ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পাইকারি বাজারে কমছে ছোলার দাম

প্রকাশিত: ১০:৩৪, ১৩ মে ২০১৯

 পাইকারি বাজারে কমছে  ছোলার দাম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ রোজাদারদের পছন্দের ইফতারসামগ্রীর মধ্যে খেজুর, শরবতের পরই ছোলার স্থান। প্রতিবছর রমজানের আগেই দাম বেড়ে যায় ছোলার। খুচরা ও পাইকারি বাজারে জোয়ার আসত ছোলার দাম ও চাহিদায়। এবার রমজানের প্রথম সপ্তাহেই দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে ছোলার চাহিদা ও দামে ভাটা পড়েছে। সূত্রমতে, ৯০ হাজার টন চাহিদার বিপরীতে গত জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত দেশে ছোলা আমদানি হয়েছে ১ লাখ ৪৩ হাজার টন। এর আগের আমদানি করা এবং পাইপলাইনে থাকা ছোলার সরবরাহও কম নয়। পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাইকারিতে মানভেদে ৬৪ টাকা থেকে ৬৫ টাকা পর্যন্ত আমদানি করা ছোলা বিক্রি হচ্ছে। খুচরা পর্যায়ে ৭০ থেকে ৮০ টাকায় ভোক্তারা কিনছেন ছোলা। আবার নগরের মোড়ে মোড়ে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ট্রাক সেল ও ডিলার পর্যায়ে ভাল মানের ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা। সব মিলিয়ে ছোলা নিয়ে স্বস্তিতে আছেন রোজাদাররা। চট্টগ্রাম ডাল মিল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সঞ্জয় দেব বলেন, পাইকারি বাজারে ছোলার দাম বাড়ার আশঙ্কা নেই। উল্টো ২-১ টাকা কমবে কেজিতে। কারণ বিক্রি নেই বললেই চলে। খাতুনগঞ্জের সুমন ট্রেডিংয়ের ব্যবস্থাপক বলেন, অস্ট্রেলিয়া, মিয়ানমার, ভারত, ইথিওপিয়া, তানজিনিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ছোলা আমদানি হয়েছে। তবে অস্ট্রেলিয়ার ছোলার মানই ভাল। মিয়ানমারের ছোলা একেক বস্তায় একেক মানের। ছোলা ছাড়াও খাতুনগঞ্জে অস্ট্রেলিয়ার মশুর ডাল পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৪৭ টাকা থেকে সাড়ে ৪৯ টাকা। সাদা মটর ৩১ টাকা। মটর ডাল ৩১ টাকা ৭০ পয়সা। চনার ডাল ৭০ টাকা। একসময় ছোলাসহ বেশিরভাগ পণ্যই পাইকারিতে বিক্রি হতো মণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) হিসাবে। এখন কেজিতেই বেশি বিক্রি হয়। রমজানের আগে ছোলার দাম সহনীয় রাখার জন্য ভোক্তাদের সচেতনতার ওপর গুরুত্ব দিলেন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি চট্টগ্রাম শাখার সহ-সভাপতি আহমদ রশিদ আমু। তিনি বলেন, শব-ই-বরাতের পর দেখা যায় সবাই পুরো রমজান মাসের ছোলা, চিনি, ডাল, তেল, পেঁয়াজ কিনতে মুদির দোকানে ভিড় করেন। এর প্রভাব পড়ে বাজারে। অস্বাভাবিক চাহিদার কারণে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি হয়। দেখা গেল কোন আড়তে ছোলা আছে ২০০ বস্তা। খুচরা দোকানিদের চাহিদা ২৫০ বস্তা। স্বাভাবিকভাবে দাম বেড়ে যায়। ভোক্তা পর্যায়ে সপ্তাহে একবার বাজার করলে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরির সুযোগ থাকে না। কনজ্যুমার এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন মনে করেন, অস্বাভাবিক গরম, স্বাস্থ্য সচেতনতা তৈরি ও খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের কারণে এবার ছোলার চাহিদা কম। তিনি বলেন, গরম বেশি পড়ায় মানুষ ইফতারে ছোলার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন। খেজুর, লেবুর শরবত, বিভিন্ন ধরনের জুস, দই-চিড়া, মৌসুমি ফলমূল, পিঠাপুলি, পায়েশ-ফিরনি এসবই পছন্দ স্বাস্থ্যসচেতন মানুষের। ছোলা রান্নায় তেল, মসলা ইত্যাদি দেয়ায় অনেকে কোলেস্টেরলসহ নানা ঝুঁকির কারণেও এড়িয়ে চলছেন। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, গতবছর জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রচুর ছোলাসহ ইফতার সামগ্রী বিতরণ করেছিলেন। এতে বাজারে চাহিদা বেড়ে গিয়েছিল। এবার তেমনটি নেই। দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চায়ের দোকানে সারাবছর ছোলা বিক্রি হয়। মেজবানসহ বড় অনুষ্ঠানে ছোলার ডাল বেশ জনপ্রিয়। স্বাভাবিকভাবে ছোলা আমদানিকারকরা লোকসানে পড়ার আশঙ্কা নেই। তবে অস্বাভাবিক লাভ হয়ত করতে পারবেন না। যদিও রমজানের কয়েক মাস আগে থেকেই ধাপে ধাপে ছোলার দাম বাড়ানো হয়েছিল।
×