ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

এক অসহায় পিতার সন্তানের জন্য দুধ চুরি এবং-

প্রকাশিত: ১০:০১, ১২ মে ২০১৯

 এক অসহায় পিতার  সন্তানের জন্য দুধ চুরি এবং-

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সন্তানের জন্য একটি সুপার শপ থেকে দুধ চুরি করে এক পিতা রীতিমতো আলোচনার জন্ম দিয়েছেন। এই অসহায় পিতার জন্য রীতিমতো চোখের পানি ঝরছে দেশবাসীর। তার চেয়েও বেশি আলোচনার জন্ম দিয়েছেন সেই পিতাকে আটকের পর মানবিক কারণে সহায়তা করে ছেড়ে দেয়া এক পুলিশ কর্মকর্তা। সন্তানের জন্য বাবা অনেক কিছুই করতে পারে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তা হয়ে সেই পিতাকে অপরাধের দায় থেকে মুক্তি দিয়ে চাকরির ব্যবস্থা করে দেয়ার চেষ্টার ঘটনা যেন বিরল ইতিহাস সৃষ্টি করতে যাচ্ছে। ঘটনাটি ফেসবুকে রীতিমতো ভাইরাল হয়েছে। ওই বাবা ও পুলিশ কর্মকর্তা দুই ব্যক্তিই এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রীতিমতো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন। হতভাগ্য সেই পিতাকে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছেন অনেকেই। স্বপ্ন নামের যে সুপার শপ থেকে ওই হতভাগ্য পিতা দুধের প্যাকেট চুরি করেছিলেন, আপাতত সেই স্বপ্ন সুপার শপেই ওই পিতার চাকরির ব্যবস্থা হচ্ছে। শনিবার ডিএমপির খিলগাঁও জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার জাহিদুল ইসলাম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্ট দেন। সেই পোস্টে তিনি জানান, শুক্রবার রাত আনুমানিক পৌনে নয়টার দিকে মালিবাগ সড়কে চেকপোস্ট ডিউটি তদারকি করছিলেন। আচমকা এক জায়গায় মানুষের হট্টগোল দেখা যায়। ঘটনা জানার জন্য একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে সেখানে পাঠানো হয়। কিছুক্ষণ পর বেশকিছু লোক ২৫/৩০ বছর বয়সী একজন লোককে টেনে-হিঁচড়ে তার কাছে নিয়ে এলো। ঘটনা জানতে চাওয়ার এক পর্যায়ে বেরিয়ে আসে হৃদয় বিদারক সেই ঘটনা। জানা গেল, রাজধানীর খিলগাঁওয়ে একটি সুপার শপ থেকে দুধ চুরি করে পালাচ্ছিলেন তিনি। চোর চোর বলে তাকে মারধর করে স্থানীয়রা তার কাছে নিয়ে এসেছে। জনতার মধ্যে একজন জানান, লোকটা চোর। চুরি করে পালাচ্ছিল। লোকটিকে শক্ত করে ধরে রাখা এক সিকিউরিটি গার্ড জানায়, লোকটি স্বপ্ন সুপার শপ থেকে চুরি করে পালাচ্ছিল। পরে জানা গেল, লোকটি এক প্যাকেট দুধ চুরি করে পালাচ্ছিল। দুধ চুরির কারণ জিজ্ঞেস করতেই সিকিউরিটি গার্ড জানান, বাচ্চাদের ন্যানো দুধের প্যাকেট চুরি করেছিল। লোকটি দেখতে বেশ ভদ্রলোক। দুধ চুরির কারণ জিজ্ঞাসা করতেই কেঁদে ফেলেন তিনি। বলেন, তিন মাস হলো চাকরি নেই। পকেটে পয়সা নেই। ঘরে ছোট্ট বাচ্চা আছে। দুধ কেনার টাকা নেই। ততক্ষণে আর উপস্থিত জনতার বুঝতে বাকি রইলা না, লোকটি আসলে চোর নয়। বাচ্চার দুধ কেনার টাকা না থাকায় চুরি করেছে। উপস্থিত সবাই আর চোখের জল ধরে রাখতে পারছিল না। অসহায় পিতাকে আঘাত করার ব্যথা আর কেউ সইতে পারছিলেন না। যারা না বুঝে মারধর করেছেন, তারা রীতিমতো মাফ চেয়েছেন। পুলিশ কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম জানান, একজন পিতা কতটা অসহায় আর নিরূপায় হলে এমন কাজ করতে পারেন। ওই পিতার জায়গায় তিনি হলেও হয়তো তাই করতেন। অথবা তার চেয়েও বেশি কিছু করতেন। দুধের প্যাকেটের দাম ৩৯০ টাকা। পরে তিনি দুধের টাকা দিয়ে দেন। এমনকি ওই পিতার নাম ঠিকানা রেখে ছেড়ে দেয়া হয়। জানা গেছে, লোকটি হোসাফ টাওয়ারে একটি মোবাইল ফোনের দোকানে চাকরি করতেন। অনেকেই লোকটিকে সহায়তা করার জন্য এগিয়ে এসেছেন। তার চাকরির ব্যবস্থা করার চেষ্টা চলছে। পুলিশ কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, আপাতত স্বপ্ন সুপার শপ কর্তৃপক্ষই ওই হতভাগ্য পিতাকে চাকরি দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। আপাতত তার স্বপ্নতেই চাকরি হচ্ছে। পরে প্রয়োজনে আরও সুবিধাজনক জায়গায় ওই পিতার চাকরির ব্যবস্থা করা হবে।
×