ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রুদ্ধশ্বাস জয়ে মুম্বাইর বাজিমাত

প্রকাশিত: ১৩:০৩, ১৩ মে ২০১৯

রুদ্ধশ্বাস জয়ে মুম্বাইর বাজিমাত

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগের (আইপিএল) ১২তম আসরে রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে মহেন্দ্র সিং ধোনির চেন্নাই সুপার কিংসকে ১ রানে হারিয়ে শিরোপা জিতল রোহিত শর্মার মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। হায়দরাবাদের রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে রবিবার টস জিতে ব্যাটিং নেয়া মুম্বাই নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৪৯ রান সংগ্রহ করে। জবাবে পরতে পরতে নাটকীয়তায় ভরপুর ইনিংসের শেষ বল পর্যন্ত খেলে ৭ উইকেটে ১৪৮-এ থামে চেন্নাই সুপার কিংস! শেষ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৯ রান। কিন্তু লাসিথ মালিঙ্গার করা ওভার থেকে ৭ রানের বেশি নিতে পারেনি তারা। হারিয়েছে দুর্দান্ত খেলতে থাকা শেন ওয়াটসন (৮০) ও শার্দূল ঠাকুরের (২) উইকেট! ওয়াটসন রানআউট হয়েছেন আর মালিঙ্গার উইকেট টেকিং শেষ ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ ঠাকুর!! হোয়াট এ গেম। ফাইনালটা হল ফাইনালেরই মতো। বাজিমাত করল মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। মুম্বাই এর আগে ২০১৩, ২০১৫, ২০১৭ সালে শিরোপা জিতেছিল, চেন্নাই ২০১০, ২০১১, ২০১৮-এ। অর্থাৎ এবার রেকর্ড সর্বোচ্চ চতুর্থবারের উড়ল মুম্বাইর পতাকা। আগের এগারো আসরের অন্য চ্যাম্পিয়ন দলগুলো হচ্ছে- রাজস্থান (২০০৮), ডেকান চার্জার্স (২০০৯), , কলকাতা (২০১২, ২০১৪), ও হায়দরাবাদ (২০১৬)। দশম ওভারের মধ্যে ১ উইকেটে ৭০ রান তুলে ফেরার পর মনে হচ্ছিল চেন্নাইর জয়টা সময়ের ব্যাপার। কিন্তু গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেট। ১৩ বলে ২৬ রান করে ফ্যাফ ডুপ্লেসিস আউট হওয়ার পর ওয়াটসন একপ্রান্ত আগলে রাখলেও অন্যপ্রান্ত নিয়মিত উইকেট হারিয়ে ক্রমশ চাপে পড়ে ধোনির দল। ছয় ব্যাটসম্যানের পাঁচজনই দুই অঙ্ক ছুঁতে ব্যর্থ হন। ১৫ বলে ১ ছক্কায় ১৫ রান করে ফেরেন ডোয়াইন ব্রাভো। ক্যাপ্টেন ধোনি আউট হন মাত্র ২ রান করে। আগের ওভারেই যে মালিঙ্গা ২০ রান দিয়েছিলেন শেষ ওভারে সেই তার হাতে বল তুলে দিয়েই বাজিটা জিতলেন রোহিত শর্মা! একেই বলে পুরোনো চাল ভাতে বাড়ে। ৫৯ বলে ৮ চার ও ৪ ছক্কায় ৮০ রানের ম্যারাথন ইনিংস খেলেও রানআউটের খাড়া পড়ে চেন্নাইর হার দেখতে হয় ওয়াটসনকে। জাসপ্রিত বুমরাহ ২, হারদিক পান্ডিয়া, দীপক চাহার ও লাসিথ মালিঙ্গা প্রত্যেকে নেন একটি করে উইকেট। এর আগে টস জিতে ব্যাটিং নেয়া মুম্বাইর হয়ে দুই ওপেনার রোহিত শর্মা এবং কুইন্টন ডি কক মিলে মাত্র ২৮ বলেই যোগ করে ফেলেছিলেন ৪৫ রান। এ সময়ে ১টি চারের বিপরীতে ৫টি ছক্কা হাঁকান এ দু-জন। কিন্তু অতিরিক্ত উত্তেজনা সামাল দিতে পারেননি ডি কক। তাই তো পঞ্চম ওভারের চতুর্থ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে, পরের বলেও চেষ্টা করেন বড় শটের। কিন্তু ব্যাটের ওপরের কানায় লেগে তা চলে যায় উইকেটরক্ষক মহেন্দ্র সিং ধোনির গ্লাভসে। থেমে যায় ডি ককের ১৭ বলে ৪ ছক্কায় খেলেন ২৯ রানের ইনিংস। ঠিক পরের ওভারেই অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে সাজঘরে পাঠিয়ে দেন দীপক চাহার। আউট হওয়ার আগে রোহিত করেন ১৪ বলে ১৫ রান। হুট করেই থেমে যায় মুম্বাইর রানের গতি। দশম ওভারে আসা ১২ রানের কল্যাণে ২ উইকেটে ৭০ রান নিয়ে ইনিংসের মাঝপথ অতিক্রম করে তারা। রোহিত-ডি কক ফেরার পর ইশান কিশান এবং সূর্যকুমার যাদব মিলে চেষ্টা করেন পরিস্থিতি সামাল দেয়ার। কিন্তু ১২তম ওভারে ইমরান তাহির ভেঙ্গে দেন জুটি। সূর্যকুমার ফেরেন ১৭ বলে ১৫ রান করে। পরের ওভারে ফিরে যান ৭ বলে ৭ রান করা ক্রুনাল পান্ডিয়াও। তরুণ ইশান কিশানকে সঙ্গ দিতে উইকেটে আসেন কাইরন পোলার্ড। কিন্তু পোলার্ড আসার পর ইশান বেশিক্ষণ উইকেটে টিকতে পারেন নি, ১৫তম ওভারে আউট হন ২৬ বলে ২৩ রান করে। সেখান থেকে ষষ্ঠ উইকেটে ২২ বলে ৩৯ রানের জুটি গড়েন হারদিক পান্ডিয়া এবং কাইরন পোলার্ড। ১৮ ওভার শেষে তাদের সংগ্রহ ছিলো ৫ উইকেটে ১৩৬। সেখান থেকে অন্তত ১৬০ রানের সংগ্রহের আশা করতেই পারত মুম্বাই। কিন্তু ১৯তম ওভারের প্রথম বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে পরের বলেই আউট হয়ে যান ১০ বলে ১৬ রান করা পান্ডিয়া। যিনি টুর্নামেন্টজুড়ে ছিলেন দারুণ ধারাবাহিক। ওই ওভারের পরের চার বলে কোনো রান দেননি দীপক চাহার, সঙ্গে নিয়ে নেন তারই সহোদর রাহুল চাহারের উইকেট। শেষ ওভার করতে আসেন ডোয়াইন ব্রাভো। প্রথম বলে নিশ্চিত সিঙ্গেল নেননি পোলার্ড। পরে ডট দেন দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বলে। শেষ পর্যন্ত শেষের তিন বলে ৯ রান নিয়ে দলীয় সংগ্রহটাকে ৮ উইকেটে ১৪৯ রানে নিয়ে ঠেকান পোলার্ড। ২৫ বলে সমান ৩টি করে চার ও ছক্কায় ৪১ রানে অপরাজিত থাকেন এই ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান তারকা। চেন্নাইর হয়ে বল হাতে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন দীপক চাহার। দুটি করে শিকার শার্দুল ঠাকুর ও ইমরান তাহিরের।
×