ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ছয়জনের পরিচয় মিলেছে, ১৪ জন জীবিত উদ্ধার

তিউনিসিয়া উপকূলে নৌকাডুবিতে নিহত ৩৭ বাংলাদেশী

প্রকাশিত: ১১:১৪, ১৩ মে ২০১৯

 তিউনিসিয়া উপকূলে নৌকাডুবিতে নিহত  ৩৭ বাংলাদেশী

ফিরোজ মান্না ॥ মানবপাচার চক্রের খপ্পরে পড়ে প্রতিবছরই নৌকায় করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন অভিবাসনপ্রত্যাশীরা। শুক্রবার ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে নৌকাডুবিতে ৩৭ বাংলাদেশী নিহত হন। এর মধ্যে ছয়জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলার বাসিন্দা ছিলেন। তবে ব্র্যাকের মাইগ্রেশন বিভাগ জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত সবার পরিচয় নিশ্চিত না হলেও ৩৭ জন নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে। এর মধ্যে জীবিত উদ্ধার হয়েছে ১৪ জন বাংলাদেশী। ভাল চাকরির আশায় দালাল চক্র বাংলাদেশ থেকে লোক সংগ্রহ করে লিবিয়ার উপকূল দিয়ে ইউরোপে পাচার করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। এ বছরের শুরু থেকে ১৬৪ জন সাগরে ডুবে মারা গেছে। সাগরপথে কড়াকড়ির কারণে কিছু দিন বন্ধ থাকার পর আবারও সাগর পথে শুরু হয়েছে মানব পাচার। গোপনে পাচারকারী চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রতিনিয়ত সাগর পথে ইউরোপ পাড়ি দেয়ার সময় নৌকা ডুবে মারা গেলেও খবর আসে না। এবার বেশিসংখ্যক বাংলাদেশী মারা যাওয়ার বিষয়টি বিশ্ব গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার পেয়েছে। ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার পথে নৌকাডুবে অন্তত ৬৫ জন মারা গেছে। এর মধ্যে মৃতের তালিকায় ৩৭ জন বাংলাদেশী রয়েছে। আর জীবিত উদ্ধার হয়েছেন ১৪ বাংলাদেশী। ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রধান শরীফুল হাসান বলেন, আমরা এ পর্যন্ত খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হয়েছি ৩৭ বাংলাদেশী নৌকা ডুবিতে মারা গেছে। ১৪ জন জীবিত উদ্ধার হওয়ার বিষয়টি নিয়েও খোঁজ নেয়া হয়েছে। সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের মুহিদপুর গ্রামের মন্টু মিয়ার ছেলে আহমদ হোসেন, একই গ্রামের হারুন মিয়ার ছেলে আবদুল আজিজ, মফিজুর রহমান সিরাজের ছেলে লিটন শিকদার, গোলাপগঞ্জের হাওড়তলা গ্রামের রফিক মিয়ার ছেলে আফজাল মোহাম্মদ ও শরীফগঞ্জ ইউনিয়নের ইয়াকুব আলীর ছেলে কামরান আহমদ মারুফ ও মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ভুকসিমাইল গ্রামের আহসান হাবীব শামীমের নাম জানা গেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বড় একটি নৌকায় রওনা হয়েছিলেন এই অবৈধ অভিবাসীরা। ওই নৌকায় অন্তত ৫১ জন বাংলাদেশী ছিলেন বলে বেঁচে যাওয়াদের তথ্য। বাকিদের মধ্যে তিনজন মিশরীয়, কয়েকজন মরক্কোর ও অন্যরা আফ্রিকার কয়েকটি দেশের নাগরিক। এদিকে তিউনিশিয়া উপকূলে নৌকাডুবিতে নিহতদের মধ্যে ৩০-৩৫ জন বাংলাদেশী বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। এছাড়া নৌকাডুবির ঘটনায় ১৪ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে বাংলাদেশী আছে কিনা সেটাও খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে। রবিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে তিউনিসিয়া উপকূলে নৌকাডুবির ঘটনায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি নৌকাটি তিউনিসিয়া উপকূলে ডুবে গেছে, সেখানে প্রায় ৭৫ জন যাত্রী ছিলেন। তার মধ্যে ৫১ জন ছিলেন বাংলাদেশী যাত্রী। এদের মধ্যে থেকে ৩০-৩৫ জন বাংলাদেশী নিহত হয়েছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। এছাড়া ১৪ জন যাত্রীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। এদের মধ্যে বাংলাদেশী কতজন রয়েছেন, সে বিষয়ে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, লিবিয়ায় জনশক্তি পাঠানো বন্ধ রয়েছে। তবে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ হয়ে লিবিয়া উপকূল থেকে নৌকাযোগে ইউরোপে প্রবেশ করছেন অনেক বাংলাদেশী। আদম ব্যবসায়ীরা তাদের নিয়ে যাচ্ছেন। আর সেখানে যাওয়ার সময় প্রায়ই এমন দুর্ঘটনা ঘটছে। বাংলাদেশ থেকে লোকজন কোথায় কীভাবে যাচ্ছেন, যাওয়ার সময় ইমিগ্রেশন বিভাগের আরও খোঁজখবর নেয়া উচিত। এছাড়া বিদেশে অবস্থান করছেন যেসব বাংলাদেশী তারা আমাদের মিশনে নিবন্ধন করেন না। তাই লোকজনকে সচেতন হতে হবে। রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি জানিয়েছে, সাগরে বড় নৌকা থেকে তাদের ছোট একটি নৌকায় ঠাসাঠাসি করে তোলা হয়েছিল। এ সময় অতিরিক্ত ভারে নৌকাটি ডুবে যায়। ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে নৌকায় করে অবৈধভাবে ইউরোপ পাড়ি দেয়ার ঘটনা অনেক পুরনো। এর আগেও নৌকা ডুবে বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এ বছরের প্রথম চার মাসে নৌকা ডুবে ১৬৪ জন মারা গেছে বলে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার তথ্য (ইউএনসিআর)। তথ্য আদান প্রদানের জন্য চালু করা হয়েছে দু’টি হটলাইন নাম্বর। +৮৮-০২৪৯৩৫৪২৪৬, ০১৮১১৪৫৮৫২১ এই দু’টি মোবাইল নাম্বারের পাশাপাশি অফিস চলাকালীন ৪৯৩৫৪২৪৬ এই নাম্বারে যোগাযোগ করা যাবে। ০১৮১১৪৫৮৫২১ এই মোবাইল নাম্বারটি ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মানব পাচারের সঙ্গে জড়িতরা এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে। ২০১২ সালে মানব পাচার আইন হওয়ার পর থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত ৫ হাজার ৭১৬ মামলা হয়েছে। কিন্তু এই মামলাগুলোর নিষ্পত্তির হার খুবই সামান্য। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এসব মামলার অধিকাংশরই এখন পর্যন্ত বিচার হয়নি। পাচার রোধে যথেষ্ট পদক্ষেপ না নেয়ায় গত কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের মানবপাচার প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে ‘টায়ার-২ ওয়াচ লিস্টে’ রেখেছে। মানব পাচারের দিক থেকে বাংলাদেশের স্থান অনেক ওপরে। ব্র্যাকের মাইগ্রেশন বিভাগ এ তথ্য জানিয়েছে।
×