ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ফখরুলের শূন্য আসনে উপনির্বাচন

গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বগুড়া-৬ আসনে বাড়ছে নির্বাচনী উত্তাপ

প্রকাশিত: ১০:১২, ১২ মে ২০১৯

 গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বগুড়া-৬ আসনে বাড়ছে  নির্বাচনী উত্তাপ

সমুদ্র হক ॥ তীব্র গরমের সঙ্গে যোগ হয়েছে বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপ নির্বাচনের উষ্ণতা। একাদশ সাধারণ নির্বাচনে বগুড়ার এই আসনটি নিয়ে সাধারণের যতটা কৌতূহল ছিল তার চেয়ে বেশি কৌতূহল উপ নির্বাচনকে ঘিরে। গেল নির্বাচনে বগুড়া সদর আসনে বিজয়ী হন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শপথ না নেয়ায় ইতোমধ্যে আসনটি শূন্য হয়েছে। নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে আগামী ২৪ জুন। মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন ২৩ মে। প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা পূরণে হাতে সময়ও বেশি নেই। যাচাই বাছাই শেষে টিকে যাওয়া প্রার্থীদের ঈদের সময়টি আসবে আশা ভরসা নিয়ে। এরপর নির্বাচনী প্রচারে ঈদ পুনর্মিলনীর পালাটি তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। রমজানের এই সময়টাতে সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। এই দৌড়ে আওয়ামী লীগ অনেকটা এগিয়ে। বিএনপি এগোতে পারছে না। লন্ডন প্রবাসী তারেক রহমানের নির্দেশের দিকে তাকিয়ে। সিগনাল আসেনি। বিএনপির এখনও হলুদ বাতি জ্বলে আছে। এরপর সবুজ বাতি জ্বলে না লাল বাতি জ্বলে তার অপেক্ষায়। এদিকে বিএনপির দাবি করা বগুড়া ঘাঁটির ঘরের পিলার নড় বড়ে হয়ে গেছে। কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বগুড়া জেলা কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। অতি দ্রুত আহ্বায়ক কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তার আগেই বিএনপি বিভাজিত। দুই পক্ষের দুইটি আহ্বায়ক কমিটি। একটিরও অনুমোদন আসেনি। একটিতে আছেন প্রবীণ ও ত্যাগী নেতারা। এই বিভাজন ও বিপর্যয়ের মধ্যে বিএনপি উপ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কি না এই নিয়ে জেলা পর্যায়ের কোন নেতা সরাসরি কথা বলছেন না। তবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ইচ্ছা তাদের ‘সাইন ল্যাঙ্গুয়েজে’ বুঝে নেয়া যায়। উল্টো জানতে চান ‘আপনারা কোন খবর পেয়েছেন কী।’ নাম প্রকাশ করতে না চেয়ে একজন বললেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনে যখন অংশ নিয়ে বিজয়ী ৬ জনের মধ্যে ৫ জন শপথ নিয়েছেন। তখন উপ নির্বাচনে অংশ না নেয়ার কোন অর্থ হয় না। মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ সময়ের আগে তারেক রহমানের পজেটিভ সিগনাল এলে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে তা প্রায় নিশ্চিত। সিগনাল না এলে কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ বিএনপির রাজনীতিতে একের পর এক নাটকীয় ঘটনা ঘটছে। বিএনপি সমর্থক সুধীজনের ক’জন বললেন ‘এখন কোন প্রেডিকশনই করা যায় না। অতি নাটকীয় কিছু ঘটলেও স্বাভাবিক বলে ধরে নিতে হবে। রাজনীতির মাঠ কখন যে কোনদিকে যাচ্ছে।’ তাদের বক্তব্যে মনে হলো মির্জা ফখরুল শপথ না নেয়ায় তারা ক্ষুব্ধ। মির্জা ফখরুল ‘কৌশলের’ কথা বলে যে ভাবে ডিফেন্ড করছেন তাও সাধারণের কাছে গ্রহণ যোগ্য হচ্ছে না। উপনির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগ বেশ আনন্দেই আছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদেরও দেখা যায় খোশ মেজাজে। বেশ কয়েক নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়ে বগুড়া-ঢাকা-বগুড়া দৌড়াচ্ছেন। গেল একাদশ নির্বাচনেও তারা ঢাকায় গিয়ে জোর লবিং চালিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত বগুড়া-৬ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছিল মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির (জাপা) নুরুল ইসলাম ওমরকে। তিনি অসন্তোষজনক ভোটে হেরে গিয়েছিলেন। একাদশ নির্বাচনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পেয়েছিলেন ২ লাখ ৬ হাজার ৯শ’ ৩ ভোট। জাপার নুরুল ইসলাম ওমর ভোট পেয়েছিলেন ৪০ হাজার ২শ’ ৬২। দশম নির্বাচনে জাপার এই প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে নাম আসছে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পারিবারিক ঐতিহ্যের পরিচিতির রিপুর রাজনৈতিক জীবন বর্ণাঢ্য। শিক্ষিত, মার্জিত, ভদ্র ব্যক্তিত্ব হিসেবে তার সুনাম আছে। একাদশ নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। রাজনৈতিক কারণে আওয়ামী লীগ জাপাকে আসনটি ছেড়ে দেয়। জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও পৌরসভার সাবেক জনপ্রিয় মেয়র রেজাউল করিম মন্টু উপনির্বাচনে অংশগ্রহণের ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন। আরও আছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক টি জামান নিকেতা, জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক শাহাদত আলম ঝুনু। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শাখা আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান বগুড়া-৬ আসনের উপ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন। প্রস্তুতি নিচ্ছেন সদ্যপ্রয়াত জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিনের ছেলে মাসুদুর রহমান মিলন। তিনি বগুড়া চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি। তার রাজনৈতিক ইমেজ ততটা নেই। বাবার পরিচয়ে তিনি পরিচিত। কমিউনিস্ট পার্টি বগুড়া জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ফরিদ একাদশ নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন। উপ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন। জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা নুরুল ইসলাম ওমর প্রার্থী হতে চান। তবে তিনি মহাজোটের প্রার্থী হবেন না পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জাপার প্রার্থী হবেন তা নিশ্চিত নয়। বিএনপির একাধিক সূত্র জানায় তারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। উপ নির্বাচনে অংশ করবে কি না এটা তারেক রহমানের ওপর নির্ভর করছে। আরেক সূত্রের মতে একাদশ নির্বাচনে বিএনপির যে প্রার্থীরা মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছিলেন তারা উপ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নতুন মুখ যুক্ত হচ্ছে। তাদের যুক্তি হলোÑ বগুড়ার মানুষ বিএনপিকে ভোট দেয়। আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন বগুড়া এখন আর বিএনপির ঘাঁটি নেই। যাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করা হলো (মিজা ফখরুল) তিনি অকৃতজ্ঞ হয়ে শপথ গ্রহণ করলেন না।
×