ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদ বাজার

প্রকাশিত: ০৮:৫৫, ১৪ মে ২০১৯

ঈদ বাজার

পবিত্র মাহে রমজানের শুরু হতে না হতেই অন্তত রাজধানীতে জমে উঠেছে ঈদ-উল-ফিতরের বাজার। প্রকৃতপক্ষে শব-ই- বরাতের পর থেকেই দেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা ভিড় জমাতে শুরু করেছেন ঢাকায়। দর্জিপাড়াগুলো এখন দিন-রাত জমজমাট, দম ফেলার ফুরসত নেই। নতুন অর্ডার নেয়া প্রায় বন্ধ। এর পাশাপাশি মধ্যবিত্ত ও নিম্ন বিত্তরা মাসের প্রথমে বেতন হাতে পেয়েই প্রায় প্রতিদিন ছুটছেন ছোট-বড় কাপড়-চোপড়ের দোকানে। নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী সুপারশপ, সুপারমলে। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের আলো ঝলমলে সুপরিসর স্ক্রিনে প্রতিদিনই সম্প্রচারিত হচ্ছে ঈদের জমজমাট বেচা-কেনা ও হাল ফ্যাশনের খবরাখবর, যা শাড়ি-থ্রী পিস থেকে শুরু করে জামা-জুতা, এমনকি চুড়ি-গয়নাও বাদ যাচ্ছে না। গ্রীষ্মের প্রচ- দাবদাহ পর্যন্ত দমাতে পারছে না, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের আনন্দোচ্ছল কেনাকাটার প্রবল আগ্রহ। উল্লেখ্য, এবারে ঘূর্ণিঝড় ফণীর ভ্রুকুটি সত্ত্বেও ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় চাষীরা খুশি। খুশি সাধারণ মানুষও নিত্যপণ্যের দাম নাগালের মধ্যে থাকায়। এর পাশাপাশি বেতন বৃদ্ধির সঙ্গে বাড়তি বোনাস তো আছেই। সব মিলিয়ে আন্দন সংবাদ হলো ঈদ আসছে। ঈদকে ঘিরে ক্রমশ চাঙ্গা হয়ে উঠছে দেশের অর্থনীতি। জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও এর অবদান কম নয়। আরও যা আশার কথা, এর পরিমাণ বাড়ছে দিন দিন। অবশ্য বিষয়টি যে একেবারে নতুন তা নয়। হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে বাঙালীর জীবনে দৈনন্দিন অর্থনীতির চাকা সচল হয়ে ওঠে প্রধানত যে কোন ধর্মীয় অথবা সাংস্কৃতিক উৎসবকে ঘিরে। এই যেমন ঈদ, পূজা, বাংলা নববর্ষ, স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ইত্যাদি। তবে তা সবচেয়ে সরব ও স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে ওঠে প্রধানত ঈদ-উল-ফিতর এবং ঈদ-উল-আজহাকে ঘিরে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে দুর্গাপূজা উপলক্ষে। তবে সবার ওপরে রয়েছে ঈদ-উল-ফিতর, অন্তত বাংলাদেশে। এক সময় ঈদের অন্যতম অনুষঙ্গ ছিল নতুন জামা, নতুন জুতা। বঙ্গললনার ক্ষেত্রে তা ছিল শাড়ি। তবে এখন যুগ ও সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চাহিদা এবং রুচি বদলেছে। এসেছে ফ্যাশনদুরস্ত কাপড়-চোপড়, মেয়েদের সালোয়ার কামিজ, বাহারি শাড়ি ও হিজাব, রকমারি জুতা, প্রসাধন সামগ্রী, গহনা ইত্যাদি। মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেরাও আজকাল সর্বদাই হাল ফ্যাশনের অনুষঙ্গ খোঁজে পোশাক-পরিচ্ছদের ক্ষেত্রে, এমনকি শিশুরাও বাদ যায় না। আর এ তো শুধু পোশাক-পরিচ্ছদে সীমাবদ্ধ নেই, একই সঙ্গে চাই ঘরের সাজসজ্জা, আসবাবপত্র, টিভি, ফ্রিজ, এসি, এমনকি হাল মডেলের গাড়ি পর্যন্ত। মানুষ এখন রীতিমতো আধুনিক ও কেতাদুরস্ত হয়ে উঠেছে। এত বিপুল ব্যয় ও অর্থ খরচের পেছনে মূল নিয়ামক হিসেবে যেটি কাজ করেছে তা হলো ইতোমধ্যে মানুষের আয়-উপার্জন বেড়েছে বহুগুণ। সরকারী, আধা সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, উৎসব ভাতা বেড়েছে। বেড়েছে প্রবাসী আয়। জাতীয় প্রবৃদ্ধির হারও যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক, সাত শতাংশের ওপরে। বেড়েছে মাথাপিছু আয়। দেশ এখন স্বল্প আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার পথে ধাবমান। ছোট-বড় ব্যবসা-বাণিজ্যও বেড়েছে বহুগুণ। মানুষের মধ্যে জেগেছে কর্মস্পৃহা। সে এখন আয়-উপার্জন বাড়াতে ইচ্ছুক। এসবই যুক্ত হচ্ছে জাতীয় উৎসবের অর্থনীতিতে। ফলে শহরের অর্থনীতির পাশাপাশি চাঙ্গা হচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতিও। জমজমাট ঈদের বাজারে এরই সুবাতাস প্রবহমান।
×