ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিপিএল ফুটবল

১১০ দিন পর একই দলকে একই ব্যবধানে হারালো মোহামেডান!

প্রকাশিত: ০৯:৫২, ১১ মে ২০১৯

১১০ দিন পর একই দলকে একই ব্যবধানে হারালো মোহামেডান!

রুমেল খান ॥ ম্যাচটা তারা খেলতে নেমেছিল একটা সম্ভাব্য অথচ অস্বস্তিকর রেকর্ড গড়ার আশঙ্কা নিয়ে। ম্যাচে হেরে গিয়ে রেকর্ডটা যে তারা গড়তেই যাচ্ছে, এমনটা ভাবার পক্ষেই লোক ছিল বেশি। কিন্তু ফুটবল যে অনুমান করে কিছু হয় না, এই খেলাটিতে যে যে কোন অঘটনই ঘটতে পারে ... সেই পুরনো সত্যিটাই যেন আবার নতুন করে প্রতিষ্ঠিত করল দলটি। দলটি মানে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেড। শুক্রবার তারা বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ ফুটবলে নিজেদের ম্যাচটা খেলতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত হারেনি বরং সবাইকে বিস্মিত করে জিতেছে। নোয়াখালীর শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে ‘ব্ল্যাক এ্যান্ড হোয়াইট’ খ্যাত মোহামেডান ২-১ গোলে হারিয়েছে টিম বিজেএমসিকে। ঐতিহ্যবাহী মোহামেডানের এখন এমনই দুরবস্থা, তারা এখন হারলে এটা হয় স্বাভাবিক ঘটনা, আর জিতলে এটা হয় বিস্ময়কর ঘটনা! অবশ্য মোহামেডান যাদের হারিয়েছে সেই বিজেএমসিও তাদের মতোই তলানির দল পয়েন্ট টেবিলে। কাজেই এরকম দলের বিরুদ্ধে জয় কুড়িয়ে নেয়াটা কতটা বিস্ময়কর, সেটা নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন উঠতেই পারে। এই ম্যাচে হারলে একটি অনাকাক্সিক্ষত রেকর্ডের মালিক হতো মোহামেডান। নিজেদের রেকর্ড নিজেদেরই ভাঙ্গতে হতো এক্ষেত্রে। সেটা হচ্ছে নিজেদের লীগ ইতিহাসে এক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি ৯টি ম্যাচে হারার অগৌরবের রেকর্ড। ‘সোনালি আঁশের দল’ খ্যাত বিজেএমসিকে হারিয়ে আপাতত রেকর্ড গড়ার হাত থেকে নিজেদের বিরত রাখতে পেরেছে মতিঝিল পাড়ার ক্লাবটি। কিন্তু কত ম্যাচ? কেননা বিজেএমসির মতো তলানির দলকে হয়তো হারানো সহজ। কিন্তু বসুন্ধরা, আবাহনী, রাসেল, সাইফের মতো শিরোপা প্রত্যাশী দলগুলোর বিরুদ্ধে? এদের একটা দলের সঙ্গে হারলেই তো ‘কম্ম সাবাড়’ হয়ে যাবে মোহামেডানের। এর আগে মোহামেডান লীগে সবচেয়ে বেশি ৮টি করে ম্যাচ হেরেছিল তিন বার। সেটা ২০১০-১১, ২০১৬ এবং ২০১৭-১৮ মৌসুমে। এবারের ২০১৮-১৯ মৌসুমেও প্রথমপর্বেই ইতোমধ্যেই ৮ ম্যাচ হেরে বসে আছে সাদা-কালোরা। দ্বিতীয়পর্বে মোহামেডানকে আরও মোট ১২ ম্যাচ খেলতে হবে। এর মধ্যে শুক্রবার খেলে ফেলেছে এক ম্যাচ এবং তাতে জয়। কিন্তু বাকি ১১ ম্যাচে তারা অপরাজিত থাকতে পারবে কি না এবং ‘নবম হারের রেকর্ড’টি সমৃদ্ধ করতে পারবে কি না সেটাই হচ্ছে লাখ টাকার প্রশ্ন। শুক্রবার জিতে দারুণ এক পরিসংখ্যানের ধারাবাহিকতা রক্ষা করেছে মোহামেডান। লীগে এটা তাদের দ্বিতীয় জয়। প্রথম জয়টাও তারা কুড়িয়ে নিয়েছিল এই বিজেএমসির বিরুদ্ধেই। মজার ব্যাপারÑ সেই জয়ের ব্যবধানটাও ছিল একই (২-১)! কাকতালীয়ভাবে মোহামেডানের ওই জয়টা ছিল প্রথম লেগে তাদের প্রথম ম্যাচে, আর শুক্রবারের জয়টা এসেছে দ্বিতীয় লেগে ও নিজেদের প্রথম ম্যাচে। গত ২০ জানুয়ারি ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ওই ম্যাচের গোলদাতার নাম নিয়েও মজার মিল আছে। ওই ম্যাচেও