ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

উদ্বৃত্ত আলু নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় কৃষিমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১০:৩২, ১৩ মে ২০১৯

উদ্বৃত্ত আলু নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় কৃষিমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকদ্রব্য মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার যে ঘোষণা দিয়েছেন সে লক্ষ্যে সরকারীভাবে-বেসরকারীভাবে প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিপর্যায়ে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেছেন, ২০৪০ সালের আগেই তামাকমুক্ত দেশ গড়া সম্ভব। তবে এজন্য আগে আমাদের কৃষিখাতকে অনেক বেশি অগ্রাধিকার দিতে হবে। কৃষিকে আধুনিক, বাণিজ্যিক ও যান্ত্রিকীকরণ করতে হবে। কৃষকের ফসল দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা নিতে পারলেই অটোমেটিক্যালি তামাক চাষ বন্ধ হয়ে যাবে। বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস উপলক্ষে রবিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পিকেএসএফ মিলনায়তনে ‘বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস ২০১৯’ উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনার ও ‘তামাক নিয়ন্ত্রণ পদক ২০১৯ প্রদান’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন তিনি। তামাকবিরোধী জাতীয় প্লাটফর্মের আহ্বায়ক ও পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এর সভাপতি ড. কাজী খলিকুজ্জামান আহমেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আব্দুল মালিক। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী বলেন, আজ তামাকমুক্ত দিবস। আমি জানি না, তামাকমুক্ত দিবসটি রাষ্ট্রীয় কোন প্রতিষ্ঠান পালন করছে কিনা। পিকেএসএফ এদিবসটি পালন করায় ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, টোব্যাকোর ভয়াবহতা আমরা সবাই কম বেশি জানি। টোব্যাকো সমস্যা খুবই কঠিন ও জটিল। অনেক গণমাধ্যম-এনজিও তামাক বিরোধী কাজ করছে। কিন্তু এরপরেও বাস্তবতা ভিন্ন। ৩০-৩২ শতাংশ মানুষ এখনও তামাক নিচ্ছেন। নির্বাচনে তামাকের (বিড়ি, সিগারেট) ব্যবহার অগ্রতিরোধ্য। গ্রামে এমনও নির্বাচন আসলে রাত বিরাতে ব্যাপকভাবে সিগারেট বিলি হয়। কৃষকদের ইনোভেটিভ উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, তামাকের জন্য রংপুর খুব প্রসিদ্ধ ছিল। ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর অফিস ছিল, কার্যক্রম ছিল রংপুরে। সবচেয়ে দারিদ্র্যতম এলাকাগুলোকে টার্গেট করে তামাকের চাষ করানো হতো। এখন রংপুরে আলু চাষ হয়। কারণ কৃষকরা অনেক বেশি ইনোভেটিভ হয়ে গেছে। বিশেষ করে গাইবান্ধার পলাশবাড়ি, গোবিন্দগঞ্জে কৃষকদের খুবই ইনোভেটিভ হিসেবে দেখেছি। একসঙ্গে অনেক ফসল আবাদ করে। ৫০-৬০ দিনে ফসল হবে এমন সবজি করে। ফসলের ফলন বেশি হয়, দামও বেশি পায় ওই কৃষকরা। কুষ্টিয়ায় অনেক এলাকায় তামাকের ভয়াবহ চাষাবাদ। মন্ত্রী বলেন, টোব্যাকো কোম্পানিগুলো খুবই শক্তিশালী। ২২ হাজার কোটি টাকা রেভিনিউ দেয় টোব্যাকো। এই টাকা আমাদের জন্য অনেক বেশি। এই জন্য বেশিদিন আগে নয় বিএনপি-জামায়াতের জোটের আমলে বাজেট ছিল ৬১ হাজার কোটি টাকা। এই বছর আমাদের বাজেট ৪ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। আমাদের জিডিপি ছিল ৪ লাখ ৮৪ হাজার কোটি টাকা। