ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দেশে প্রশিক্ষিত নার্সের সঙ্কট

প্রকাশিত: ০৯:৪১, ১২ মে ২০১৯

 দেশে প্রশিক্ষিত নার্সের সঙ্কট

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকারী পর্যায়ে বিপুলসংখ্যক নিয়োগ দেয়ার পরও দেশে প্রশিক্ষিত নার্সের সঙ্কট রয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, বিশ্বের সব দেশে চিকিৎসকদের চেয়ে নার্সের সংখ্যা বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে তার উল্টো অবস্থা বিরাজ করছে। প্রয়োজনের তুলনায় দেশে প্রায় দু’লাখ নার্স কম রয়েছে। কোথাও কোথাও নার্স আছে অনুমোদিত পদের প্রায় অর্ধেক। ফলে রোগীরা মানসম্পন্ন চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে না। এ সুযোগে চিকিৎসা সেক্টরে প্রবেশ করছে অনেক ভুয়া নার্স। ভুয়া নার্সের কারণে চিকিৎসা সেক্টরে ভুল সেবায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগও উঠছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের চিকিৎসাসেবার মান গ্রহণযোগ্য করে তুলতে যা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি শিক্ষাবর্ষে ডাক্তারি আর নার্সিং শিক্ষায় ছাত্রছাত্রী ভর্তির হার প্রায় সমান সমান। ফলে গোড়াতেই ঘাটতি শুরু হয়। নার্সের সংখ্যা বাড়াতে হলে প্রতি বছর মেডিক্যাল কলেজগুলোয় যে সংখ্যক ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা হয়, নার্সিংয়ে এর চেয়ে কমপক্ষে তিন গুণ বেশি ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা দরকার বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এমন অবস্থার মধ্য দিয়ে আজ পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক সেবিকা দিবস। বিশেষজ্ঞরা জানান, দেশে সেবিকার সংখ্যা বাড়াতে হবে। একজন চিকিৎসকের বিপরীতে ৪ থেকে ৫ জন সেবিকার দরকার রয়েছে। সেখানে রয়েছে মাত্র এক থেকে দু’জন সেবিকা। দেশে দক্ষ সেবিকা তৈরিতে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। রোগী সেবায় সেবিকাদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোগীদের অধিকাংশ সময় থাকতে হয় সেবিকাদের তত্ত্বাবধানে। মায়া-মমতা মাখানো সেবা দিয়ে একজন রোগীর সুস্থ হওয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে তারা। ক্রিমিয়ার যুদ্ধে আহত সৈনিকদের সেবা শুশ্র‍ুষার মাধ্যমে সুস্থ করে তুলে ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে, শুধু চিকিৎসা দ্বারা রোগীকে সম্পূর্ণরূপে নিরাময় করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে সেবিকার ভূমিকা অপরিসীম যা কেবল শিক্ষিত ও দক্ষ সেবিকা দ্বারাই প্রদান করা সম্ভব। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও জাতীয় স্বাস্থ্য আন্দোলনের সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ রশিদ-ই মাহবুব জনকণ্ঠকে জানান, চিকিৎসা সেক্টরে সেবিকাদের অবদান অনস্বীকার্য। মানসম্পন্ন সেবা ব্যবস্থাপনা পরিপূর্ণ করতে হলে অবশ্যই রোগী, ডাক্তার ও নার্সের সংখ্যাগত সমন্বয় সাধন করা জরুরী। বিশেষ করে হাসপাতালে ডাক্তাররা যতই রোগীর চিকিৎসা দিন না কেন, নার্সদের সেবা ছাড়া ওই চিকিৎসা পূর্ণতা পাবে না। পর্যাপ্ত নার্স না থাকলে ডাক্তারদের কিছুই করার থাকে না। কিন্তু আমাদের দেশে এ খাতে জনবল বাড়ানোর গতি খুবই মন্থর। আগের চেয়ে পরিস্থিতির উন্নতি হলেও এখনও প্রতি শিক্ষাবর্ষে ডাক্তারি আর নার্সিং শিক্ষায় ছাত্রছাত্রী ভর্তির হার প্রায় সমান সমান। ফলে গোড়াতেই ঘাটতি শুরু হয়। নার্সের সংখ্যা বাড়াতে হলে প্রতি বছর মেডিক্যাল কলেজগুলোয় যে সংখ্যক ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা হয়, নার্সিংয়ে এর চেয়ে কমপক্ষে তিন গুণ বেশি ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা দরকার। এ ছাড়া এখনও যেহেতু নার্সিং পেশায় অপেক্ষাকৃত কম সচ্ছল পরিবারের ছেলেমেয়েরা যুক্ত হয়, তাই শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং চাকরি- সব ক্ষেত্রেই তাদের বিভিন্নমুখী আর্থিক ও আবাসিক সুবিধার ব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন। শুধু চিকিৎসা দ্বারা রোগীকে সম্পূর্ণরূপে নিরাময় করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে সেবিকার ভূমিকা অপরিসীম যা কেবল শিক্ষিত ও দক্ষ সেবিকা দ্বারাই প্রদান করা সম্ভব বলে মনে করেন অধ্যাপক ডাঃ রশিদ-ই মাহবুব। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, দেশে স্বাভাবিক চিকিৎসাসেবার স্বার্থে নার্সের সংখ্যা বৃদ্ধির বিকল্প নেই। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিপুল সংখ্যক নার্স নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানদ- অনুযায়ী দেশে সেবিকার সংখ্যা বাড়াতে হবে। একজন চিকিৎসকের বিপরীতে চার থেকে পাঁচজন সেবিকার দরকার রয়েছে। চিকিৎসাসেবা বলতেই মানুষ সবার আগে ডাক্তারদের বুঝে থাকে। নার্সদের বিষয়টি তেমন আলোচনায় আসে না। আবার সরকারী-বেসরকারী হাসপাতাল বা ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসাসেবা দেখভালের দায়িত্ব স্বাস্থ্য অধিদফতরের হলেও নার্সদের বিষয়টি এ অধিদফতরের আওতায় নয়। এটার জন্য আলাদা বিভাগ আছে। সেবা পরিদফতরের মাধ্যমে নার্সদের শিক্ষা, নিয়োগ, চাকরিসহ যাবতীয় বিষয় পরিচালিত হয়। এ কারণে এক ধরনের ফারাক থেকেই যায়। নার্স সঙ্কট দূর করা না গেলে চিকিৎসাসেবা কখনই পরিপূর্ণ মানসম্পন্ন অবস্থানে নেয়া যাবে না। এ জন্যই আমরা দেশে ডাক্তার সংখ্যা, রোগীর সংখ্যা আর হাসপাতালের বেডের দিকে নজর রেখে নার্সিং সেক্টরকে সমানতালে সম্প্রসারিত করতে মন্ত্রণালয়কে অনেকবার সুপারিশ করেছি বলে জানান অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ। বাংলাদেশ ডিপ্লোমা বেকার নার্সেস এ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব আসাদুজ্জামান বলেন, মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার বেকার নার্সের সরকারী চাকরির বয়স চলে গেছে। প্রশিক্ষিত নয় হাজার নার্স রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে। অথচ সরকারের নীতিনির্ধারকেরা প্রায়ই বলেন নার্সের অভাবে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। তাই পূর্বের ন্যায় নিয়োগকালে বয়সসীমা ৩৫ বছর নির্ধারণ করে অতি সত্বর পূর্বের নিয়ম ব্যাচ, মেধা ও জ্যেষ্ঠতা অনুসারে নিয়াগ দিতে হবে।
×