ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

জলজের চিত্রপটে ‘নতুন দেখা পুরান ঢাকা’

প্রকাশিত: ১১:৪০, ১৩ মে ২০১৯

 জলজের চিত্রপটে  ‘নতুন দেখা পুরান ঢাকা’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আকাশে মেঘের আনাগোনা। জলরং আশ্রিত চিত্রপটের নিচের অংশে বইছে জলধারা। মাঝ বরাবর উঁকি দিচ্ছে পলেস্তরা খসে যাওয়া পুরনো দালান। প্রাচীন স্থাপনাটির পেছনেই দৃশ্যমান বুড়িগঙ্গা। নদীতে ভাসছে অনেকগুলো ছোট ছোট নৌকা। ঘাটে ভিড়ে আছে বিশাল আকৃতির বেশ কিছু লঞ্চ। পুরনো ঢাকার চালচিত্রময় চিত্রকর্মটির দেখা মেলে লাল মাটিয়ার গ্যালারি শিল্পাঙ্গনে। ঐতিহ্যবাহী এই শহরের পুরনো অংশের প্রতিচ্ছবি মেলে ধরা এমন অনেকগুলো ছবি ঝুলতে দেখা যায় প্রদর্শনালয়টিতে। শিল্পীদল জলজের সাত শিল্পীর জলরংয়ে অঁকা সেসব চিত্রকর্মে সজ্জিত প্রদর্শনীর শিরোনাম ‘নতুন দেখা পুরান ঢাকা’। শিল্পাঙ্গনের ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয় । প্রদর্শনীতে অংশ নেয়া সাত চিত্রকরের একজন বিষাণ ভক্ত। শিল্পী জনকণ্ঠকে বলেন, এমনিতেই পুরান ঢাকার প্রতি আলাদ একটা টান আছে। মনের সেই অনুরাগটির প্রতিফলন ঘটেছে চিত্রপটে। এক সময়ের ঐতিহাসিকভাবে দারুণ সমৃদ্ধ অঞ্চলটি মেলে ধরার চেষ্টা করেছি রং ও রেখার আঁচড়ে। তাই সহজাতভােেব বেশিরভাগ কাজে প্রাধান্য পেয়েছে পুরান ঢাকার বিভিন্ন পুরনো স্থাপত্য। সেই সূত্র ধরে আমাদের ক্যানভাসে উঠে এসেছে রূপলাল হাউস, লালবাগ কেল্লা, চকবাজার মসজিদ, বড় কাটরা কিংবা আহসান মঞ্জিলের মতো নান্দনিক স্থাপনা। বাদ যায়নি পুরান ঢাকাকে জলধারায় বেষ্টিত করে রাখা বুড়িগঙ্গা নদীও। এসবের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রাচীন ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চলের স্ট্রিট লাইফ। আছে সেসব অঞ্চলের মানুষের যাপিত জীবনও। এভাবেই আপন ভাবনা থেকে পুরান ঢাকাকে নতুন করে দেখার প্রচেষ্টা ছিল আমাদের সাত শিল্পীর সৃজনে। পুরান ঢাকার প্রতি নিজেদের ভাল লাগার অনুভবটা প্রকাশ করেছি এসব ছবির মাধ্যমে। প্রত্যেকে সাতটা করে মোট ৪৯টি ছবি এঁকেছি। সাত শিল্পীর সাত রকমের দৃষ্টিকোন চিত্রিত হয়েছে ছবিগুলো। সপ্তমনের সপ্তসুরে প্রকাশিত হয়েছে প্রতিটি ক্যানভাস। রংয়ে-রেখায় ছুঁয়েছেন পুরনো নগরী অবলোকনের সুখ। সারি সারি দালানের মাঝ দিয়ে প্রবাহিত সড়কে চলমান মানুষ ও গাড়ি-ঘোড়ার ছবি এঁকেছেন সাদেক আহমেদ। শ্যামল বিশ্বাসের চিত্রপটে ধরা দিয়েছে সরু পথে ধাবমান জীবন, ঘোড়ার গাড়ি কিংবা বুড়িগঙ্গা ঘাটে বাধা নৌকার সারি। নাটকীয়তায় বিপ্লব চক্রবর্তীকে টেনেছে আয়তনের বিশালতা। তাই তো এঁকেছেন বিশাল জাহাজ, কংক্রিটের বিপুল ভারবাহী সেতু আর ঘোড়ায় টানা গাড়ি। কিছু বিমূর্ত রীতিতে দালান ও নদীপাড়ের দৃশ্যকাব্য এঁকেছেন বিষাণ ভক্ত। প্রতœনগীর পানে চেয়ে যেন সুদূরের ডাক শুনেছেন আজমল উদ্দিন। বর্ণের মাঝে তাই অস্পষ্ট হয়ে দেখা দেয় তার আঁকা ঘোড়ার গাড়ি। রানা মশিউর গভীর অভিনিবেশে আলো-ছায়ার রহস্যময়তায় মুড়িয়ে দিয়েছেন প্রাচীন ঢাকাকে। আল-আখির সরকারের কাজে দুই ধরনের আঙ্গিক। বাস্তববাদী শৈলীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন না করে বস্তুর ছন্দময়তার নান্দনিক বিশ্লেষণ করেছেন। যানের জগতে পরীর মতো সুন্দরও বাহন রিক্সা। কৌশলে চিত্রণে সেই রিক্সার মাঝেই ছড়িয়ে দিয়েছেন ছন্দময়তা। চিত্রদল জলজের সাত শিল্পীর সাতটি করে মোট ৪৯টি চিত্রকর্মে সাজানো প্রদর্শনীটির সূচনা হয় পয়লা মে। বারো দিনব্যাপী শিল্পায়োজনটির শেষ দিন ছিল রবিবার।
×