ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দাবদাহে জনজীবন অতিষ্ঠ, কাল থেকে বৃষ্টি

প্রকাশিত: ১০:০৪, ১২ মে ২০১৯

 দাবদাহে জনজীবন অতিষ্ঠ, কাল  থেকে বৃষ্টি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অব্যাহত দাবদাহের কবলে পড়েছে দেশ। আবহাওয়া অফিসের হিসাব বলছে ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে মাঝে কয়েকদিন তাপপ্রবাহ কেটে গেলেও গত ৬ তারিখ থেকে আবার শুরু হয় এই তাপপ্রবাহ। ফণী আসার আগে বাংলা নববর্ষ প্রহেলা বৈশাখ থেকেই চলছে এই তাপপ্রবাহ। এই হিসাবে গত প্রায় ২০ দিনের বেশি সময় ধরে চলছে এই তাপপ্রবাহ। দাবদাহে দেশের তাপমাত্রা এই মৌসুমে ৪০ ডিগ্রীতেও পৌঁছে যায়। তবে এই তাপপ্রবাহের মাঝে সুখবর হলো আগামীকাল সোমবার থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানের বৃষ্টিপাত হতে পারে। আবহাওয়া অফিস বলছে ১৩ মে থেকে ১৬ মে পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টিপাত হলে তখন তাপপ্রবাহ কেটে যাবে। আবহওয়াবিদ আরিফ হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, এই তাপপ্রবাহ দ্রুতই কেটে যাবে। তিনি জানান, সোমবার থেকে দেশে বৃষ্টিপাত হতে পারে। ১৬ মে পর্যন্ত এই বৃষ্টিপাত থাকবে। এই সময় তাপমাত্রা কমে গিয়ে স্বস্তি মিলতে পারে। তবে তিনি উল্লেখ করেন ১৬ মের পরে আবারও গরমের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। এদিকে অব্যাহত দাবদাহের কারণে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে সারাদেশের জনজীবন। সবার একটাই প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে বৃষ্টিপাত কবে হবে। কবে শেষ হবে এই দাবদাহ। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে আজ রবিবার প্রকৃতিতে তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। দু’একদিনের মধ্যে বৃষ্টিও মিলতে পারে। তারা জানায়, বিচ্ছিন্নভাবে বৃষ্টি হলে দু’একদিনের জন্য হয়ত স্বস্তি মিলতে পারে। এরপর আবার তাপপ্রবাহ শুরু হতে পারে। এদিকে গরমের কারণে বাড়তি চাপের ফলে দেশের কোথাও কোথাও লোডশেডিং বেড়ে যাচ্ছে। অসহনীয গরমের সঙ্গে লোডশেডিং যুক্ত হয়ে মানুষের ভোগান্তি বেড়ে গেছে। আবহাওয়া অফিসের হিসাব বলছে গত এপ্রিল মাসের ১৪ তারিখ থেকে এই তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে। মাঝে দুদিন ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে বৃষ্টিপাত হয়েছে। এরপর আবারও প্রকৃতির এই দাবদাহ চলছে। ফণীর প্রভাবে দুদিন বৃষ্টিপাতের হিসাব বাদ দিলে প্রকৃতিতে একটানা ২০ দিনের বেশি সময় ধরে চলছে এই দাবদাহ। এর মাঝে তাপমাত্রাও উঠে যায় ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াসে। এই দাবদাহ সবচেয়ে বেশি পোড়াচ্ছে উত্তরের জেলা রাজশাহীকে। সেখানে গত কয়েকদিন ধরেই তাপমাত্রা একটা ৪০-এর কাছাকাছি অবস্থান করছে। এছাড়া এই রাজশাহীতে গত এপ্রিলের শেষ দিনে তাপমাত্রা উঠে যায় ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াসে। এদিকে গত কয়েকদিন ধরে সারাদেশের তাপমাত্রা অব্যাহতভাবে বাড়লেও শনিবার দেশের তাপমাত্রা আগের দিনের চেয়ে কিছুটা কমেছে। শুক্রবার যেখানে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯.৫ ডিগ্রী রেকর্ড করা হয়েছে। সেখানে শনিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে ৩৮.২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। রাজশাহী ও যশোরে এই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এদিকে আগের দিনের চেয়ে শনিবার ঢাকার তাপমাত্রাও কিছুটা কম ছিল। আগের দিন ঢাকার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৬.২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। সেখানে শনিবার তাপমাত্রা কমে দাঁড়ায় ৩৫.৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসে। এদিনে শনিবার রাজধানীর আবহাওয়া ছিল অনেকটা স্বস্তির। দুপুরের দিকে মেঘের আনাগোনা ছিল। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে আগামীকাল সোমবার নাগাদ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। বৃষ্টিপাত হলে তাপমাত্রা কিছুটা কমে স্বস্তি দেখা যেতে পারে। তবে এই অবস্থা বেশিদিন থাকবে না। আবারও গরমের মাত্রা বাড়বে বলে তারা উল্লেখ করেন। তবে আবহাওয়া অফিস জানায়, এবার দেশে আগেই মৌসুমি বায়ু প্রবেশ করতে পারে। