ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ছবির মর্মকথা বোঝার চেষ্টা করতেন জয়নুল আবেদিন

প্রকাশিত: ০৯:৪২, ১২ মে ২০১৯

 ছবির মর্মকথা বোঝার চেষ্টা করতেন  জয়নুল আবেদিন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এদেশের শিল্পভূমির ভিত্তিটা গড়ে ওঠে তারই প্রচেষ্টায়। শিল্পচর্চা আন্দোলনের বিকাশেও তার অবদান অসামান্য। দেশের চিত্রকলা শিক্ষার সঙ্গে জড়িয়ে আছে তার মেধা ও মনন। শনিবার সেই কীর্তিমান শিল্পীকে স্মরণ করল বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর। এদিন সকালে জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ‘শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন : শিল্পের শিক্ষাগুরু’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে মূল প্রবন্ধ রচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সহকারী অধ্যাপক শিল্পী দুলাল চন্দ্র গাইন। আলোচনায় অংশ নেন চারুকলা অনুষদের অধ্যাপক চিত্রশিল্পী ড. ফরিদা জামান, শিল্প সমালোচক অধ্যাপক মঈনুদ্দীন খালিদ এবং শিল্পীপুত্র মইনুল আবেদিন। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন জাদুঘর বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাপতি শিল্পী হাশেম খান। স্বাগত বক্তব্য দেন জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ রিয়াজ আহমেদ। আলোচনায় মঈনুদ্দীন খালিদ বলেন, জয়নুল আবেদিনকে নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন। তিনি তথাকথিত জীবনের কাছে হার মানেননি। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জনজীবনের প্রতি ছিল তার আকুল আবেদন। তিনি ছবি আঁকার আগে ছবির প্রেক্ষাপট ছবির মর্মকথা বোঝার চেষ্টা করতেন। তারপর তিনি ছবি আঁকতেন। এ কারণেই তিনি বলতেন, নদীর ছবি আঁকার আগে পানির দোলনই আগে বুঝতে হবে। জয়নুল আবেদিনের চিন্তা-ভাবনা, কর্ম আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে আরও ঐশ্বর্যমন্ডিত করেছে। হাশেম খান বলেন, আমার জীবন ধন্য পিতৃতুল্য শিক্ষক জয়নুল আবেদিনের সান্নিধ্য পেয়ে। শিক্ষার্থীরা ছিল তার ছেলের মতো। তার কথায় ছিল প্রেরণা। আমরা অনুপ্রাণিত হতাম শিল্পচর্চায়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষায় ও মননসম্পন্ন মানুষ গড়ে তুলতে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের জীবনকর্ম ও সৃষ্টিশীলতা বিশেষ গুরুত্ববহ। ফরিদা জামান বলেন, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের শিল্পকর্ম নতুন প্রজন্মকে সৃজনশীল কাজে নিরন্তর অনুপ্রেরণা যোগাবে? নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের আদর্শ হিসেবে তিনি থাকবেন। তার মতাদর্শ, চিন্তাশক্তি, ভাবনার ব্যাপ্তিটা তার সৃষ্টকর্মের মধ্যে তুলে ধরতেন। দুলাল চন্দ্র গাইন রচিত মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে ড. শিহাব শাহরিয়ার বলেন, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন একাধারে বাংলাদেশের শিল্প আন্দোলনের পথিকৃৎ, সফল শিল্পী-শিক্ষক, বাঙালী সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান ধারক-বাহক ও সেবক এবং মানবতার প্রেমিক। শিল্পের টানে একান্ত নিজ প্রচেষ্টায় কলকাতায় গিয়ে সরকারী আর্ট স্কুলে ভর্তি হন এবং ছাত্র অবস্থাতেই তরুণ শিল্পী হিসেবে সারা বাংলায় সুপরিচিত হয়ে ওঠেন। ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ চিত্রমালার মাধ্যমে মানবতাবাদী শিল্পী হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। দেশভাগের প্রেক্ষাপটে ১৯৪৮ সালে ঢাকায় একটি শিল্পশিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ার নেতৃত্ব দান তার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। খুব ছোটবেলা থেকেই তিনি ছবি আঁকতে পছন্দ করতেন। তার বিখ্যাত চিত্রকর্মের মধ্যে রয়েছে দুর্ভিক্ষ-চিত্রমালা, সংগ্রাম, সাঁওতাল রমণী, ঝড়ু, কাক, বিদ্রোহী ইত্যাদি। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে গ্রামবাংলার উৎসব নিয়ে আঁকেন ৬৫ ফুট দীর্ঘ বিখ্যাত ছবি নবান্ন। তিনি চিত্রাঙ্কনের চেয়ে চিত্রশিক্ষা প্রসারে অনেক বেশি সময় ব্যয় করেছেন। মইনুল আবেদিন বলেন, ব্যক্তি হিসেবে ভীষণ কর্মঠ এক মানুষ ছিলেন জয়নুল আবেদিন। কাজের ভেতর ডুবে থাকতেন সারাক্ষণ। জীবনের পুরোটা সময় ব্যয় করেছেন শিল্পচর্চার তাগিদে। আর একজন শিল্পী হিসেবে বাবাকে বলা হয় ‘মাস্টার অব ড্রইং’।
×