের দাম বাড়বে না। পণ্য আনা-নেয়ার রাস্তায় যেন কোন ধরনের চাঁদাবাজি না হয় সে জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া মনিটরিংয়ের সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। রমজানকে কেন্দ্র করে কেউ সুযোগ নিচ্ছে কি না সে বিষয়টি নজরে রাখা হচ্ছে। রমজানকে পুঁজি করে নিত্যপণ্যের দাম যাতে না বাড়ে সে ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনা আছে।
×