ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রমজান, ঈদের সময় কঠোর নজরদারিতে আইনশৃঙ্খলা

প্রকাশিত: ১১:৩২, ১৩ মে ২০১৯

 রমজান, ঈদের সময় কঠোর নজরদারিতে আইনশৃঙ্খলা

শংকর কুমার দে ॥ এবারের পবিত্র রমজান মাসে ও ঈদের সময়ে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কঠোর সতর্ক নজরদারি অবস্থায় থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। পুলিশ, র‌্যাব, গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লক্ষাধিক সদস্যকে নিয়োজিত করা হয়েছে, যাদের মোতায়েন করা আছে, টহল দিচ্ছে, তল্লাশি করছে ও সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকাতেই তিন স্তরের নিরাপত্তার জন্য নিয়োজিত করা হয়েছে ১০ সহস্রাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। রোজাদারসহ মানুষের জানমাল রক্ষা ও নিরাপত্তা বিধানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নের লক্ষ্যে এবারের রমজানে মাসব্যাপী জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, অস্ত্র উদ্ধারাভিযান ও ওয়ারেন্টের আসামি গ্রেফতারের জন্য বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের সূত্রে এ খবর জানা গেছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর সব কটি বিপণিবিতান ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার আওতায় আনা, বড় মার্কেটগুলোর প্রবেশমুখে আর্চওয়ে লাগানো, মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে তল্লাশি করে ক্রেতাদের মার্কেটে ঢোকানোর নির্দেশ দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের মানুষ যাতে নিষ্কণ্টক ও নির্বিঘেœ পবিত্র রমজান মাসের কেনাকাটা করে আনন্দে ঈদ উৎসব পালন করতে পারে সেই জন্য রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তিন ধাপে ভাগ করে নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, সারাদেশের ৬৪ জেলার পুলিশ সুপার, রেঞ্জ ডিআইজি ও মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারদের কাছে রমজান এবং ঈদের সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পবিত্র রমজান মাস ও ঈদ পরবর্তী সময়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে রাজধানী ঢাকা মহানগরীর ৮ ডিভিশনের ৪৯ থানার পুলিশ কর্মকর্তাদের। এবারের রমজান মাসকে সামনে রেখে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে। যাতে নাশকতা, নৈরাজ্য, খুন, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, অপহরণ, অজ্ঞান পার্টি, মলমপার্টি, প্রতারণা ও যানজটসহ বিভিন্ন অপরাধ প্রতিরোধে কঠোরভাবে কার্যকর ব্যাবস্থা গ্রহণ করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রতি বছর রমজানের শুরুতে যেভাবে রাজধানীতে ছিনতাইকারী, অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টির দৌরাত্ম্য, চাঁদাবাজির বেপরোয়া হয়ে ওঠা এবার আগাম আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে এখনও তেমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়ে ওঠেনি। ডিএমপি সূত্র জানান, পবিত্র রমজান মাসের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও মানুষের জানমাল রক্ষার্থে নিরাপত্তা বিধানের জন্য ডিএমপি কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়ার সভাপতিত্বে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় পবিত্র মাহে রমজান মাস ও পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উদ্যাপন উপলক্ষে ঢাকা মহানগর এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, নৌ-যান ও রেল চলাচল এবং যাত্রী সেবা সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা হয় ওই সভায়। ডিএমপি কমিশনার মার্কেটের নিরাপত্তার জন্য সিসিটিভি, আর্চওয়ে, এক্সেস কন্ট্রোল মেশিনসহ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার বিষয়ে নির্দেশ দেন। রমজানে ভেজাল মুক্ত খাবারের প্রতিরোধে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অভিযান অব্যাহত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়। রাজধানীর সব কটি বিপণিবিতান ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার আওতায় আনতে স্ব স্ব বিপণিবিতান কর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। প্রত্যেক মার্কেট সিসি ক্যামেরার