ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জাতীয় সম্মেলন সামনে রেখে আওয়ামী লীগ ঢেলে সাজার সিদ্ধান্ত

প্রকাশিত: ১১:০৪, ১৩ মে ২০১৯

 জাতীয় সম্মেলন সামনে রেখে আওয়ামী লীগ ঢেলে সাজার সিদ্ধান্ত

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে দলকে ঢেলে সাজার উদ্যোগ নিয়েছে আওয়ামী লীগ। ইতোমধ্যে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দলটি সারাদেশে সাংগঠনিক সফর শুরু করেছে। শনিবার খুলনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা চুয়াডাঙ্গায় সাংগঠনিক সফর এবং জেলা আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় অংশগ্রহণ করেন। এর মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ মিশনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলো। পর্যায়ক্রমে প্রত্যেক জেলায় সাংগঠনিক সফর ও বিশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হবে। আর বর্ধিত সভায় তৃণমূল সম্মেলনের তারিখ চূড়ান্ত করা হবে। বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ না থাকলেও ভেতরে ভেতরে চলছে অস্থিরতা, টানাপোড়েন। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট থেকে একের পর এক বেরিয়ে আসছে শরিক ছোট দলগুলো। জাতীয় পার্টি (এরশাদ) নেতৃত্বে কে আসবেন, তা নিয়ে দেবর-ভাবির প্রকাশ্যে দ্বন্দ্ব যেমন দেখা যাচ্ছে তেমনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও যে নিশ্চিন্তে আছে সেটাও বলা যাচ্ছে না। কারণ ইতোমধ্যে জোটে অবমূল্যায়নের অভিযোগ তুলে ১৪ দলীয় শরিক দলগুলোর মধ্যে দেখা দিয়েছে অসন্তোষ, মান-অভিমান। শরিক দুটি দল প্রকাশ্য আওয়ামী লীগের একক নেতৃত্ব প্রদানের কঠোর সমালোচনা করতেও ছাড়ছে না। এছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও উপজেলা নির্বাচনের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মাঝে স্পষ্ট বিভেদ দেখা দেয়। এই বিভেদ কাটিয়ে আসন্ন জাতীয় সম্মেলন ও উপজেলা নির্বাচনে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মাঝে স্পষ্ট বিভেদ দেখা দেয়। এ কারণে আওয়ামী লীগের তৃণমূলকে ফের ঐক্যবদ্ধ করতে নতুন মিশনে নামার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এজন্য বেছে নেয়া হয়েছে পবিত্র রমজান মাসকে। জাতীয় সম্মেলনের আগে তৃণমূলের সব শাখায় সম্মেলন সম্পন্ন করার টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছে। তৃণমূল সফরের জন্য আট বিভাগের জন্য আটটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য, সভাপতিম-লীর সদস্যরা এসব টিমের নেতৃত্বে রয়েছেন। বিভাগীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকরা এসব সফরের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন। জানা গেছে, আজ সোমবার যশোর এবং নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভা, ১৪ মে সাতক্ষীরা জেলা, ১৮ মে খুলনা মহানগর, ১৯ মে খুলনা জেলা, ২০ মে বাগেরহাট জেলা এবং ২১ মে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় খুলনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা অংশগ্রহণ করবেন। খুলনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক টিমের সদস্যরা হলেন- আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ সদস্য বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, এস এম কামাল হোসেন, এ্যাডভোকেট আমিরুল ইসলাম মিলন ও পারভীন জামান কল্পনা। গত ১৯ এপ্রিল আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের যৌথ সভায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তৃণমূলে অনেক কোন্দল ও গ্রুপিং আছে। যে কারণে উপজেলা নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হেরে গেছে অনেক জায়গায়। অতীতে আওয়ামী লীগ যখনই বিপদে পড়েছে এ তৃণমূলই কিন্তু দলকে রক্ষা করেছে। সেই কারণে যত দ্বন্দ্ব, সংঘাত বা গ্রুপিং থাকুক না কেন সবকিছু মিটিয়ে ফেলে আওয়ামী লীগকে তৃণমূল পর্যায়ে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। আওয়ামী লীগের আসন্ন জাতীয় সম্মেলন, মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের আগেই তৃণমূল আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। তার নির্দেশনা অনুযায়ীই সাংগঠনিক সফর শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর রমজান মাসের শুরু থেকেই দেশের প্রধান প্রধান বিভাগীয় শহরে যৌথসভার মাধ্যমে দলকে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী করার কাজে নেমে পড়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। গত শনিবার চট্টগ্রামের সাত সাংগঠনিক জেলা নিয়ে বিশেষ বর্ধিত সভা করে দলের কেন্দ্রীয় নির্দেশ এবং পরিকল্পনার কথা তৃণমূল নেতাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। একই সঙ্গে দলের মধ্যে কোনরকম বিভেদ বা দ্বন্দ্ব সৃষ্টিকারীদের কোনভাবেই যে ক্ষমা করা হবে না সেই হুঁশিয়ারিও দেয়া হয়েছে ওসব বর্ধিত সভায়। দলীয় সূত্র জানায়, অক্টোবরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সাংগঠনিক নিয়মানুযায়ী, এ সম্মেলনের আগেই দেশের সব জেলা, মহানগর, উপজেলা ও থানার সম্মেলন সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের কাছ থেকে জানা গেছে, ইতোমধ্যে গত ১৯ এপিল আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদ ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের যৌথসভায় এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়েছেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভায় উপস্থিত নেতাদের দ্রুত সাংগঠনিক সফরের মাধ্যমে দলের মধ্যে থাকা দ্বন্দ্ব, গ্রুপিং, বিভেদ মিটিয়ে ফেলে আওয়ামী লীগকে তৃণমূল পর্যায় থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে ওই বৈঠকে সাংগঠনিক সফরকালে অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে সর্বত্র বড় ধরনের শুদ্ধি অভিযান চালানোরও নির্দেশ রয়েছে। দলটির নেতারা জানিয়েছেন, তৃণমূলে সফরকালে বর্তমান সরকারের ধারাবাহিক উন্নয়ন কর্মকা- তুলে ধরা হবে। পাশাপাশি সরকার আগামীতে যেসব লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছে সেগুলো সম্পর্কে জনসাধারণকে ধারণা দেয়া হবে। একই সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে সারাদেশে মুজিববর্ষ উদাযাপন ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের বিষয়টিও গুরুত্ব পাবে এসব সাংগঠনিক সফরে। দলটির একাধিক সূত্রে জানা গেছে, তৃণমূল সফরের শুরুতেই সাংগঠনিক বিরোধপূর্ণ জেলাগুলোতে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। বিভিন্ন বিভাগীয় শহর, জেলা ও উপজেলা সদরে সভা-সমাবেশ ও কর্মিসভা করা হবে। তৃণমূলকে ঐক্যবদ্ধ করতে প্রতি জেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়ার চিন্তা-ভাবনাও চলছে। শুধু রমজান মাসই নয়, সম্মেলনের আগ পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে এসব সাংগঠনিক সফর চলবে এবং প্রান্ত থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত দলকে ঢেলে সাজানো হবে। এছাড়া দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়া এবং দলের প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নেয়া মন্ত্রী-এমপি ও বড় বড় নেতাদের এই শুদ্ধি অভিযানে কপাল পুড়তে পারে বলেও দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত একাধিক নেতা জানিয়েছেন।
×