ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ

রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় তীব্র পানির সঙ্কট

প্রকাশিত: ১০:১২, ১২ মে ২০১৯

 রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় তীব্র পানির সঙ্কট

ফিরোজ মান্না ॥ রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় দেখা দিয়েছে পানির সঙ্কট। কোন কোন এলাকায় এক মাসেও সঙ্কট কাটছে না। তীব্র দাবদাহ এবং রমজানের কারণে এই সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করেছে। এসব এলাকায় পানির দাবিতে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধের মতো ঘটনা ঘটছে। জানা গেছে, শুষ্ক মৌসুমে পানির চাহিদা বাড়লেও ওয়াসার পানি সরবরাহ কমেছে। কয়েকটি এলাকায় বেশকিছু পানির পাম্প বন্ধ হয়ে আছে। ওইসব এলাকায় গাড়ি দিয়ে পানি সরবরাহ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান সমস্যার কথা স্বীকার করে জনকণ্ঠকে বলেন, কয়েকটি এলাকায় ‘পকেট’ সমস্যা রয়েছে। নানা কারণে কিছু এলাকায় পানির ঘাটতি থাকে। এসব এলাকায় আমরা গাড়ি দিয়ে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নিচ্ছি। তাই বলে গোটা ঢাকা শহরে চিত্র এক নয়। ঢালাওভাবে অভিযোগ করা ঠিক নয়। জানা গেছে, নগরীর কয়েকটি এলাকায় পানির সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুম ও তীব্র গরমে এই সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করেছে। অভিযোগ করা হলে, গাড়ি দিয়ে পানি সরবরাহের চেষ্টা করা হয়। তবে প্রয়োজনের তলনায় খুবই অপ্রতুল। অনেক এলাকায় রান্না, ধোয়া মোছাসহ জরুরী কাজও করা সম্ভব হচ্ছে না। নগরবাসী জীবন বাঁচানোর তাগিদে প্রতিদিন বিপুল অর্থ খরচ করে বাইরে থেকে পানি কিনে খাচ্ছেন। কয়েকদিন ধরে নগরের বিভিন্ন স্থানে পানির জন্য বিক্ষোভ হচ্ছে। পানির অভাবে সম্প্রতি মিরপুরের ১১ নম্বর সেকশনে পাম্পের সামনে বিক্ষোভ করেছে এলাকার মানুষ। রামপুরায় সড়ক অবরোধ করে রাখে পানির দাবিতে। জুরাইনে কিছুদিন ধরেই চলছে পানির সমস্যা। এলাকাবাসী প্রায়ই বিক্ষোভ করছে পানির দাবিতে। বিক্ষোভকারীরা বলছেন, পানির বিল কোন মাসে বকেয়া রাখা যায় না। এজন্য জরিমানা করা হয়। অথচ আমরা পানি পাচ্ছি না এটি দেখার কেউ নেই। যারা বিল করতে আসেন তারা বলেন, পানির সমস্যা আমাদের দেখার বিষয় না। আপনারা অভিযোগ করেন। পানির এই সঙ্কটের মধ্যে আবার কোথাও কোথাও পানির জন্য প্রিপেইড মিটার বসানোর কথা বলা হচ্ছে। বিল নেবেন নিয়মিত, পানি দেবেন না- তাতো মেনে নেয়া যায় না। এমনিতেই গরম, তার ওপর পানি নেই। পানি কিনে গোসল করা, খাওয়া, রান্না কি খুব সহজ কথা। দীর্ঘদিনের এ সমস্যা সমাধানের কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না ওয়াসা। তাই আমরা বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমেছি। একই রকম সমস্য পোস্তগোলা, নাজিমউদ্দিন রোড, চকবাজার, ইমামগঞ্জ, পাতলাখান লেন, আগামাসি লেন, আরমানিটোলা এবং বংশালের সিদ্দিক বাজার, বিআরটিসি বাস ডিপো, কাপ্তানবাজার, নাজিরাবাজার, পাকিস্তান মাঠ এলাকায়। এসব এলাকাতে যাও কিছু পানি