ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মৃত্যুবার্ষিকীতে আলোচনা সভা

ওয়াজেদ মিয়া ক্ষমতার মধ্যে থেকেও ছিলেন নির্লোভ, নির্মোহ

প্রকাশিত: ১০:৩২, ১১ মে ২০১৯

 ওয়াজেদ মিয়া ক্ষমতার মধ্যে থেকেও ছিলেন নির্লোভ, নির্মোহ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ক্ষমতার মধ্যে থেকেও পদ-পদবি বা ক্ষমতা ব্যবহারের লোভ ছিল না। বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়ার। একজন মানুষ হিসেবে তিনি ছিলেন নির্লোভ, নির্মোহ। ওয়াজেদ মিয়া মেধা, মনন ও সৃজনশীলতা দিয়ে জনগণের কল্যাণে আমৃত্যু কাজ করে গেছেন। কর্মের জন্য ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে বেঁচে থাকবেন তিনি। শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে জহুর হোসেন চৌধুরী হলে বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদ আয়োজিত বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়ার ১০ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় আলোচক ও বিভিন্ন বক্তারা এসব কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদের সভাপতি ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য ও সংগঠনের নির্বাহী সভাপতি এ্যাডভোকেট আবদুল বাসেত মুজমদার, একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাষা সৈনিক ড. জমীম উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ^বিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি ও সংগঠনের সভাপতিম-লীর সদস্য প্রফেসর ড. মোকাদ্দেম হোসেন, বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদের মহিলা ইউনিটের সভাপতি ও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক প্রফেসর ড. নাজমা শাহিনসহ অন্যরা। ওয়াজেদ মিয়ার বিষয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়কমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেন, নিউক্লিয়ার নিয়ে কাজ করত ওয়াজেদ মিয়া। আমরা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত প্রকল্প করছি যা তার স্বপ্ন ছিল। রূপপুর এখন স্বপ্ন পেরিয়ে বাস্তবে। বাংলাদেশে প্রথম নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টের এ কাজটুকুর জন্যই তিনি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে স্মরণীয় থাকবেন। অনেক বছর আগে হাজার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের চিন্তা করাটাই যেখানে অকল্পনীয় ছিল, সেখানে তার সাহসে ভর করে পারমাণবিক বিদ্যুতের কাজটা পুনরায় শুরু করা সম্ভব হয়েছিল। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি যে অবদান রেখে গেছেন তা অবিস্মরণীয়। ওয়াজেদ মিয়ার প্রকল্প সমপূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হলে দেশ বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় পরিণত হতে বেশি সময় লাগবে না বলে মনে করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়কমন্ত্রী। মন্ত্রী বলেন, আমরা স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি ড. ওয়াজেদ মিয়া তার প্রকল্প এলাকার লোকজনকে যে উন্নয়নের কথা শুনাতেন, তা ছিল দেশবাসীর কাছে স্বপ্নের মতো। তিনি প্রায়ই ঐ এলাকায় ছুটে যেতেন। স্থানীয়দের এই প্রকল্প হলে কি হবে তার কথা বলতেন। তিনি আরও বলেন, তার আত্মাকে শান্তি দিতে চাইলে তার আইডিয়া এবং প্রকল্প নিয়ে কাজ করতে হবে। অবশ্য বাবার কাজটি তারই যোগ্য ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় করে যাচ্ছেন। তার ধ্যান-ধারণাকে অনুসরণ করছে ছেলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকী বলেন, ড. ওয়াজেদ মিয়া ক্ষমতার খুব কাছে থাকলেও তা ব্যবহার করেননি। তিনি ছিলেন নির্লোভ, নির্মোহ ও নিরহঙ্কার। আচার, আচরণে কখনও প্রকাশ করেননি যে, তিনি জাতির জনকের জামাতা, প্রধানমন্ত্রীর স্বামী। তার মৃত্যুতে জাতি একজন কৃতি পরমাণু বিজ্ঞানীকে হারিয়েছে। যতবার তার সঙ্গে কথা বলেছি দেখেছি তার মধ্যে নতুন প্রজন্ম নিয়ে বেশ আগ্রহ ছিল। এই নতুন প্রজন্ম নিয়ে তিনি অনেক কথা বলতেন। খুব অকালে চলে গেলেন তিনি। একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাষা সৈনিক ড. জমীম উদ্দিন আহমেদ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, ১৯৫৯ সালে জুন মাসে আমার ছোটভাই রফিকুল ইসলামের মাধ্যমে প্রথম এই ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে পরিচয় হয়। তখন তিনি আমার ছোটভাইয়ের রুমমেট হিসেবে একই হলে থাকতেন। পরবর্তীতে সময়ের সঙ্গে আরও অনেকবার দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে। গম্ভীর প্রকৃতির মানুষ হিসেবে নানা বিষয়ে চিন্তা করতেন এবং কাজে বেশ উদ্যোমী ছিলেন। আবদুল বাসেত মজুমদার বলেন, দেশে বিজ্ঞানের যে উন্নয়ন ও উন্নতি হয়েছে তা ড. ওয়াজেদ মিয়ার কল্যাণেই ঘটেছে। তাই তার কর্মকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য তার জীবনের আদর্শকে অনুসরণ করে দেশের জন্য কিছু একটা করতে হবে। তার আত্মা শান্তি পাবে। তিনি বলেন, এই যে বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদ তার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি। এখনও এই সংগঠন একটি ব্যতিক্রমধর্মী ও অনেক জ্ঞানী ব্যক্তিদের দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু, ওয়াজেদ এদের জীবনী থেকে শিক্ষা নিয়ে আসুন আমরাও দেশ ও সমাজের জন্য কিছু করার চেষ্টা করি। প্রফেসর ড. মোকাদ্দেম হোসেন বলেন, ক্ষমতার বলয়ে থেকেও তিনি গবেষণা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি একজন সফল বাবা আবার সার্থক স্বামী। সাধারণ মানুষের জন্য কিভাবে কাজ করা যায় সে বিষয়ে তিনি কাজ করেছেন, চিন্তা করেছেন। অনেক গবেষণা করেছেন তিনি। প্রফেসর ড. নাজমা শাহীন বলেন, আমার জানা নেই ওনার (ওয়াজেদ মিয়া) মানের পরমাণু বিজ্ঞানী আছে কিনা। উনার প্রয়োজনীয়তা আমরা সবসময় বোধ করব। বক্তারা বলেন, রংপুরের পিছিয়েপড়া এক গ্রাম থেকে উঠে এসেছিলেন তিনি। নিজেকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন কেবল শিক্ষার মাধ্যমে। পীরগঞ্জের সাদাসিধে ছেলেটিই বড় হয়ে দেশের অন্যতম একজন আণবিক বিজ্ঞানী হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছিলেন।
×