ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিবাদমুখর কিশোরগঞ্জ বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার দাবি

প্রকাশিত: ০৯:৪৮, ১১ মে ২০১৯

 প্রতিবাদমুখর কিশোরগঞ্জ  বিশেষ ট্রাইব্যুনালে  বিচার দাবি

নিজস্ব সংবাদদাতা, কিশোরগঞ্জ, ১০ মে ॥ চলন্ত বাসে নার্স শাহিনুর আক্তার তানিয়াকে (২৪) ধর্ষণ ও হত্যা বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠছে কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন সংগঠন। চাঞ্চল্যকর এ ধর্ষণ ও হত্যায় জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছে জেলার বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। একইসঙ্গে তারা বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে এই হত্যা ও ধর্ষণ মামলার বিচারের দাবিও জানান। তানিয়ার পরিবারসহ বিভিন্ন মহলের অভিযোগ, তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার আগেই সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা মামলার এজাহারে ওই তরুণীর ওপর পাশবিক নির্যাতনের বিষয়টি আড়াল করতে চেয়েছিলেন। পরে পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ বিষয়টি জানতে পেরে বাজিতপুরের ওসি (তদন্ত) সারোয়ার জাহানকে বাদীর কথামতো এজাহার লিখতে তাৎক্ষণিক নির্দেশ দেন। পরে এজাহারে ধর্ষণের বিষয়টি আনা হয়। এ পরিস্থিতিতে তানিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার তদন্তের দায়িত্ব পিবিআইয়ের কাছে ন্যস্ত করার দাবি উঠেছে। পিবিআই কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে তানিয়ার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন বলে নিহতের ভাই শফিকুল ইসলাম সুজন জানিয়েছেন। এদিকে তানিয়া ধর্ষণ ও হত্যাকান্ড মামলার তদারকি করতে পুলিশ তিনটি কমিটি গঠন করা করেছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সারওয়ার জাহান জানান, বাসে গণধর্ষণ ও হত্যা মামলায় গ্রেফতার পাঁচজনকে বাজিতপুর থানা পুলিশ ৮ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে। আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদসহ পুরো বিষয়টি তদন্ত চলছে। আসামিরা যেসব কথাবার্তা বলছে, সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। ওই ঘটনায় কার কি ভূমিকা তা স্পষ্ট করে বলছে না কেউ। কাজেই বলার মতো এখনো কিছু পুলিশের হাতে আসেনি। এদিকে তানিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় বাজিতপুরের পিরিজপুর বাজারের ইজারাদার ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে আসামি করায় সমালোচনা হচ্ছে। এলাকাবাসী বলছে, এটি নিছক ষড়যন্ত্র। মাদ্রাসা কমিটির নির্বাচন ও বাজারের ইজারাদারি পাওয়া নিয়ে বিরোধের সূত্র ধরেই চাঞ্চল্যকর মামলাটি রাজনীতিকরণ করা হয়েছে এবং মামুনকে মামলায় জড়ানো হয়েছে। এতে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে সমালোচনা চলছে। শুক্রবার সকালে তানিয়া ধর্ষণ-হত্যার প্রতিবাদে ও দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবিতে জেলা শহরের কালীবাড়ি এলাকায় ভোরের আলো সাহিত্য আসর, হোমিওপ্যাথিক ফোরাম ও আকুপ্রেসার গবেষণা সোসাইটি’র উদ্যোগে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় বক্তৃতা করেন মুক্তিযোদ্ধা মোঃ নিজাম উদ্দিন, নাট্যকার মোঃ আজিজুর রহমান, ভোরের আলোর প্রতিষ্ঠাতা মোঃ রেজাউল হাবীব রেজা, হোমিওপ্যাথিক ফোরামের সভাপতি এম এ হালিম তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক ডাঃ মোবারক হোসেন খান, সাংবাদিক আমিনুল হক সাদী, শফিক কবীর, ফারুকুজ্জামান, ডাঃ নাজনীন আক্তার প্রমুখ। পরে শহরে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। একই সময় ৯ দফা দাবি নিয়ে জেলার কটিয়াদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় কিশোরগঞ্জ-ভৈরব আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে হাজারো এলাকাবাসী। কটিয়াদী রক্তদান সমিতি আয়োজিত এ কর্মসূচীতে স্থানীয় কমিউনিস্ট পার্টি, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ. ছাত্রলীগ, সচেতন নারী সমাজ, সেবিকা ঐক্য পরিষদ, কুমরী অগ্নিবীনা যুব সংঘ, কটিয়াদী প্রবাহ, নাগরিক কমিটি, সবুজ বাংলা যুব সংঘ, উপজেলা ছাত্রদলসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। এ সময় কিশোরগঞ্জ-ভৈরব সড়কের দুপাশে দীর্ঘ লাইনে যানবাহন চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় রক্তদান সমিতির সমন্বয়ক বদরুল আলম নাঈমের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তৃতা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সাধারণ সম্পাদক ও পিপি শাহ আজিজুল হক, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াহাব আইন উদ্দিন, জেলা সিপিবির সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, জেলা ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান রুমী, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেত্রী তানিয়া সুলতানা হ্যাপী, অধ্যক্ষ ফজলুল হক জোয়ারদার আলমগীর, প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম ফকির, সাংবাদিক রফিকুল হায়দার টিটু, সারোয়ার হোসেন শাহীন, শিক্ষক মাহাবুবুর রহমান, নিহত তানিয়ার ভাই কফিল উদ্দিন সুমন প্রমুখ। অন্যদিকে কটিয়াদী দরগাহ জামে মসজিদে জুমার নামাজের পর এ বর্বর ঘটনায় প্রকৃত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারের জন্য বিশেষ দোয়া করা হয়। এছাড়া জেলার বাজিতপুর পুনর্বিন্যাস পাঠাগারসহ অন্যান্য উপজেলায় বিভিন্ন কর্মসূচী পালনের খবর পাওয়া গেছে। এসব কর্মসূচীতে বক্তারা এ নারকীয় হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত প্রকৃত আসামিদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে। প্রসঙ্গত গত ৬ মে রাতে ঢাকা থকে স্বর্ণলতা পরিবহনের একটি বাসে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিলেন উপজেলার লোহাজুড়ি বাহেরচর গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের মেয়ে ও ঢাকার ইবনে সিনা হাসপাতালের সিনিয়র নার্স শাহিনুর আক্তার তানিয়া (২৪)। বাসটি কটিয়াদী বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছার পর বাসের অন্য যাত্রীরা নেমে যান। পরে কটিয়াদী থেকে পিরিজপুর বাসস্ট্যান্ডে যাওয়ার পথে গজারিয়া বিলপাড় এলাকায় বাসের চালক ও সহকারীরা তানিয়ার ওপর পাশবিক নির্যাতন করে হত্যার পর মরদেহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমেপ্লক্সে রেখে পালিয়ে যায় তারা। এ ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে ওইদিন রাতেই নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে বাজিতপুর থানায় মামলা করেন। মামলায় স্বর্ণলতা বাসের চালক গাজীপুরের কাপাসিয়ার ড্রাইভার নূরুজ্জামান, হেলপার লালন মিয়া, হাসপাতালে আনয়নকারী আল আমিন এবং পিরিজপুর বাসস্ট্যান্ড পরিচালনাকারী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা বেশ কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় বাসচালক ও হেলপারসহ পাঁচ আসামি বর্তমানে রিমান্ডে রয়েছে। আর এজহারভুক্ত অপর দুই আসামি আল আমিন ও আব্দুল্লাহ আল-মামুন পলাতক রয়েছে।
×