ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

নাশকতায় দুটি জাহাজের মারাত্মক ক্ষতি ॥ কেউ হতাহত হয়নি, হুমকির মুখে বৈশ্বিক তেল সরবরাহ

সৌদি ট্যাঙ্কারে হামলা

প্রকাশিত: ০৮:৪৮, ১৪ মে ২০১৯

সৌদি ট্যাঙ্কারে হামলা

নাশকতামূলক হামলায় সৌদি আরবের দুটি তেলবাহী জাহাজের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আরব আমিরাতের ফুজাইরাহ উপকূলে জাহাজ দুটিতে নাশকতামূলক হামলা চালানো হয় বলে জানান সৌদি জ্বালানিমন্ত্রী খালিদ আল-ফলিহ। এ ঘটনার ফলে বৈশ্বিক তেল সরবরাহের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র সতর্ক করেছিল যে, এ অঞ্চলের সমুদ্রপথে চলাচলকারী জাহাজ ইরান ও এর প্রতিনিধিত্বকারীদের হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হতে পারে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র পারস্য উপসাগরে একটি বিমানবাহী রণতরী স্ট্রাইক গ্রুপ ও বি-৫২ বোমারু বিমান পাঠায়। সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা এসপিএ জানায়, দুটি জাহাজের মধ্যে একটি যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাদের জন্য সৌদি আরবের অপরিশোধিত তেল বোঝাই করতে রাস তানুরা বন্দরে যাচ্ছিল। সোমবার সৌদি জ্বালানিমন্ত্রী খালিদ আল-ফলিহ বলেন, হামলায় কেউ হতাহত হয়নি বা তেল ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু জাহাজ দুটির অবকাঠামোর মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। রবিবার আরব আমিরাতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, তাদের সমুদ্র উপকূলের কাছে চারটি বাণিজ্যিক জাহাজকে ‘নাশকতামূলক হামলার’ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়। তবে কি ধরনের নাশকতা চালানো হয়েছে সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি তারা। এর কয়েক ঘণ্টা পর ইরান ও লেবাননের সংবাদমাধ্যমগুলো কাছের আমিরাতের বন্দরে বিস্ফোরণের ভুয়া খবর প্রচার করে। তবে এটা নিশ্চিত নয় যে, সৌদি আরব ও আরব আমিরাত যে জাহাজের কথা উল্লেখ করছে তা একই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত কী না। ইরান ও বিশ্বশক্তিগুলোর মধ্যে ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তি থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিলে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেতে থাকে। যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর পুনরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে দেশটির অর্থনীতি মারাত্মক সঙ্কটে পড়ে। গত সপ্তাহে ইরান হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে যে, বিশ্বশক্তিগুলো যদি চুক্তির জন্য নতুন শর্ত করতে আলোচনায় ব্যর্থ হয়, তবে আগামী ৬০ দিনের মধ্যে ব্যাপক মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচী চালু করবে তারা। আরব আমিরাতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতির পর ফুজাইরাহ বন্দরের পূর্বে ওমান উপসাগরে তাদের জলসীমায় বাণিজ্য জাহাজগুলো আশ্রয় নেয়। তারা জানায়, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতায় এ ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, হামলায় জাহাজের কেউ হতাহত হয়নি এবং জ্বালানি বা ক্ষতিকর রাসায়নিক ছড়িয়ে পড়েনি। এ অঞ্চলে নজরদারি করা মার্কিন নৌবাহিনীর পঞ্চম ফ্লিট তাৎক্ষণিকভাবে এ ঘটনার বিষয়ে কোন মন্তব্য করেনি। যেহেতু হামলার ঘটনাটির তদন্ত চলছে তাই এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন আরব আমিরাতের কর্মকর্তারা। এদিকে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সৈয়দ আব্বাস মুসাভি এ ঘটনাকে উদ্বেগজনক এবং ভয়াবহ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি হামলার ঘটনা তদন্তের আহ্বান জানান। রবিবার সকালে লেবাননের ইরানপন্থী স্যাটেলাইট চ্যানেল আল-মায়াদ্বীন ‘উপসাগরীয় সূত্রের’ বরাত দিয়ে ভুয়া সংবাদ প্রচার করে যে, ফুজাইরাহ বন্দরে ধারাবাহিক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় এবং আধা-সরকারী সংবাদমাধ্যমগুলো আল-মায়াদ্বীনের প্রতিবেদন প্রচার করে। পরে তারা জাহাজগুলোর নাম প্রকাশ করে। আমিরাতের কর্মকর্তা ও স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলার পর এ্যাসোসিয়েটেড প্রেস জানতে পারে বিস্ফোরণের বিষয়টি নিশ্চিত নয়। ফুজাইরাহ বন্দরটি হরমুজ প্রণালী থেকে প্রায় ৮৫ মাইল দূরে অবস্থিত। এই প্রণালী দিয়ে সমুদ্রপথে এক-তৃতীয়াংশ তেলের বাণিজ্য চলে। এটাকে কৌশলগতভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই পথেই তেলের সব সাধারণ জাহাজ ও বড় বড় জাহাজ পারস্য উপসাগর, ভারতীয় উপমহাদেশ ও আফ্রিকায় যাতায়াত করে। এই প্রণালীর সবচেয়ে সরু অংশটি প্রায় ৩০ মাইল চওড়া। এক বিবৃতিতে গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল এ ‘নাশকতামূলক হামলা’র নিন্দা জানিয়েছেন। কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল লতিফ বিন রশিদ আল-জায়ানি এ ঘটনাকে অশুভ ইচ্ছার বিপজ্জনক তৎপরতা বলে অভিহিত করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সমুদ্র চলাচল প্রশাসন বৃহস্পতিবার সতর্ক করে যে, বাণিজ্যিক সামুদ্রিক জাহাজগুলোকে হামলার লক্ষ্যবস্তু করতে পারে ইরান। এরপরই উল্লিখিত নাশকতামূলক হামলার ঘটনা ঘটল। ওই সতর্কতায় বলা হয়, মে মাসের প্রথম থেকে আশঙ্কা বাড়ছে যে, যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্রদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে পারে ইরান ও প্রতিনিধিত্বকারীরা। এর মধ্যে রয়েছে তেল উৎপাদন অবকাঠামোও। সম্প্রতি হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দেয় ইরান। সতর্কবার্তায় আরও উল্লেখ করা হয়, পারস্য উপসাগর, বাব-এল-মান্দেব প্রণালী ও লোহিত সাগরে মার্কিন সামরিক জাহাজ, বাণিজ্যিক জাহাজ ও তেলবাহী জাহাজে ইরান ও প্রতিনিধিত্বকারীরা হামলার মাধ্যমে জবাব দিতে পারে। এটা পরিষ্কার নয় যে, এই হুমকির কারণেই গত ৪ মে হোয়াইট হাউস বিমানবাহী রণতরী স্ট্রাইক গ্রুপ ইউএসএস আব্রাহাম লিঙ্কন বি-৫২ বোমারু বিমান পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে কি না।-গার্ডিয়ান ও সিএনএন
×