ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শ্যালো ইঞ্জিনে ধান মাড়াই কল

প্রকাশিত: ১০:৩০, ১১ মে ২০১৯

 শ্যালো ইঞ্জিনে ধান মাড়াই কল

প্রযুক্তির নিত্যনতুন উদ্ভাবনে কৃষিতে মানুষের কায়িক শ্রম এখন অনেক কমেছে। জমি চাষে ও ধান মাড়াইয়ে গরুর খাটুনিও আর নেই। নিকট অতীতে জমি থেকে ধান আঁটি করে কেটে আনার পর উঠানে উঁচু করে সাজিয়ে রাখা হতো। তারপর বৃত্তাকারে সাজিয়ে মধ্যে খুঁটি এঁটে দুই থেকে চারটি গরু সারি করে ধানের আঁটির ওপর দিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে খঁচিয়ে মাড়াই করা হতো। গরু যাতে ধান ও খড় না খেতে পারে সে জন্য মুখে টোনা এঁটে রাখা হতো। স্থানীয় ভাষায় নাম গোমাই। গরুর শ্বাস-প্রশ্বাসের কোন অসুবিধা হতো না। মাড়াইয়ের পর পর নিচে পড়ে থাকা ধান তোলা হতো। সনাতন এই পদ্ধতিতে মানুষ ও গরু উভয়েরই ছিল কায়িক শ্রম। গরুকে ঘুরে ঘুরে আঁটি খচতে হতো। গরু সামলাতে গরুর পিছনে মানুষকেও ঘুরতে হতো। ধান মাড়াইয়ের পরিশ্রম কমাতে বছর পনেরো আগে উদ্ভাবন হয়, কাঠের তৈরি ঢোলের আকৃতির এক বস্তু। কাঠের ওপর লোহা ভাঁজ করে ত্রিকোণ করে রাখা। মাড়াই ঢোলটি পায়ে চালিত ঘূর্ণায়মান। একজন কৃষক প্যাডেল করত। আরেকজন ধানের আঁটি ঘূর্ণায়মান ঢোলের ওপর ধরলে ধান আঁটি থেকে ছাড়িয়ে পড়তো উঠানে। ধান মাড়াইয়ের এই ঢোলকে আরও উন্নত করা হয়। শ্যালো ইঞ্জিনের সঙ্গে বিশেষ ব্যবস্থায় হ্ইুলারে ফিতা এঁটে তা সংযুক্ত করা হয় কাঠের ওই ঢোলের হুইলারের সঙ্গে। তারপর ইঞ্জিন চালু করলে ঢোলের দ্রুত ঘূর্ণন শুরু। তার ওপর ধানের আঁটি ধরার সঙ্গে অতি দ্রুত ধান ছাড়িয়ে নেয়া যায়। ঢোলের ঘূর্ণনের গতি কম বেশি করা যায়। মধ্যম কৃষক এখন দিনেই মাড়াই কাজ শেষ করতে পারে। বগুড়ার প্রায় প্রতিটি গ্রামে এই মাড়াই কল পৌঁছেছে। ছোট বড় আকার ভেদে দাম ৫ থেকে থেকে ১০ হাজার টাকা। এর সঙ্গে শ্যালো ইঞ্জিনের দাম আলাদা। তবে বেশিরভাগ কৃষকের ঘরে শ্যালো ইঞ্জিন থাকায় তারা ‘টু ইন ওয়ান’ করে নিয়েছে। সেচের সময় জমিতে নিয়ে সেচ। ধান কাটার পর উঠানে বসিয়ে মাড়াই। নদী তীরের কৃষক ‘থ্রি ইন ওয়ান’ করেছে শ্যালো ইঞ্জিনকে। সেচ, মাড়াই ও বন্যার সময় নৌকায় বসিয়ে সময় ও শ্রম কমিয়েছে। বগুড়ার গোলাবাড়ি গ্রামের কৃষক আনিসার রহমান বললেন, আগে কামলা কিষান ছিলেন। যন্ত্র কৃষি তার জীবনমান উন্নত করেছে। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া জমিতে তিনি প্রথমে টিলার ভাড়া নিয়ে আবাদ শুরু করেন। সেচের পানিও নেন ভাড়ায়। এভাবে আবাদ করেই সেচ যন্ত্র কিনেছেন। এখন চাষে টিলার ভাড়া করেন। নিজেই ধান কাটেন। কখনও দুই একজন মজুর নেন। ধান কেটে এনে যন্ত্রে মাড়াই করেন। আগামীতে হারভেস্টার ভাড়ায় জমিতে ধান কাটতে পারবেন। পাশের গ্রামের এক গৃহস্থ ধান কাটার হারভেস্টার মেশিন এনেছেন। সেই যন্ত্র তিনি ভাড়া দেন। এতে মজুর খরচ লাগে না। তার যে জমি তাতে এক ঘণ্টায় জমির ধান কাটা হয়ে যাবে। তারপর ধান মাড়াইয়ের জন্য ঢোল তো আছে। -সমুদ্র হক, বগুড়া থেকে
×