ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ষষ্ঠ বিয়েতে সম্মতি না দেয়ায় চতুর্থ স্ত্রীকে কুপিয়ে জখম

প্রকাশিত: ১০:৪৩, ১৩ মে ২০১৯

 ষষ্ঠ বিয়েতে সম্মতি না দেয়ায়  চতুর্থ স্ত্রীকে কুপিয়ে জখম

নিজস্ব সংবাদদাতা, আমতলী, বরগুনা, ১২ মে ॥ বিয়ে পাগল নিজাম মাতুব্বরের কান্ডে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ষষ্ঠ বিয়েতে সম্মতি না দেয়ায় চতুর্থ স্ত্রী নাসিমা আক্তারকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেছে। ঘটনা ঘটেছে বরগুনার আমতলী উপজেলার কুকুয়া ইউনিয়নের পূর্ব চুনাখালী গ্রামে। এ ঘটনায় শনিবার রাতে আমতলী থানায় মামলা হয়েছে। জানা গেছে, উপজেলার কুকুয়া ইউনিয়নের পূর্ব চুনাখালী গ্রামের লেদু মাতুব্বরের ছেলে নিজাম মাতুব্বর গরুর ব্যবসা করে আসছে। ব্যবসার আড়ালে একের পর এক বিয়ে করছে নিজাম। ১৯৯৫ সালে তিনি জাহানারা বেগমকে প্রথম বিয়ে করেন। প্রথম স্ত্রীর ঘরে রয়েছে দুই সন্তান। দুই সন্তান রেখেই নিজাম প্রথম স্ত্রীকে তালাক দেয়। এরপরেই খাজিদাকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। দ্বিতীয় ঘরে তিনটি পুত্র সন্তান রেখে তাকে তাড়িয়ে দিয়েছে। এরপর মারুফা বেগমকে তৃতীয় স্ত্রী হিসেবে বিয়ে করেন। তৃতীয় স্ত্রীকে আগুনে পুড়িয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করে এমন অভিযোগ ছেলে রিয়ন ও চতুর্থ স্ত্রী নাসিমার। পরে ওই স্ত্রীকেও তাড়িয়ে দেয়। ২০০৭ সালে নাসিমা বেগমকে চতুর্থ স্ত্রী হিসেবে বিয়ে করেন। নাসিমার ঘরে জন্ম নেয় একটি কন্যা সন্তান। এ বছর জানুয়ারি মাসে চতুর্থ স্ত্রী নাসিমাকে না জানিয়ে পঞ্চম স্ত্রী হিসেবে একই এলাকার ১৩ বছরের নিলা নামের এক মেয়েকে গোপনে বিয়ে করে। বর্তমানে ষষ্ঠ বিয়ের জন্য চতুর্থ স্ত্রী নাসিমা ও পঞ্চম স্ত্রী নিলার সম্মতি চায়। পঞ্চম স্ত্রী নিলা সম্মতি দিলেও চতুর্থ স্ত্রী নাসিমা ষষ্ঠ বিয়েতে সম্মতি দেয়নি। চতুর্থ স্ত্রী নাসিমা ষষ্ঠ বিয়েতে স্বামী নিজামকে বাধা দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নিজাম মাতুব্বর চতুর্থ স্ত্রীকে ঘরের মধ্যে গত ৬ মে আটকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নাসিমার বাহু, কোমর, পিঠ ও রানে গুরুতর জখম হয়। এছাড়াও নাসিমার স্পর্শকাতর স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে নাসিমাকে ওইদিন আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। গত ছয়দিন ধরে নাসিমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। নাসিমার বাবা সফেজ খলিফা অন্ধ। মা চলাফেরা করতে পারে না। অর্থের অভাবে নাসিমার চিকিৎসা হচ্ছে না। শনিবার রাতে নাসিমা বেগম বাদী হয়ে নিজাম মাতুব্বরকে প্রধান আসামি করে চার জনের নামে আমতলী থানায় মামলা দায়ের করেছেন। রবিবার আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা গেছে, নাসিমা শরীরের যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। তার শরীরে বিভিন্ন স্থানে সেলাই করা হয়েছে। নাসিমা শরীরের যন্ত্রণায় চলাফেরা করতে পারছে না। আহত নাসিমা বেগম কান্নাজনিত কণ্ঠে বলেন, বিয়ের ১২ বছরে শতাধিক বার মারধর করেছে। ওর নির্যাতনে আমার জীবনটাই শেষ। মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে ওর সংসার করছি। তিনি আরও বলেন, আমার বিয়ের আগে দুই স্ত্রীকে ছেলে সন্তান রেখে তালাক দিয়েছে। একজনকে আগুনে পুড়িয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছে। এ বছর জানুয়ারি মাসে ১৩ বছরের নিলা নামের একটি মেয়েকে বিয়ে করেছে। এখন আবার ষষ্ঠ বিয়ের জন্য আমার সম্মতি চায়। আমি এতে সম্মতি না দেয়ায় আমাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই। বিয়ে পাগল নিজাম মাতুব্বরের প্রথম স্ত্রীর ছেলে রিয়ন জানান, বাবা এ পর্যন্ত পাঁচটি বিয়ে করেছে। আবারও ষষ্ঠ বিয়ে করার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন। তার ষষ্ঠ বিয়েতে আমি বাধা দেয়ায় আমাকে পিটিয়ে হাত ভেঙ্গে দিয়েছে। বাবার এমন কাজের জন্য আমরা সমাজে মুখ দেখাতে পারি না। সে আরও জানান আমার সৎ মা নাসিমা বিয়েতে বাধা দেয়ায় কুপিয়ে গুরুতর আহত করেছে।
×