ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘সক্রেটিসের পর খালেদা’

প্রকাশিত: ০৯:৩৮, ১২ মে ২০১৯

 ‘সক্রেটিসের পর খালেদা’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অন্যায়ের প্রতিবাদ করেন বলেই বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। শনিবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে চলন্ত বাসে নার্স শাহিনুর আক্তার তানিয়াকে গণধর্ষণ করে হত্যাকারীদের ফাঁসি দাবিতে মহিলা দল আয়োজিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অভিযোগ করেন। অপর এক অনুষ্ঠানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, বর্তমান সংসদে কে গেল আর কে গেল না এটা বড় বিষয় নয়। রিজভী বলেন, ক্ষমতাসীনরা গণতন্ত্রকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। কারাগারে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দিন পার করছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। এরপরও তার মাথা নত করা যায়নি। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে শীঘ্রই আন্দোলন কর্মসূচী শুরু হবে জানিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, জেল-জুলুম মাথায় নিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে মাঠে থাকতে হবে। রিজভী বলেন, বিগত আড়াই হাজার বছরের মধ্যে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য একজন জীবন দিয়েছিলেন। তিনি হলেন গ্রীক দার্শনিক সক্রেটিস। তিনি কখনও তার কথা ও সত্য উচ্চারণ থেকে দ্বিধান্বিত হননি। আর আড়াই হাজার বছর পরে আরেকজন হলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী ও স্পীকার নারী। অথচ কী দুর্ভাগ্যের বিষয় পাইকারি হারে নারী নির্যাতন চলছে। নারী নির্যাতন নির্মূল করার দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু নারী নির্যাতন নির্মূল দূরে থাক আমরা অনেক সময় উস্কানি দিতে দেখেছি। তিনি বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতনের কাজগুলো যারা করছে তাদের অধিকাংশই ক্ষমতাসীন দলের লোক। আর ক্ষমতাসীন দলের লোক বলেই তারা পার পেয়ে যাচ্ছে। তারা সরকারের আনুকূল্য পাচ্ছে। আনুকূল্য পাচ্ছে বলেই এ সামাজিক অপরাধ সরকার ঠেকাতে পারছে না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদের নিখোঁজ হওয়া ও বর্তমানে ভারতে অবস্থান প্রসঙ্গে রিজভী বলেন আজকে তিনি ভারতে কেন? কারণ তিনি মেধাবী ছাত্র ছিলেন। পরে তিনি রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন, মন্ত্রী হয়েছেন এবং কয়েকবার এমপিও ছিলেন। কিন্তু এক অন্ধকারের মৃত্যুকূপের মধ্যে তাকে ফেলে রাখা হয়েছে। আজ সেখানে তিনি মানবেতর জীবনযাপন করছেন। যুবদল সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর মামলার বিষয়ে রিজভী বলেন, সব মামলায় তার জামিন হয়ে গেছে। এরপরও টুকুর মুক্তি হচ্ছে না। কারণ, মুক্তি পেলেই তিনি সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলবেন। তাই আবারও তার বিরুদ্ধে দু’টি মামলা দিয়ে তাকে কারাগারে রাখা হয়েছে। মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন সংগঠননের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমদ, সংগঠনের নেতা জেবা খান, হেলেন জেরিন খান প্রমুখ। সংসদে কে গেল এটা বড় বিষয় নয়- নোমান ॥ বর্তমান জাতীয় সংসদ জনগণের কাছে কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান। তিনি বলেন, এই সংসদে কে গেল আর কে গেল না এটা বড় বিষয় নয়। শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে মজুলম জননেতা মওলানা ভাসানীর ঐতিহাসিক ফারাক্কা লংমার্চ দিবস উপলক্ষে ‘ভাসানী অনুসারী পরিষদ’ নামক একটি সংগঠন আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, দেশে যে সমস্যা চলছে সে সমস্যা খালেদা জিয়ার মুক্তির মাধ্যমেই সমাধান হবে। মওলানা ভাসানীর স্মৃতিচারণ করে নোমান বলেন, ভাসানী আজীবন শ্রমজীবী ও কৃষিজীবী মানুষের জন্য রাজনীতি করেছেন। ফারাক্কা অভিমুখে লংমার্চ যাত্রা-এটা আমরা প্রথমে মওলানা ভাসানীর কাছেই শিখেছি। তার আদর্শে আনুপ্রাণিত ছিলাম আমরা, এখনও আছি। নোমান বলেন, দেশে দীর্ঘদিন ধরে গণতন্ত্র অনুপস্থিত। এই গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য বুলেটের চেয়ে শক্তশালী ব্যালটের একটি সুযোগ হয়েছিল গত ৩০ ডিসেম্বর। সেই সুযোগ আওয়ামী লীগের পেশিশক্তির কাছে পরাজিত হয়েছে। ৩০ ডিসেম্বরের ভোট ২৯ তারিখই হয়ে গেছে। তাই এই সংসদ জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেন, উন্নয়নের নামে লুটপাট করছে ক্ষমতাসীনরা। তাই সরকারের উন্নয়নের রাজনীতি অসার হয়ে গেছে। গণতন্ত্রবিহীন উন্নয়ন কখনও গ্রহণযোগ্য নয়। নোমান বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আমাদের রাজনীতির বিরাট একটি অর্জন। রাজনীতিতে এত অল্প সময়ে গড়ে ওঠা এই ইতিবাচক প্ল্যাটফর্মটিকে আরও সমৃদ্ধ করতে হবে। জাতীর প্রয়োজনে এটি গঠিত হয়েছে। অন্য দলগুলোকে আরও যোগ করে ঐক্যফ্রন্টকে আরও বেশি শক্তিশালী করতে হবে। আয়োজক সংগঠনের চেয়ারম্যান ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ জাফরউল্লাহ চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন সংগঠনের নির্বাহী চেয়ারম্যান অধ্যাপক জসিম উদ্দীন আহমেদ, মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, প্রেসিডিয়াম সদস্য নঈম জাহাঙ্গীর, জহির উদ্দীন স্বপন প্রমুখ।
×