ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

চলে গেলেন কবি হায়াৎ সাইফ

প্রকাশিত: ১০:২১, ১৪ মে ২০১৯

 চলে গেলেন  কবি হায়াৎ সাইফ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিলেন একুশে পদকজয়ী কবি হায়াৎ সাইফ। রবিবার রাত বারোটা পাঁচ মিনিটে তিনি রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে মারা যান (ইন্নালিল্লাহি...রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। তিনি রেখে গেছেন স্ত্রী তাহমিনা ইসলাম এবং তিন ছেলে জিসান সাইফ, মেহরান সাইফ ও মেহরাব সাইফসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন শুভাকাক্সক্ষী। হায়াৎ সাইফের ছেলে মেহরান সাইফ জনকণ্ঠকে জানান, আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় প্রথমে স্কাউট ভবনে নিয়ে যাওয়া হবে কবির মরদেহ। সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সকাল ১১টা থেকে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনে কবির মরদেহ নেয়া হবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। এরপর বাদ জোহর গুলশানের আজাদ মসজিদে জানাজা শেষে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করা হবে কবিকে। ১৯৪২ সালে ঢাকায় জন্ম হায়াৎ সাইফের। সাইফুল ইসলাম খান যিনি সাহিত্যাঙ্গনে হায়াৎ সাইফ নামেই পরিচিত ছিলেন। গত শতকের ষাটের দশক থেকে লেখালেখির মাধ্যমে সাহিত্য ভুবনে হায়াৎ সাইফের প্রবেশ। ১৯৬২ সালে তার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় তৎকালীন সমকালে। ১৯৮৩ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘সন্ত্রাসে সহবাস’। তার ১৫টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে যার মধ্যে কবিতার সঙ্কলন আটটি এবং প্রবন্ধ সঙ্কলন দুটি। এছাড়া বিভিন্ন সাময়িকীতে তার অসংখ্য লেখাসহ ইংরেজী ও স্প্যানিশ ভাষায়ও তার কাব্যগ্রন্থ রয়েছে। ১৯৯২ সালে তার লেখা সাহিত্যবিষয়ক সঙ্কলন গ্রন্থ ‘উক্তি ও উপলব্ধি’ প্রকাশিত হয়। ২০০৪ সালে মাহবুব তালুকদারের সঙ্গে যৌথভাবে বাংলাদেশের সমসাময়িক গদ্য নিয়ে একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। ২০০৯ সালে প্রকাশিত হয় তার ৭৫টি কবিতার সঙ্কলন ‘প্রধানত স্মৃতি এবং মানুষের পথচলা’। ১৯৯৮ সালে দিব্য প্রকাশ থেকে ফয়জুল লতিফ চৌধুরীর সম্পাদনায় ‘ভয়েস অব হায়াৎ সাইফ’ নামে একটি ইংরেজীতে অনূদিত কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়, এতে সঙ্কলিত হয়েছে ৪৫টি কবিতা। ২০০১ সালে পাঠক সমাবেশ থেকে বের হয় ‘হায়াৎ সাইফ : সিলেক্টেড পয়েমস’। এই কবির আলোচিত কাবগ্রন্থগুলো হলোÑ সব ফেলে দিয়ে, প্রধানত মাটি ও মানুষ, এপিঠ ওপিঠ, হায়াৎ সাইফের কবিতা, হায়াৎ সাইফের প্রেমের কবিতা ও রসুন বোনার ইতিকথা। এই লেখকের গবেষণাগ্রন্থ ‘সংরক্ষণবাদ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও শুল্ক ব্যবস্থাপনা’ তার মেধা ও মননের সাক্ষ্য বহন করে। সাহিত্যে অবদানের জন্য কবি হায়াৎ সাইফ ২০১৮ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন। লেখালেখির পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশ স্কাউটসের সাবেক জাতীয় কমিশনার (জনসংযোগ ও প্রকাশনা) এবং আন্তর্জাতিক ইউনিয়ন অব মুসলিম স্কাউটসের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া স্কাউটিংয়ে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি বিশ্ব স্কাউট সংস্থার সর্বোচ্চ এ্যাওয়ার্ড ‘ব্রোঞ্জ উলফ’ এবং বাংলাদেশে স্কাউটসের সর্বোচ্চ এ্যাওয়ার্ড ‘রৌপ্য ব্যাঘ্র’ অর্জন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজী সাহিত্যে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা হায়াৎ সাইফ কর্মজীবনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য ও পরে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছিলেন।
×