ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সৌদি বিনিয়োগ

প্রকাশিত: ০৮:৫০, ১২ মে ২০১৯

সৌদি বিনিয়োগ

বড় অবকাঠামো খাত নির্মাণে সৌদি আরব থেকে ৩৫ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এটি দেশবাসীর জন্য এক আনন্দের সংবাদ। এই বিনিয়োগ প্রস্তাব দ্রুত কার্যকর করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলতি রমজান মাসেই দেশটি সফরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আগামী অর্থবছরের মধ্যেই সৌদি আরবের বিনিয়োগ দেশে আসবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ কথা বলাই বাহুল্য যে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন শেখ হাসিনা সরকারের ধারাবাহিকতা, বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে রোডম্যাপ গ্রহণ, বিনিয়োগে ওয়ানস্টপ সার্ভিস নিশ্চিত করা, ভিশন-২১-এর মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে পৌঁছানো এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যমাত্রার মতো কর্মসূচীতে আকৃষ্ট হয়েছে সৌদি আরব। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়াতে সৌদি আরবের সঙ্গে একটি বিজনেস কাউন্সিলও গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, গত মার্চ মাসে বিদ্যুত, জ্বালানি ও জনশক্তিসহ কয়েকটি খাতে বিনিয়োগের জন্য সৌদি আরবের সঙ্গে দুটি চুক্তি ও চারটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। অবকাঠামোসহ কয়েকটি উৎপাদনশীল খাতে সৌদি আরবের কাছে ৩৫ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ চেয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানায় সৌদি আরব। মধ্যপ্রাচ্যের শক্তিশালী অর্থনীতির এই দেশটি বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করে আসছে। এসব চুক্তি ও সমঝোতার মাধ্যমে দেশে বড় ধরনের সৌদি বিনিয়োগ আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছিল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশগুলোর অন্যতম সৌদি আরব। সারা দুনিয়ায় তাদের শত শত বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ রয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গেও দেশটির সুদীর্ঘ ও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। রয়েছে ঐতিহ্যগত ও সাংস্কৃতিক ঘনিষ্ঠতা। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশে এ পর্যন্ত সৌদি বিনিয়োগ প্রায় হয়নি বললেই চলে। এখন পর্যন্ত সৌদি আরব ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ দেড় শ’ কোটি ডলারেরও কম। তার মধ্যে আমদানির পরিমাণই বেশি। উভয় দেশ সচেষ্ট হলে এই পরিমাণ দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় আসে সৌদি আরব থেকেই। প্রায় ২০ লাখ বাংলাদেশী বর্তমানে সৌদি আরবে কর্মরত রয়েছেন। তাদের বেশিরভাগই অদক্ষ শ্রমিক। সৌদি আরবের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ জনবল পাঠানো গেলে বাংলাদেশের বহু যুবকের সেখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। তখন প্রবাসী আয়ের পরিমাণও অনেক বেড়ে যাবে। বিশ্বব্যাংকের হিসাবমতেই বাংলাদেশের শুধু অবকাঠামো খাতে (বিদ্যুত, পরিবহন, টেলিকমিউনিকেশন, স্যানিটেশন ইত্যাদি) বিনিয়োগ প্রয়োজন বছরে ৭ থেকে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য খাত বাদ দিয়েই এই হিসাব। এক্ষেত্রে শুধু বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও আইডিবিই নয়, এর বাইরে আরও একটি সম্ভাবনাময় অর্থদাতা এআইআইবি বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে তাৎপর্যপূর্ণ বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। মার্কিন ব্যবসায়ীসহ ইউরোপের ব্যবসায়ী মহল আগামীতে সমৃদ্ধির অংশীদার হতে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করবে এমনটা প্রত্যাশিত। লন্ডনের জ্যেষ্ঠ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে কমনওয়েলথভুক্ত সরকারপ্রধানদের এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে এশিয়ার সেরা বিনিয়োগ হাব হিসেবে উল্লেখ করে বিশ্বের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছিলেন। সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ছে। অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ও টেকসই উন্নয়নের জন্য বর্তমান সরকারের নেয়া বিভিন্ন নীতি ও কর্মসূচীর সুফল আসতে শুরু করেছে।
×