ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

খাদ্যে ভেজালকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি, মানববন্ধন

প্রকাশিত: ১০:৩২, ১১ মে ২০১৯

খাদ্যে ভেজালকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি, মানববন্ধন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ইফতারিসহ সব খাদ্যে ভেজালকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছে বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, বিষাক্ত খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে কোটি কোটি মানুষ অসুস্থ হচ্ছে এমনকি মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে যা নীরব গণহত্যার শামিল। মোবাইল কোর্টের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট আইনসমূহের কঠোর প্রয়োগ, দৃষ্টান্তমূলক সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান, বড় অঙ্কের ক্ষতিপূরণ আদায় এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে হবে। শুক্রবার চকবাজার জামে মসজিদের সামনে মোবাইল কোর্টই যথেষ্ট নয়, ইফতারিসহ খাদ্য ভেজাল ও বিষাক্তকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম (নাসফ) ও পল্লীমা গ্রীনসহ ১৫টি সমমনা সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে জনগণের সুস্বাস্থ্য রক্ষায় সর্বস্তরের ব্যবসায়ীদের ইফতারিসহ সব খাদ্যে বিষ ও ভেজাল মিশানো থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়। মানববন্ধন অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, শিশু খাদ্যসহ ফল-মূল, শাক-সবজি, মাছ-মাংস, দুধ, মিষ্টি, প্যাকেটজাত খাদ্য ও পানীয়সহ প্রায় সব ধরনের খাবারে উৎপাদন পর্যায় থেকে বাজারজাতকরণ এবং খাদ্যগ্রহণ পর্যন্ত স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার হচ্ছে। জনগণকে ভেজাল ও বিষমুক্ত খাদ্য সরবরাহের লক্ষ্যে সরকার নিয়মিতভাবে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেও ভেজাল ও বিষমুক্ত খাদ্য নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়নি। তাই মোবাইল কোর্টই এ সমস্যা সমাধানে যথেষ্ট নয়। বক্তারা বলেন, ইফতারিতে যে সমস্ত খাদ্যপণ্য বেশি ব্যবহৃত হয় সেগুলোর উৎপাদন, আমদানি, মজুতকরণ কার্যক্রম ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। অসাধু শিল্পপতি, উৎপাদনকারী, কৃষক, ব্যবসায়ী, আমদানিকারক, মজুদদার, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা অধিক মুনাফার লোভে এসব খাদ্য পণ্যে ক্ষতিকর বিষাক্ত রাসায়নিক ও ভেজালের মিশ্রণ করে থাকে। বিষাক্ত খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে কোটি মানুষ অসুস্থ হচ্ছে। এমনকি তারা মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে যা নীরব গণহত্যার শামিল। এ অবস্থা চলতে থাকলে ধীরে-ধীরে আমাদের পঙ্গু জাতিতে পরিণত হতে হবে। তাই মোবাইল কোর্টের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট আইনসমূহের কঠোর প্রয়োগ, দৃষ্টান্তমূলক সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান, বড় অঙ্কের ক্ষতিপূরণ আদায় এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে হবে। ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৫, নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩ এবং ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ প্রণয়ন করেছে তা কার্যকর করতে সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়। তারা বলেন, জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা গবেষণাগারে সাম্প্রতিক পরীক্ষার ভিত্তিতে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের প্রতিবেদন অনুযায়ী বাজারের ৯৬টি তরল দুধের নমুনার ৯৩টিতে সীসাসহ মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে, প্যাকেটজাত ৩১ নমুনার ১৮টিতে এ্যান্টিবায়োটিকসহ ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে, দইয়ের ৩৩ নমুনার ১৭টিতে ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে। পশু খাদ্যের ৩০টি নমুনায় ক্রোমিয়ামসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানের অতীতের পরীক্ষায়ও গড়ে ৪০ শতাংশ খাদ্যেই মানবদেহের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্ধারিত সহনীয় মাত্রার চেয়ে ৩ থেকে ২০ গুণ বেশি নিষিদ্ধ ডিডিটি, এলড্রিন, হেপ্টাক্লোর এবং অন্যান্য বিষাক্ত উপাদান পাওয়া যায়। এসব রাসায়নিক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক অত্যন্ত বিপজ্জনক হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে। ৩৫ শতাংশ ফল ও ৫০ শতাংশ শাক-সবজির নমুনাতেই বিষাক্ত বিভিন্ন কীটনাশকের উপস্থিতি রয়েছে। চালের ১৩টি নমুনায় মিলেছে মাত্রাতিরিক্ত বিষক্রিয়া সম্পন্ন আর্সেনিক, পাঁচটি নমুনায় পাওয়া গেছে ক্রোমিয়াম। হলুদের গুঁড়ার ৩০টি নমুনায় ছিল সীসা ও অন্যান্য ধাতু। লবণেও সহনীয় মাত্রার চেয়ে ২০-৫০ গুণ বেশি সীসা পাওয়া গেছে। মুরগির মাংস ও মাছে পাওয়া গেছে মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর এন্টিবায়োটিকের অস্তিত্ব। হলুদ ও লবণে সীসাসহ আরও কিছু ধাতব উপাদান প্রয়োগের মাধ্যমে এগুলো চকচকে ও ভারি করা হয়। দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য বিষ ও ভেজালমুক্ত এবং পুষ্টিমান সম্পন্ন খাদ্য নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব। রাষ্ট্রকে আমরা এ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে দেখছি না। ফলে জাতি বঞ্চিত হচ্ছে বিষ ও ভেজালমুক্ত খাদ্য পাওয়ার অধিকার থেকে। এখন এমন কোন খাদ্যদ্রব্য নেই যাতে মারাত্মক ক্ষতিকর বিভিন্ন কেমিক্যাল মিশানো হয় না। উৎপাদন থেকে বাজারজাতকরণ প্রত্যেকটি স্তরেই এর ছড়াছড়ি রয়েছে। সহজপ্রাপ্যতা, আইন প্রয়োগ ও যথাযথ নজরদারির অভাবে এসব ঘটেই চলেছে, যাতে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাচ্ছে। শিশু খাদ্য থেকে শুরু করে ফল-মূল, শাক-সবজি, মাছ- মাংস, দুধ, মিষ্টি, প্যাকেটজাত খাদ্য ও পানীয়সহ প্রায় সব ধরনের খাবারে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ মেশানো হয়। ফল ও তরিতরকারি দ্রুত বৃদ্ধির জন্য কৃত্রিম হরমোন গ্রোথ, কীটপতঙ্গ প্রতিরোধে নিষিদ্ধ বিষাক্ত কীটনাশক এবং তাজা ও সতেজ রাখতে ফরমালিন ব্যবহার করা হচ্ছে। ফল কৃত্রিম উপায়ে পাকাতে ব্যাপকভাবে ক্যালসিয়াম কার্বাইড, কপার সালফেট, কার্বনের ধোঁয়া, পটাশের লিকুইড সলিউশন প্রয়োগ করা হয়। মাছে ফরমালিন, মুড়িতে ইউরিয়া ব্যবহার করা হচ্ছে।
×