আওতায় আনতে হবে। বড় মার্কেটগুলোর প্রবেশমুখে আর্চওয়ে লাগাতে হবে। মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে তল্লাশি করে ক্রেতাদের মার্কেটে ঢোকাতে হবে। এ ক্ষেত্রে মার্কেটের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীর পাশাপাশি পুলিশও সহযোগিতা করবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার। ডিএমপির সভা সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকার বিভিন্নস্থানে চেকপোস্ট স্থাপন করা হচ্ছে। রাজধানীর ৪৯ থানা এলাকায় টহল দিবে টহল পুলিশ দল। অজ্ঞান পার্টি ও মলম পার্টির অপরাধী চক্র দমনে বাস টার্মিনাল, রেলওয়ে স্টেশন, লঞ্চ টার্মিনালসহ বিভিন্নস্থানে পুলিশ সদস্যদের বিশেষ নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও অজ্ঞান পার্টি ও মলম পার্টির বিষয়ে জনসচেতনা বৃদ্ধির পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাবের টহল ও চেকপোস্ট বসানোর ফলে অপরাধীরা সহজ পার পেয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবে না। বিভিন্ন মার্কেটে ও শপিংমলে যেই ধরনের অপরাধী চক্রের তৎপরতা বেশি থাকে সেই পরিস্থিতি অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে মোতায়েন করা হচ্ছে। কমিউনিটি পুলিশ মোতায়েন করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। সূত্র জানায়, বিভিন্ন বিপণিবিতান, শপিংমল, মার্কেটে মহিলা চোর ধরার জন্য রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে মহিলা পুলিশ নিয়োগ করা হচ্ছে। সংঘবদ্ধ মহিলা চোর দল দোকানপাটে ভিড় জমিয়ে দোকানির ব্যাস্ততার সুযোগ নিয়ে অলক্ষ্যে বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী নিয়ে যাতে কেটে না পড়তে পারে সেই জন্য মহিলা পুলিশ সদস্যদের মোতায়েন করা হচ্ছে। মহিলা চোর ও পকেটমারের দল রমজান মাসে বিভিন্ন মার্কেটে ও শপিংমলে তাদের তৎপরতা বৃদ্ধি করে। সাদা পোশাকে থাকবে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। বোরকা পার্টি নামানো হবে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে। বোরকা পার্টির সদস্যরা ছিনতাই প্রতিরোধ করে ছিনতাইকারী দলের সদস্যদের পাকড়াও করবে। রমজান মাসে রাজধানীতে যেই ধরনের অপরাধ সংগঠিত হয়ে থাকে সেই অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। পুলিশ সদর দফতরে একজন উর্ধতন কর্মকর্তা জানিয়েছে, বিশেষ করে রমজান মাস শেষে ঈদের সময় পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের অপরাধী চক্রের সদস্যদের তৎপরতা বেড়ে যায়। রাজধানীর মানুষ যাতে নির্বিঘেœ, নিশ্চিন্তে নিষ্কণ্টকে কেনাকাটা, চলাফেরা করতে পারে সেই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। পবিত্র রমজান মাস শুরু হয়েছে ভালভাবে। শেষ পর্যন্ত যাতে এ ধরনের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় সেইভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, পবিত্র রমজান মাস ও ঈদ পরবর্তী রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য তিন ধাপে বিভক্ত করা হয়। এর মধ্যে রমজানের প্রথম বিশ দিন। তার পরের দশ দিনের মধ্যে সাত দিন ও তিন দিনকে গুরুত্ব দিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। পবিত্র রমজান মাসের প্রথম ধাপের শুরুতে বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ছিল ভাল। ঈদ পরবর্তী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া বিভাগের উপ-কমিশনার মোঃ মাসুদুর রহমান বলেন, প্রায় দুই কোটি মানুষের মেগাসিটি রাজধানী ঢাকাতে অপরাধী চক্রের তৎপরতা থাকবে এবং বিচ্ছিন্ন কিছু অপরাধ সংগঠিত হবে তা ধরে নিয়েই বলা চলে পবিত্র রমজান মাসের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়নের সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে। রাজধানী ঢাকা হচ্ছে দেশের প্রাণ এবং এখানকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলে সারাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনাটা সহজ হবে। কেবল রাজধানী ঢাকাতেই দশ সহস্রাধিক পুলিশ, র‌্যাব, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এক মাস ধরে সিয়াম সাধনার মাস রমজানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সাফল্যের সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সব ধরনের উদ্যোগই গ্রহণ করা হয়েছে।
×