বিজেএমসির হয়ে গোলটি করেছিলেন উজবেক ফরোয়ার্ড মুখামেদভ ওতাবেক। এ মৌসুমের লীগ শুরুর পর মোহামেডান তাদের দ্বিতীয় জয়টি কুড়িয়ে নিতে (তাও আবার একই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে) পাক্কা ১১০ দিন লাগিয়ে ফেললো। নিজেদের ত্রয়োদশ ম্যাচে এটা সর্বাধিক ১৯ বারের লীগ চ্যাম্পিয়ন মোহামেডানের দ্বিতীয় জয়। আগের ৩ ড্রতে তাদের মোট পয়েন্ট হলো ৯। এত খারাপ অবস্থার পরও শুক্রবারের জয়ে পয়েন্ট টেবিলের একধাপ উঁচুতে উঠেছে তারা। ব্রাদার্স ইউনিয়নকে নিচে ফেলে তারা এখন দশম স্থানে (১৩ দলের মধ্যে)। পৌঁছে গেল কিঞ্চিৎ নিরাপদ অবস্থানে। পক্ষান্তরে বিজেএমসির সমান ম্যাচে এটা নবম হার। আগের ৪ ড্রতে মাত্র ৪ পয়েন্ট তাদের। এক সময়ের পাঁচবারের লীগ চ্যাম্পিয়ন এখনও আছে আগের মতোই তলানিতে। রেলিগেশন চোখ রাঙাচ্ছে তাদের। শুক্রবার বিজেএমসিকে হারিয়ে অন্যরকম একটা হিসেবও চুকিয়ে দিয়েছে মোহামেডান। বিজেএমসির কোচ আলী আজগর নাসিরের কাছে এটা নিশ্চয়ই ছিল ‘প্রেস্টিজিয়াস’ হার। কেননা কিছুদিন আগে তিনিই ছিলেন মোহামেডানের কোচ। মোহামেডানের কোচিংয়ের দায়িত্ব তিনি ছেড়ে দিয়েছিলেন গুরুতর এক অভিযোগ তুলে। ক্লাবের ম্যানেজার একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে দলের একাদশ গঠনে অযাচিত হস্তক্ষেপ করছে ... এমন অভিযোগ তুলে পদত্যাগ করেছিলেন নাসির। তখন তার অভিযোগের প্রতিবাদ করেছিল মোহামেডান ক্লাব ম্যানেজমেন্ট। নাসির চলে যাওয়ার পর সর্বশেষ গত এপ্রিলে মোহামেডান নিজেদের ডেরায় ভেড়ায় আরেক নতুন কোচকে। তিনি ইংলিশ বংশোদ্ভূত ৫৫ বছর বয়সী অস্ট্রেলিয়ান সিন লেন। দলের দায়িত্ব নেয়ার পর এটাই লেনের প্রথম জয়। শুক্রবার নোয়াখালীর শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামে ম্যাচ শুরুর প্রথম মিনিটেই আচমকা গোল করে এগিয়ে যায় বিজেএমসি। দূরপাল্লার পাস পেয়ে বল নিয়ে বক্সের ভেতরে ঢুকে পড়েন ওতাবেক। তাকে বাধা দিতে আঠার মতো লেগে ছিলেন বিপক্ষ দলের জনাপাঁচেক ডিফেন্ডার। কিন্তু তাদের কোন সুযোগ দেননি ওতাবেক। এদিকে বিপদ বুঝে পোস্ট ছেড়ে সামনে এগিয়ে আসেন মধ্যবর্তী দলবদলে ধারে দলে যোগ দেয়া গোলরক্ষক পাপ্পু হোসেন। পাপ্পুকেও কোন সুযোগ দেননি ওতাবেক। চলন্ত বলে হাল্কা উঁচু ভলি করেন। বল পাপ্পুর মাথার ওপর দিয়ে চলে যায় জালে (১-০)। কিন্তু এই লিড ধরে রাখতে পারেনি বিজেএমসি। এমনকি প্রতিশোধও নিতে পারেনি। বরং ১৯ মিনিটে নিজেদের ভুলেই এক গোল হজম করে তারা। নিজেদের বক্সে ফাউল করে মোহামেডানকে পেনাল্টি উপহার দেন বিজেএমসির গোলরক্ষক উত্তম বড়ুয়া। রেফারি উত্তমকে হলুদ কার্ড দেখানোর পাশাপাশি পেনাল্টিরও নির্দেশ দেন। তা থেকে গোল করে সমতা আনেন জাপানী মিডফিল্ডার উরইউ নাগাতা (১-১)। ৬১ মিনিটে দ্বিতীয় গোলের দেখা পায় মোহামেডান। প্রায় মাঝ মাঠ থেকে সতীর্থ বাংলাদেশী মিডফিল্ডার শেখ গালিব নেওয়াজের পাসে বল পেয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন মালির ফরোয়ার্ড সোলেমানি দিয়াবাতে। দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে দারুণ শটে লক্ষ্যভেদ করেন নবাগত এই ফুটবলার (২-১)। প্রথমে এগিয়ে গিয়েও শেষ পর্যন্ত বদলা নিতে না পারার দুঃখটা নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় বিজেএমসিকে।
×