ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

খুলনায় ছেলেধরা সন্দেহে পিটুনিতে বৃদ্ধ নিহত

প্রকাশিত: ০৯:০৫, ১২ মে ২০১৯

খুলনায় ছেলেধরা সন্দেহে  পিটুনিতে বৃদ্ধ নিহত

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ রোহিঙ্গা সন্দেহে গণপিটুনিতে অজ্ঞাত এক বৃদ্ধ (৬০) নিহত হয়েছেন। শুক্রবার রাতে ডুমুরিয়া উপজেলার মাগুরখালী ইউনিয়নের কাঠালীয়া বাজারে এ ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকা সন্দেহে সাহস ঘোষগাতী গ্রামের মেহেদী মোড়ল ও কাঠালীয়া বাজারের মুদি দোকানদার মধুসূদন মন্ডলকে আটক করেছে। জানা গেছে, শুক্রবার রাতে অজ্ঞাত ওই বৃদ্ধ কাঠালীয়া বাজার এলাকায় আসে। তাকে কোথা এসেছে, তার পরিচয় কি জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর দেয়না। তখন রোহিঙ্গা সন্দেহে স্থানীয় লোকজন উক্ত বৃদ্ধকে পিটিয়ে আহত করে। এ সময় কেউ কেউ তাকে ছেলে ধরা বলেও ধারণা করে। পিটুনিতে গুরুতর আহত হলে তাকে নিকটবর্তী পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি হাসপাতালে নেয়ার পথে তিনি মারা যান। পরে নিহত ব্যক্তিকে ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ফিরিয়ে আনার সময় ডুমুরিয়া উপজেলার মাগুরখালী পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই রণজিৎ নিহত ব্যক্তির মহদেহ উদ্বার এবং দুই জনকে আটক করে। ডুমুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম বিপ্লব জানায়, নিহত ব্যক্তির নাম পরিচয় জানা যায়নি। লোকটির মস্তিষ্ক বিকৃত ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় দুইজনকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে আটক দুইজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে ডুমুরিয়া থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এদিকে একই দিন রাতে উপজেলার আটলিয়া ইউনিয়নের নরনিয়া গ্রামে ছেলেধরা সন্দেহে এক নারীকে গ্রামবাসী আটক করে পিটিয়ে আহত করে। খবর পেয়ে মাগুরাঘোনা পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। যশোরে গণধোলাই স্টাফ রিপোর্টার যশোর অফিস থেকে জানান, ঝিকরগাছা ও শার্শায় মানসিক প্রতিবন্ধী কিংবা অপরিচিত লোকজনের এলোমেলো চলাফেরা দেখলেই ছেলেধরা সন্দেহে গণধোলাই দিচ্ছে এলাকাবাসী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ানোয় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। যদিও পুলিশ বলছে, ছেলেধরা নিছক গুজব। আর যদি তারা ছেলেধরা হয়েও থাকে, এভাবে মারপিট করা ঠিক না। তাদের পুলিশে সোপর্দ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। যশোর পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) আনছার উদ্দিন বলেন, কিছু মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে গুজব ছড়াচ্ছে। এলাকার লোকজন অপরিচিত ও মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিদের দেখলেই ‘ছেলেধরা’ গুজবে গণধোলাই দিচ্ছে। এখনও পর্যন্ত কোন সত্যতা মেলেনি। এ বিষয়ে সচেতনতার জন্য ঝিকরগাছার ওসিকে মাইকিং করতে বলেছি। যশোরে কোথাও রোহিঙ্গা কিংবা ছেলেধরার কোন ঘটনা ঘটেনি। গুজব না ছড়িয়ে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। সন্দেহজনক কাউকে দেখলেই মারপিট নয়, পুলিশে খবর দিন। জানা যায়, কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও এলাকায় গুজব ছড়ানো হয়েছে রোহিঙ্গারা শিশু অপহরণ করছে। এটা নিয়ে অভিভাবকরাও আতঙ্কিত। এই আতঙ্কের মধ্যে এলাকায় কোন অপরিচিতি লোককে এলোমেলো চলাফেরা করতে দেখলেই গণধোলাই দেয়া হচ্ছে। শুক্রবার সকালে বেনাপোল মাছ বাজার এলাকায় ছেলেধরা সন্দেহে এক নারীকে মারপিট করে এলাকাবাসী। পরে তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। একই দিন ঝিকরগাছার জননী সুপার মার্কেট এলাকায় এক যুবককে গণধোলাই দেয় স্থানীয়রা। