ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গাজীপুরে পোশাক শ্রমিক বিক্ষোভ

প্রকাশিত: ১০:৪১, ১৩ মে ২০১৯

গাজীপুরে পোশাক শ্রমিক বিক্ষোভ

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ গাজীপুরে বেতন-ভাতাসহ পাওনাদি পরিশোধের দাবিতে ও কারখানা বন্ধ ঘোষণার প্রতিবাদে এক পোশাক কারখানার শ্রমিকরা রবিবার বিক্ষোভ ও অবস্থান ধর্মঘট করেছে। তারা সড়ক অবরোধ ও কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করেছে। এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে। এতে পুলিশসহ কয়েকজন আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ার শেল ছুড়েছে। গাজীপুর শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর ইস্কান্দর মোঃ হাবিবুর রহমানসহ শ্রমিক ও স্থানীয়রা জানায়, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ভীমবাজার এলাকার ওয়ার্কফিল্ড পোশাক কারখানার শ্রমিকরা গত কয়েকদিন ধরে কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের বকেয়া বেতন-ভাতাসহ সব পাওনাদি পরিশোধের দাবি জানিয়ে আসছিল। কারখানা কর্তৃপক্ষ এতে সাড়া না দেয়ায় শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে শ্রমিক অসন্তোষের মুখে কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের বকেয়া বেতন-ভাতাসহ সব পাওনাদি পরিশোধের কয়েক দফা আশ্বাস দিয়ে তারিখ ঘোষণা দিলেও তা প্রদান করেনি। এতে শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের দাবি মেনে না নেয়ায় শ্রমিকরা গত চারদিন ধরে পর্যায়ক্রমে কারখানায় কর্মবিরতি, অবস্থান ধর্মঘট ও বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন শুরু করে। রবিবার সকালে শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে কারখানায় গিয়ে মূল ফটকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধের নোটিস দেখতে পান। এতে শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে উঠে। তারা কারখানার গেটের সামনে অবস্থান নিয়ে তাদের পাওনা বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবিতে ও কারখানা বন্ধ ঘোষণার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করতে থাকে। একপর্যায়ে বেলা সাড়ে ১০টার দিকে শ্রমিকরা জড়ো হয়ে কারখানার সামনের ভাওয়াল মির্জাপুর-মাস্টারবাড়ি আঞ্চলিক সড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে বিক্ষোভ করতে থাকে। পরে বেলা ১১টার তারা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাস্টারবাড়ি বাসস্ট্যান্ডে এলাকায় অবস্থান নিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। এ সময় তারা কয়েকটি গাড়ির কাঁচ ভাংচুর করেছে। এতে মহাসড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে শিল্প ও সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মহাসড়কের উপর থেকে অবরোধকারীদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের ধাওয়া পাল্টাধাওয়া শুরু হয়। এসময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। এতে পুলিশসহ কয়েকজন আহত হয়। একপর্যায়ে পুলিশ লাঠিচার্জ করে ও ১২/১৩ রাউন্ড টিয়ার শেল ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে ওই মহাসড়কে পুনরায় যানবাহন চলাচল শুরু হয়। এ বিষয়ে কারখানার অপারেটর তানিয়া আক্তারসহ আন্দোলনরত একাধিক শ্রমিক জানায়, কারখানার শ্রমিকদের গত তিন মাসের বেতন ও অন্যান্য ভাতা বকেয়া রয়েছে। কর্তৃপক্ষ তা পরিশোধের আশ্বাস দিয়ে বারবার তারিখ ঘোষণা দিলেও তা পরিশোধ করেনি। সর্বশেষ ঈদের আগেই শ্রমিকদের বকেয়া বেতনসহ ঈদ বোনাস দেয়ার আশ্বাস দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু রবিবার সকালে কাজে যোগ দিতে গিয়ে মূল ফটকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধের নোটিস দেখতে পেয়ে শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে উঠে বিক্ষোভ শুরু করে। শ্রমিকরা আরও জানায়, মাত্র ক’দিন পরেই ঈদ। ঈদের আগে এভাবে হঠাৎ কারখানা বন্ধ হওয়ায় তারা বিপাকে পড়েছেন। নতুন করে কোন কারখানায় কাজ পেলেও ঈদের আগে বেতন পাবেন না। এতে তাদের ঈদ উৎসব মাটি হয়ে গেছে। গাজীপুর শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর ইস্কান্দর হাবিবুর রহমান জানান, কারখানার ছাটাইকৃত শ্রমিকদের তিনমাস এবং নিয়মিত শ্রমিকদের এক মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। শ্রমবিধি অনুযায়ী শ্রমিকদের বেতন ভাতা পরিশোধের জন্য মালিকপক্ষকে বলা হয়েছে। রমজান মাস ও দূরপাল্লার যাত্রীদের কথা বিবেচনা করে রবিবার আন্দোলনরত শ্রমিকদের অবরোধ তুলে নিতে অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু তারা প্রত্যাখ্যান করে উল্টো পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এতে পুলিশসহ কয়েকজন পথচারী আহত হয়। একপর্যায়ে পুলিশ লাঠিচার্জ করে ও ১২-১৩ রাউন্ড টিয়ার শেল ছুড়ে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
×