থাকে তাতে ময়লা ও দুর্গন্ধ। একই চিত্র চানখাঁরপুল, নাজিমউদ্দিন রোড, সাতরোজা, হোসনি দালাল রোড এলাকায়। মালিবাগ, বেইলি রোড, শান্তিনগর এলাকার বাসিন্দাদের পানি পেতে খুবই কষ্ট করতে হচ্ছে। গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থেকে মানুষ পানি সংগ্রহ করছেন। এ অবস্থায় ডেমরার মাতুয়াইল, মোমেন বাগ, ডগাইর, পানি সঙ্কটে মহানগরীর শ্যামপুর, মাতুয়াইল, ডেমরা, পূর্ব রাজাবাজার, রায়ের বাজার, মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, মধুবাগ, বাড্ডা, উত্তরাসহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছে। ভুক্তভোগীরা ঢাকা ওয়াসার কাছে লিখিত, মৌখিক এবং অনলাইনে অভিযোগ দিয়েছেন। স্থানীয় কাউন্সিলর, এমপি ও মেয়রদের কাছেও অভিযোগ করেন। কিন্তু কোন প্রতিকার মিলছে না। বরং তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সমস্যা আরও প্রকট হচ্ছে। ওয়াসার এমডি বলেন, আমার জানা মতে রাজধানীর রামপুরা, বনশ্রী, সিদ্ধেশ্বরী, পল্টন, শেওরাপাড়া, কাজী পাড়া এলাকায় পকেট সমস্যা তৈরি হয়েছে। এ সব এলাকায় ভ্রাম্যমাণ টিউবওয়েল দিয়ে পানি সরবরাহ দেয়া হচ্ছে। মিরপুরের সমস্যা দূর করা হয়েছে তেঁতুলঝড়া ভাকুর্তা এলাকা থেকে পানি সরবরাহ দিয়ে। শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণে পানির কিছুটা সমস্যা হয়। তবে গত বছরের তুলনায় এবার এ সমস্যা অনেক কম। আমরা জনগণের সহযোগিতা চেয়েছি- যাতে পানির অপচয় কম করেন। আজ রবিবার থেকে রেডিও টেলিভিশনে পানি অপচয় রোধে বিজ্ঞাপন প্রচার করা হবে। ঢাকা ওয়াসার পরিচালক (টেকনিক্যাল) একেএম সহিদ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, রামপুরা-মধুবাগ এলাকায় পানির সমস্যা নিয়ে এলাকাবাসী আমাদের কাছে কোন অভিযোগ করেননি। কিন্তু শুনলাম তারা পানির জন্য সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন, যা দুঃখজনক। ওই এলাকার পানির সমস্যার সমাধানে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ঢাকা ওয়াসার বোর্ড চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ড. হাবিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, গ্রীষ্ম মৌসুম হওয়ায় কোন কোন এলাকায় পানি পেতে সমস্যা হচ্ছে বলে খবর পাচ্ছি। অনেকে বলছেন, পানিতে দুর্গন্ধ রয়েছে। ওয়াসার সক্ষমতার আলোকে বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। আশা করছি, নগরবাসীর কষ্ট অনেকাংশে লাঘব হবে। অনুসন্ধানে জানা যায়, নগরজুড়ে বিশুদ্ধ পানির সঙ্কটের সুযোগে ওয়াসার একশ্রেণীর অসাধু কর্মচারী পানি বাণিজ্য শুরু করেছে। এক গাড়ি পানির দাম ৫শ’ টাকা। কিন্তু বিক্রি করা হচ্ছে এক থেকে দেড় হাজার টাকায়। পানি না পেয়ে অনেকে বোতলজাত পানির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। অনেকেই গোসলসহ প্রয়োজনীয় কাজ সেরে আসছেন নগরীর বিভিন্ন এলাকার স্বজনদের বাসায় গিয়ে। হাতিরঝিলসহ রাজধানীর বিভিন্ন পুকুর এবং লেকেও অনেককে গোসল করতে দেখা গেছে। পানি সঙ্কটের কারণে রাজধানীবাসীর মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে।
×