ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভেজালবিরোধী অভিযান

উত্তরার কাঁচাবাজারে মেয়র, কয়েক দোকানির ভোঁ দৌড়

প্রকাশিত: ১০:২০, ১৪ মে ২০১৯

  উত্তরার কাঁচাবাজারে মেয়র, কয়েক  দোকানির ভোঁ দৌড়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর কাঁচাবাজারে ভেজালবিরোধী অভিযান আরও জোরদার করা হয়েছে। ঢাকার মেয়র আতিকুল ইসলাম নিজে আবারও ছুটে গেলেন বাজার পরিদর্শনে। মোহাম্মাদপুর, মহাখালীর পর গতকাল সোমবার উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টরের কাঁচাবাজার আকস্মিক পরিদর্শন করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। তাকে দেখে অনেক দোকানি ভোঁ দৌড়। সেই দৃশ্য দেখে মেয়রও অবাক। তবে তার উপস্থিতিতে পাল্টে যায় বাজারের চিত্র। এ ছাড়া রাজধানীর কয়েকটি স্থানে অভিযান চালিয়ে জেল-জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। উত্তরায় গিয়ে দেখা যায়- প্লাস্টিকের পর্দা দিয়ে হঠাৎ উধাও বাজারের বেশিরভাগ মুদি দোকানি। লাখ লাখ টাকার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য এক রকম ‘আল্লাহর নামে’ ফেলে চলে গেছেন তারা। দোকানে উঁকি মেরে পাওয়া গেলো না কাউকে, ডেকেও মিলল না সাড়া। উত্তরায় বিডিআর কাঁচাবাজারে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম ঝটিকা অভিযানে গেলে বাজারের চিত্র এভাবে পাল্টে যায়। বেলা পৌনে ১২টার দিকে রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল এ্যান্ড কলেজের সামনের এ বাজারটিতে মেয়রের নেতৃত্বে প্রবেশ করে ডিএনসিসির বাজার পরিদর্শন দল। মাছ ও মাংসের দোকানগুলো পেরিয়ে মুদি দোকানের দিকে যেতেই বন্ধ পাওয়া যায় বেশিরভাগ দোকান। দু’একটি দোকান ছাড়া বাকি দোকানের দোকানিরা যেন ভোজবাজির মতো একসঙ্গে গায়েব হয়ে গেছেন। এমনকি পর্দাগুলো রশি দিয়ে বাঁধারও সময় পাননি দোকানিরা। কিছু দোকানের পর্দা সরিয়ে দেখা যায়, পেঁয়াজ, আলু, বিভিন্ন ধরনের মসলা, সেমাই, খেজুরসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য পড়ে আছে সেখানে। দোকানের অবস্থা দেখলেই পরিষ্কার বোঝা যায়, বাজার অভিযানের দল থেকে বাঁচতে দোকানিরা যে-যেভাবে ছিল সেভাবেই দোকান ফেলে চলে গেছে। এসময় বেশিরভাগ দোকানেই দেখা যায়, কোন ধরনের লেবেল ছাড়াই বিক্রির জন্য মজুদ রাখা হয়েছে সেমাই, বাদাম, খেজুর, গুঁড়া মসলাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি। এসময় অন্তত তিনটি দোকান সিলগালা করে দেয়ার নির্দেশ দেন ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম। বাজার পরিদর্শন শেষে এক ব্রিফিংয়ে মেয়র আতিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে প্রায়ই আমরা এভাবে ঝটিকা অভিযানে বের হচ্ছি। আজ বাজারের অবস্থা দেখলাম তাতে আমরা বেশ সন্তুষ্ট। তবে কিছু কিছু ব্যবসায়ী নিয়ম মানছেন না। আমরা সেসব কর্মকা-ের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি। বাজার অভিযান দলের উপস্থিতি আর অনুপস্থিতির মধ্যে পণ্যের দামের হেরফের বিষয়টি স্বীকার করে আতিকুল ইসলাম বলেন, কিছু দোকানে