ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঝুঁকিপূর্ণ তিন সেতু

প্রকাশিত: ১০:৩৬, ১৩ মে ২০১৯

ঝুঁকিপূর্ণ তিন সেতু

আবু জাফর সাবু, গাইবান্ধা ॥ গাইবান্ধা জেলার তিনটি সড়ক সেতু ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও ওই সেতুগুলো দিয়েই ভারি যানবাহন চলাচল করছে। ঝুঁকিপূর্ণ সেতুগুলো হচ্ছে গাইবান্ধা-সাঘাটা সড়কের বাদিয়াখালীতে বেইলি সেতু, উল্লাবাজার-পুরাতন ফুলছড়ি হেডকোয়ার্টার সড়কে খালের ওপর বেইলি সেতু ও গাইবান্ধা-বালাসীঘাট সড়কের পুলবন্দী সেতু। সেতুগুলোর দুই পাশে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি লাগিয়ে দিলেও তা মানছেন না ট্রাকমালিক, চালক ও ব্যবসায়ীরা। ফলে যে কোন সময় ওই সেতুগুলো ধসে পড়ে জেলা শহরের সঙ্গে ফুলছড়ি-সাঘাটা ও বালাসীঘাটের যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতে প্রাণহানির আশঙ্কাসহ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হতে পারে ৩ উপজেলার কয়েক লক্ষাধিক মানুষের। অথচ সেতুগুলো সংস্কারে কোন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। এদিকে গাইবান্ধা-তালতলা-গিদারী সড়কের ১১ কিলোমিটারের মধ্যে ৯ কিলোমিটার সড়কের বেহাল অবস্থা। কার্পেটিং ওঠায় তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে ৫টি ইউনিয়নের ২০ সহস্রাধিক মানুষকে চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এতদসত্ত্বেও সড়কগুলো সংস্কারেরও কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। উল্লেখ্য, গাইবান্ধা সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আলাই নদীর ওপর গাইবান্ধা-সাঘাটা সড়কের বাদিয়াখালীতে বেইলি সেতু ও উল্লাবাজার-পুরাতন ফুলছড়ি হেডকোয়ার্টার সড়কে খালের ওপর বেইলি সেতুতে ওঠার দুইপাশেই লেখা রয়েছে ‘ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি সেতু’ শীর্ষক সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি। এছাড়াও বিজ্ঞপ্তিতে ৫ টনের অধিক মালামাল পরিবহনের ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তদুপরি একই নদীর ওপর গাইবান্ধা-বালাসীঘাট সড়কের পুলবন্দী সেতুতে ৮ টনের অধিক মালামাল পরিবহন নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ এই সেতুগুলো দিয়ে ৮ থেকে ১০ টন ওজনের মালামাল নিয়েও প্রতিনিয়ত একাধিক ট্রাক চলাচল করছে। সত্তর দশকেরও আগে বাদিয়াখালী সেতু ও আশির দশকে পুলবন্দী সেতু নির্মিত হলেও দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও এই সেতু দুটি মেরামতের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। সড়ক ও জনপথ বিভাগ সেতুগুলোর দুইপাশেই ঝুঁকিপূর্ণ সাইনবোর্ড লাগিয়ে নিজেদের দায় সেরেছেন। এই সেতু দিয়ে অতিরিক্ত মালামাল নিয়ে যানবাহন চলাচল করছে কিনা তা দেখার জন্য কাউকেই দায়িত্ব দেয়া হয়নি। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও মানুষ বাধ্য হয়ে সেতু দিয়ে মানুষ ও যানবাহনের চলাচল অব্যাহত রয়েছে। এ বিষয়ে গাইবান্ধা সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দুর্ঘটনা এড়াতে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে চালকদের সতর্ক করা হয়েছে। বাদিয়াখালীতে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকার অর্থায়নে নতুন সেতু নির্মাণের অনুমোদন পাওয়া গেছে। আর পুরাতন ফুলছড়ি হেডকোয়ার্টার সড়কের বেইলি সেতুরস্থলে কালভার্ট ও সড়ক নির্মাণ এবং গাইবান্ধা-বালাসীঘাট সড়কের প্রস্থ বৃদ্ধিসহ পুলবন্দীতে নতুন সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। জানা গেছে, গাইবান্ধা-তালতলা-গিদারী সড়কের ১১ কিলোমিটারের মধ্যে ৯ কিলোমিটার সড়কই বেহাল অবস্থা। কার্পেটিং ওঠায় তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে পাঁচটি ইউনিয়নের ২০ সহস্রাধিক মানুষকে চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এই পথে চলাচলকারী যানবাহন অল্পদিনেই নষ্ট হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মালিকরা। শুধু তাই নয়, রোগীদের পড়তে হচ্ছে চরম বিপাকে। সদর উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ৮ বছর আগে ঘাঘট নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে খোলাহাটী ইউনিয়নের বাঁধের মাথা মিয়াপাড়া থেকে গিদারী ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত প্রায় ৯ কিলোমিটার সড়ক পাকা করা হয়। সড়কটি দিয়ে সদর উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের মধ্যে খোলাহাটির মিয়াপাড়া, পূর্ব কোমরনই, ভাটিয়াপাড়া, ঘাগোয়ার হাতিয়া, তালতলা, কাটিহারা, পচারকুড়া, গিদারীর পার বাগুড়িয়া, আনালের ছড়া, ধুতিচোরা, দক্ষিণ গিদারী, খলিসার পটল, কামারজানীর কড়াইবাড়ী, গোঘাট ও মোল্লারচর ইউনিয়নের বাজে চিথুলিয়া, সিধাই, চিথুলিয়া দিগরসহ আশপাশের গ্রামগুলোর ২০ সহস্রাধিক মানুষ চলাচল করে। বেহাল সড়কে চলাচলের সময় বর্তমানে তাদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। তাই মানুষ সড়কের ওপর দিয়েই চলাচল করে। দুইপাশ থেকেই গাড়ি এলে হেঁটে যাওয়া মানুষকে পাশের জমিতে গিয়ে নামতে হয়। অপরদিকে একটি ট্রাক ঢুকলে বিপরীত দিকে থেকে আসা গাড়ি অতিক্রম করে যাওয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পড়তে হয়। সদর উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বেহাল ওই সড়কগুলো আগামী জিওবি মেনটেন্যান্স প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
×