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকেই বৃষ্টিপাতের দেখা মিলতে পারে। তবে মে মাসের শেষ দিকে সাগরে একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। তবে নিম্নচাপ ঘূর্ণীঝড়ে রূপ নেবে কিনা তা এখনই বলা যাচ্ছে না। আবহাওয়া অফিস বলছে লঘুচাপের বর্ধিতাংশ দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল অতিক্রম করে পশ্চিমবঙ্গ হয়ে উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে উল্লেখ করা হয়েছে নোয়াখালী, দিনাজপুর অঞ্চলসহ ঢাকা, রাজশাহী খুলনা, বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থা অব্যাহত থাকতে পারে। তবে দেশের উত্তর-পশ্চিমাংশে দিরে তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। অন্যত্র অপরিবর্তিত থাকতে পারে। রাজশাহী ॥ টানা খরার কবলে পড়েছে রাজশাহীসহ পুরো উত্তরাঞ্চল। ফণীর প্রভাবে মাঝে দুদিন মাত্র এ এলাকায় স্বস্তি মিললেও এরপর থেকে শুরু হয়েছে তীব্র তাপপ্রবাহ। বৈশাখের শুরু থেকেই তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে এ অঞ্চলে। আর গত ৪ মের পর থেকে তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রীর মধ্যে রয়েছে। টানা খরা আর তাপপ্রবাহে এই অঞ্চলের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। রমজানের মধ্যে ভ্যাপসা গরম আর লু হাওয়ায় রাস্তা-ঘাটে কমে গেছে মানুষের চলাফেরা। ঠিকমতো কাজ করতে পারছেন না প্রান্তিক মানুষেরা। হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে ডায়রিয়া রোগী। আবহাওয়া অফিস বলছে, আরও কয়েকদিন এ ধরনের পরিস্থিতি থাকতে পারে। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের জরুরী বিভাগের ডাঃ শামসুজ্জামান বলেন, ‘গরমের কারণে দেড় মাস ধরে ডায়রিয়া রোগী গড়ে প্রত্যেক দিন ৬০ জন করে ভর্তি হচ্ছেন। এছাড়াও তীব্র রোদের কারণে মাথা ব্যথাসহ বিভিন্ন রোগী ভর্তি হয়। যশোর ॥ সূর্যের তেজে সবার জীবন ওষ্ঠাগত। ক্রমেই দাপদাহ বেড়ে যাওয়ায় মানুষ রীতিমতো নাজেহাল। গরম সহ্য করতে না পেরে মানুষ হঠাৎ জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন। প্রচন্ড গরমে ক্লান্ত মানুষ বৃষ্টি কামনা করছে। রোদের প্রচন্ড তাপে প্রাণিকুলে হাঁসফাঁস অবস্থা বিরাজ করছে। আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে, যশোরে আপাতত বৃষ্টির কোন সম্ভাবনা নেই। দিনের বেলায় দাবদাহ আরও বাড়তে পারে। এদিকে প্রচন্ড তাপের মধ্যে কাজ করার কারণে রোজা রাখতেও পারছেন না তার মতো অনেক চাষী। নওগাঁ ॥ প্রখর রোদ আর অসহনীয় গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নওগাঁঁয় শুরু হয়েছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। দিনে-রাতে ৭ থেকে ৮ বার লোডশেডিং করা হচ্ছে বলে অভিযোগ গ্রাহকদের। এতে করে রোজাদারদের অবস্থা কাহিল হয়ে পড়েছে। ব্যাহত হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠু লেখাপড়া। বিদ্যুতের ভেলকিবাজিতে অতিষ্ঠ নওগাঁবাসী। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিজেদের মতো করে। নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (নেসকো) বলছে, কোন লোডশেডিং নেই। হঠাৎ করে বাড়তি চাপের কারণে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। মাগুরা ॥ প্রচন্ড তাপপ্রবাহে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। শ্রমজীবী মানুষেরা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। দেখা দিয়েছে নানা ধরনের রোগব্যাধি। হাসপাতালে ডায়রিয়া ও জ্বরের রোগীদের ভিড় বাড়চ্ছে। শ্রমিকরা রৌদ্রের কারণে মাঠে কাজ করতে পারছেন না। প্রচন্ড গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। তারা ধান কাটতে পারছে না। শিশুরা ডায়রিয়াসহ নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। মাগুরা সদর হাসপাতালে ১০ বেডের শিশু ওয়ার্ডে প্রায় শতাধিক শিশু ভর্তি রয়েছে। দুপুরের পর শহর ফাঁকা হয়ে পড়ছে কেউ ঘর থেকে বের হতে পারছে না।
×