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ লাখ কোটি টাকা। স্বাধীনতার পর প্রথম বাজেট ছিল ৭-৮শ’ কোটি টাকা। তিনি বলেন, এক সময় উন্নয়ন বাজেট ছিল ২০-২৩ হাজার কোটি টাকা। এখন তা প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা। দেশের উন্নয়নের জন্য তো রেভিনিউ দরকার। টোব্যাকো যে ২২ হাজার কোটি টাকা দেয় তা সরকার কিভাবে আর্ন করবে? টোব্যাকো বিরোধীরা যখন অর্থমন্ত্রীর কাছে যায় তখন তিনিও টোব্যাকো বন্ধের কথা বলেন। কিন্তু বাজেট করতে গিয়ে ওই টাকাটা বড় হয়ে দেখা দেয়। মন্ত্রী বলেন, তামাকজাত পণ্য উৎপাদনে টোব্যাকো কোম্পানিগুলো নানা ধরনের প্রণোদনা দেয় প্রলুব্ধ করে। সেখানে তামাকবিরোধী প্রণোদনা সরকারকে দিতে হবে। কৃষককে তামাকের বিরুদ্ধে প্রমোট করতে হবে। মন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার উচ্চতর সমৃদ্ধির ভিত্তি তৈরি করেছে। এটি করার জন্য আয় বাড়ানো দরকার, রেভিনিউ দরকার। সেটা কিভাবে সম্ভব? তামাক চাষ বন্ধ করে দিবো। তাহলে অলটারনেট (বিকল্প) কী? সেটা আগে বের করতে হবে। ভূমি রেজিস্ট্রেশনের ন্যায় স্বয়ংক্রিয় কোন কায়দায় সকলকে যদি ইনকাম ট্যাক্সের আওতায় নিয়ে আসা যায়, সময়, ডিমান্ড ও গুরুত্ব বিশেষ যদি ভাড়া বাড়ির ট্যাক্স নির্ধারণ করা যায় তাহলে ওই টোব্যাকোর ২২ হাজার কোটি টাকা কোন টাকাই নয়। বরং তারচেয়ে বেশি আর্ন করতে পারবে সরকার। আশা করছি সেটা হয়ে যাবে। চাষিকে যদি তামাক চাষ বন্ধ করতে বলি তাহলে সে অল্টারনেট কী করবে? আমাদের আলুর প্রয়োজন ৬০ থেকে ৭০ লাখ টন, সেখানে রংপুরসহ সারাদেশে আলু উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৩ লাখ টন। ৩৩ লাখ টন আলু বেশি। এই উদ্বৃত্ত আলু নিয়ে আমরা কী করব সেটা আমরা এখনও ঠিক করতে পারিনি। উদ্বৃত্ত এই আলু নিয়ে আমি নিজে কৃষিমন্ত্রী চরম দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি। চাষীরা তো আছেনই। ধান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই বছর আমাদের আমনে টার্গেট ছিল ১ কোটি ৪০ লাখ টন। সেখানে উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৫৩ লাখ টন ধান হয়েছে। ১৩ লাখ টন বেশি। আমনের ধানের চাহিদা বেশি থাকে। সেখানে শুকনো ধান নিয়েও কৃষক ধান বিক্রি করতে পারছে না। গ্রাহক বা ক্রেতা নাই। আম গতবছর অনেকে লোকসানে বিক্রি করেছে। এবারও সে রকম আশঙ্কা করা হচ্ছে। মাছের ক্ষেত্রে তাই হচ্ছে। কৃষক দাম পাচ্ছে না। মন্ত্রী বলেন, তামাকের ওপর নির্ভর করতে হবে এটা আমি বিশ্বাস করি না। তামাক বন্ধ হবেই। সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। আমাদের কৃষকের ফসল বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা নিতে হবে। কমার্শিয়াল এগ্রিকালচারই পারে তামাকমুক্ত দেশ গড়তে। অনেক সম্ভাবনার খাত কৃষিকে আধুনিক, বাণিজ্যিকীকরণ ও যান্ত্রিকীকরণ করে বিশ্ব বাজার ধরতে হবে।
×