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে পারবাজার এলাকায় অপর এক যুবককে ছেলেধরা সন্দেহে মারপিট করা হয়। গত বুধবার রাতে শ্রীরামপুর গ্রামে ও নওয়াপাড়া গ্রামে দুই মহিলাকে গণপিটুনি দেয়া হয়। এছাড়াও মঙ্গলবার বিকেলে বেজিয়াতলা গ্রামে এক ব্যক্তিকে গণধোলাই দেয় স্থানীয়রা। ছেলেধরা ও রোহিঙ্গা অপহরণকারী গুজবে এলাকায় এইসব অপরিচিত লোকদের এলোমেলো চলাফেরা করতে দেখে গণধোলাই দিয়েছে। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক আরও বেশি ছড়িয়ে পড়েছে। গুজবে কান না দিয়ে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ঝিকরগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ আবদুর রাজ্জাক। ঝিকরগাছা থানার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে বৃহস্পতিবার জনসচেতনামূলক পোস্ট দিয়েছেন ওসি। তিনি উল্লেখ করেন, সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে কতিপয় লোক শিশু পাচারকারী/রোহিঙ্গা বলে অভিহিত করে মানসিক ভারসাম্যহীন অজ্ঞাতনামাদের মারপিট করে এলাকায় গুজব সৃষ্টি করছে। এতে সাধারণের জনমনে ভীতি প্রদান করছে। শিশু পাচারকারী দলের সদস্য আটক হয়েছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে ঝিকরগাছা থানা পুলিশ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে হাজির হয়। বিষয়টি সম্পর্কে উপস্থিত স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিসহ আটককৃত ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার কোন সত্যতা পাওয়া যায় নাই। শিশু হয়েছে, এমন কোন ব্যক্তি লিখিত কিংবা মৌখিক অভিযোগ কেউ করেনি। কতিপয় ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে গুজব সৃষ্টি করে অহেতুক জনমনে ভীতি সৃষ্টি করছে।তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, সঠিক তথ্য প্রমাণ ব্যতীত গুজব সৃষ্টি না করে ঘটনা সংক্রান্তে কোন ব্যক্তির অভিযোগ থাকলে অভিযোগ দায়ের করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো। অভিযোগ প্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে তাৎক্ষণিক বিধি মোতাবেক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সাতক্ষীরায় মাইকিং স্টাফ রিপোর্টার সাতক্ষীরা থেকে জানান, ছেলেধরা ও বোরকাপরা পার্টি নিয়ে সাতক্ষীরা জেলাজুড়ে আতঙ্ক চলছে গত এক সপ্তাহ ধরে। বোরকাপরে পুরুষেরা বিভিন্ন এলাকা থেকে ছোট শিশুদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে এমন প্রচারের পর এবার জেলা জুড়ে রোহিঙ্গা ছেলেধরা নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ছেলেধরা সন্দেহে সাতক্ষীরা শহরের কয়েকটি এলাকায় কয়েক রোহিঙ্গা সাধারণ মানুষের হাতে ধরা পড়ার পর এবার রোহিঙ্গা ছেলেধরা মনে করে স্থানীয় এক মোটরসাইকেল চালককে পিটিয়ে জখম করেছে স্থানীয় এলাকাবাসী। শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে সদর উপজেলার বাঁকাল এলাকায় এই মোটরসাইকেল চালককে পিটিয়ে আহত করা হয়। আহত মোটরসাইকেল চালকের নাম রিয়াজ উদ্দীন মোড়ল (৪০)। তিনি দেবহাটা উপজেলার গোবরাখালী গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে। আর এই ঘটনার পর শুক্রবার সকাল থেকে সাতক্ষীরা সদর থানা পুলিশের পক্ষ থেকে শহরজুড়ে মাইকিংয়ে প্রচার করা হচ্ছে ‘গুজবে কান না দেয়ার জন্য’। আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। গত সপ্তাহে সাতক্ষীরা সীমান্ত এলাকায় এক বয়স্ক রোহিঙ্গা সদস্য বাচ্চা চুরির সময় জনতার হাতে ধরা পড়ে এমন প্রচারের পর থেকেই গুজবের ডালপালা ছড়াতে থাকে। এরপর থেকে বাসটার্মিনাল, তালা, কলারোয়াসহ শহরের বিভিন্ন স্থানে এমন রোহিঙ্গা ও বোরকাপরা পার্টি রাতে হানা দিচ্ছে এমন প্রচার বাড়তে থাকে। এমন প্রচারের মধ্যে শুক্রবার রাত ১০টায় শহরের বাকাল এলাকায় এক মোটরসাইকেল চালককে পিটিয়ে জখম করা হয়েছে। সাতক্ষীরার দেবহাটা থেকে বোরকাপরা এক রোগীকে সাতক্ষীরা হাসপাতালে আনার সময় তার মোটরসাইকেল আটকিয়ে তাকে পিটিয়ে জখম করা হয়। সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, নিছক গুজবের ওপর ভর করে এমন ছেলেধরা ও বোরকাপরা পার্টির প্রচার শুরু হয়েছে। জনগণকে সতর্ক থাকার জন্য মাইকিং করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
×