ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জাহালম বিষয়ে কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে দুদকের আবেদন আপীলে খারিজ

প্রকাশিত: ১০:২৪, ১৪ মে ২০১৯

 জাহালম বিষয়ে কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে দুদকের  আবেদন আপীলে খারিজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিনাদোষে তিন বছর জেলখাটা জাহালমের বিষয়ে জারি রুল শুনানিসহ সকল কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছে আপীল বিভাগ। এর ফলে জাহালমকে নিয়ে জারি করা রুল শুনানিতে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপীল বেঞ্চ সোমবার এ আদেশ দেন। এ সময় দুদকের পক্ষে ছিলেন এ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান, জাহালামের পক্ষে এ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন ও অমিত দাসগুপ্ত। এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ। এদিকে শুনানির এক পর্যায়ে দুদকের কাজ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খানের উদ্দেশে বলেন, দুদকের আইনজীবী হিসেবে কাজ করছেন। আপনারা কোর্টের বিরুদ্ধে মামলা করেন। আপনারা কি হস্তক্ষেপ করছেন? শুনানিতে জাহালামের আইনজীবী আমিন উদ্দিন বলেন, একজন মিলের শ্রমিক ১৮ কোটি টাকা লোন নিয়েছেন। তাকে সাড়ে তিন বছর জেলে রাখা হয়েছে। এর ক্ষতিপূরণ কে দেবে। এ্যাডভোকেট অমিত দাসগুপ্ত শুনানির পর সাংবাদিকদের বলেন, দুদকের আবেদন খারিজ হওয়ায় হাইকোর্টে বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত সে রুল দিয়েছিল, সেই বেঞ্চে মামলার কার্যক্রম চলবে। শুনানির জন্য শীঘ্রই হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে আবেদন করা হবে। ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, নিরপরাধ পাট শ্রমিক জাহালমের কারাভোগ নিয়ে হাইকোর্ট যে বেঞ্চে স্বতঃপ্রণোদিত রুল জারি করেছিলেন, ওই বেঞ্চে এই মামলার কার্যক্রম চলবে। জাহালমের মামলা শুনতে হাইকোর্টের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলে আপীল আবেদন করলে গত ২৩ এপ্রিল মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে শুনানির জন্য পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেয়। ২৬ মামলায় জাহালমকে আসামি করার পেছনে কারা দায়ী তা জানতে চেয়ে দুদককে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়। বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ। একই সঙ্গে দুদকের করা ৩৩ মামলার নথি ও দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়। এ অবস্থায় গত ২১ এপ্রিল জাহালম সংক্রান্ত মামলার রুল শুনানির সকল কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে আবেদন করে দুদক। গত ২ ফেব্রুয়ারি ২৬ মামলায় ‘ভুল’ আসামি জেলে : ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক নাÑ শিরোনামে একটি জাতীয় দৈনিকে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। গত ৩ ফেব্রুয়ারি জাহালমকে ২৬ মামলায় অব্যাহতি দেয় হাইকোর্ট। তবে তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া আরও সাত মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল না হওয়ায় ওসব মামলা থেকে তার অব্যাহতির বিষয়ে কোন আদেশ দেননি আদালত। ফলে কারামুক্তি পান জাহালম। উল্লেখ্য , গত ২৮ জানুয়ারি ২৬ মামলায় ‘ভুল’ আসামি জেলে থাকার অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি ও মামলার বাদীসহ চার জনকে তলব করেছিল হাইকোর্ট। দুদক চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি, মামলার বাদী, স্বরাষ্ট্র সচিবের একজন প্রতিনিধি ও আইন সচিবের একজন প্রতিনিধিকে উপস্থিত থেকে এ ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। হাইকোর্টের নির্দেশের পরপরই গত ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে মুক্তি পেয়ে নিজ গ্রামে ফেরেন জাহালম। সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগে আবু সালেকের বিরুদ্ধে ৩৩ মামলা হয়। এর মধ্যে ছাব্বিশটিতে জাহালমকে আসামি আবু সালেক হিসিবে চিহ্নিত করে চার্জশীট দেয় দুদক। চিঠি পাওয়ার পর দুদক কার্যালয়ে হাজির হয়ে পাঁচ বছর আগে জাহালম বলেছিলেন, তিনি সালেক নন। কিন্তু নিরীহ পাটকল শ্রমিক জাহালমের কথা সেদিন দুদকের কেউ বিশ্বাস করেনি। ’১৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি দুদকের এসব মামলায় জাহালম গ্রেফতার হন। তিনি জেল খাটছেন, আদালতে হাজিরা দিয়ে চলেছেন। গত ৩০ জানুয়ারি একটি জাতীয় দৈনিকে ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না’ শীর্ষক একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। রিপোর্টটি ওদিনই হাইকোর্ট বেঞ্চের নজরে আনেন সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী অমিত দাশগুপ্ত।
×