কাঁচামরিচের দাম ৬০ টাকা, কোথাও ৮০ টাকা। কিন্তু আমরা সিদ্ধান্ত জানিয়েছি যে কাঁচামরিচ ৪২ টাকায় বিক্রি হবে। আমরা থাকলে এক ধরনের দাম, না থাকলে আরেক ধরনের দাম। কিন্তু নিয়ম হচ্ছে, আমরা যে মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছি তার বাইরে কেউ পণ্যের দাম বাড়াতে পারবে না। এমনটা যারা করছেন তাদের আমরা ফাইন করছি। ইতোমধ্যে তিনটি দোকান সিলগালা করেছি এবং কয়েক ব্যবসায়ীকে আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে। একটি দোকানে লেবেলছাড়া ঘি বিক্রির জন্য ৫০ হাজার টাকা, আরেকটিতে লেবেলছাড়া খেজুর বিক্রির অপরাধে ২৫ হাজার টাকা এবং কাঁচামরিচের দোকানিকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তবে আমাদের দেখে দোকানিরা পালিয়ে যাচ্ছেন। কর্তৃপক্ষের বার বার নির্দেশ ও অনুরোধের পরও ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বেশি নিচ্ছেন- এমন সত্যতা সরেজমিনে পেয়েছেন বলে স্বীকার করেন ডিএনসিসি মেয়র। এরজন্য ক্রেতাসাধারণকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। কোন বাজারে কোন ব্যবসায়ী নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করলে তা সিটি কর্পোরেশনকে জানানোর আহ্বান জানান তিনি। এদিকে মূল্য তালিকা না টাঙানোয় রাজধানীর কাওরানবাজার ও খিলগাঁওয়ে ১১টি প্রতিষ্ঠানকে ৪৪ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সোমবার অভিযান চালিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো-খিলগাঁও রেলগেট বাজারের সিরাজ ফ্রুট স্টোর-১, সিরাজ ফ্রুট স্টোর-২, কাওরান বাজারের পেঁয়াজ, মরিচ, রসুন, আদার পাইকারি বাজারের মোলার আড়ত, আলালের পেঁয়াজের আড়ত, এস কে এন্টারপ্রাইজ, কিচেন মার্কেটের বিসমিল্লাহ ট্রেডার্স, নিউ মানিক জেনারেল স্টোর, নোয়াখালী ভান্ডার, মকবুল স্টোর, রহমত এ্যান্ড সন্স ও রূপালি ট্রেডার্স। অভিযান পরিচালনা করেন ঢাকা জেলা অফিসের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার ম-ল ও ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আফরোজা রহমান। তারা বলেন-আজকে খিলগাঁও রেলগেট বাজারে ফলের দোকান, কাওরানবাজারের পেঁয়াজ, মরিচ, রসুন,আদার পাইকারি বাজারে এবং কিচেন মার্কেটের ছোলা, চিনি, তেল, ডালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের পাইকারি বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় মূল্য তালিকা না টাঙানোয় দুই বাজারের ১১টি প্রতিষ্ঠানকে ৪৪ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্ক করা হয়েছে। পরবর্তীতে পণ্যের নির্ধারিত মূল্য তালিকা টাঙিয়ে না রাখলে বড় অঙ্কের জরিমানা করা হবে। ্এ সম্পর্কে আব্দুল জব্বার বলেন, ব্যবসা করতে হলে আইন মানতে হবে। ক্রেতারা সহজে দেখতে পায় এমন জায়গায় মূল্য তালিকা টাঙিয়ে রাখতে হবে। মূল্য তালিকা না থাকলেই গুনতে হবে জরিমানা। এছাড়া বাসি মাংস দিয়ে খাবার তৈরি ও ফ্রিজে রান্না করা মাংসের সঙ্গে কাঁচা মাংস রাখার অপরাধে রাজধানীর কাপ্তানবাজারের প্রিন্স রেস্তরাঁকেও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
×