ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

এগিয়ে পাপিয়া

কে হচ্ছেন বিএনপির সংরক্ষিত আসনের এমপি

প্রকাশিত: ০৯:৪৭, ১১ মে ২০১৯

  কে হচ্ছেন বিএনপির  সংরক্ষিত  আসনের এমপি

শরীফুল ইসলাম ॥ কে হচ্ছেন বিএনপির সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি এ নিয়ে এখন রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সর্বত্র চলছে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা। কেউ বলছেন দলের ৫ এমপি যাকে চাবেন তিনিই হবেন। আবার কেউ বলছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যাকে চাইবেন তিনিই হবেন। তবে আলোচনায় বেশ ক’জনের নাম থাকলেও এগিয়ে আছেন সংসদে যোগ দেয়া দলীয় এমপি হারুন অর রশিদের স্ত্রী সাবেক এমপি আশিফা আশরাফি পাপিয়ার নাম। ৮ মে নির্বাচন কমিশন বিএনপির জন্য সংরক্ষিত ১টি আসনে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই এ আসনটি পেতে দলের নারী নেত্রীরা দৌড়ঝাপ শুরু করে দিয়েছেন। দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের কাছে ধর্ণা দেয়ার পাশাপাশি তারা সংসদে যাওয়া দলের ৫ এমপির সঙ্গেও লবিং করছেন। কে কাকে পেছনে ফেলে লবিংয়ে এগিয়ে যাবে এ নিয়ে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে বলেও জানা গেছে। আশিফা আশরাফি পাপিয়া ছাড়াও বেশ ক’জনের নাম বিএনপির সংরক্ষিত এমপি হিসেবে আলোচনায় আছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য জেবা খান, সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, বেবি নাজনিন, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা ও গুম হওয়া বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদী লুনা। এ ছাড়াও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডাঃ জোবাইদা রহমানের নামও আলোচনায় আছে। যদিও ডাঃ জোবাইদা রহমান এমপি কিংবা রাজনৈতিক দলের নেতা হওয়ার ইচ্ছে নেই বলে আপনজনদের জানিয়ে দিয়েছেন। সূত্র মতে, যদি কোন কারণে দলীয় সিদ্ধান্তের সঙ্গে ৫ এমপির মতবিরোধ হয় সে ক্ষেত্রে বিএনপির সংরক্ষিত একটি নারী আসনের বিপরীতে একাধিক প্রার্থী হতে পারে। তা হলে ভোটের প্রয়োজন হবে। সে ক্ষেত্রে বিএনপির ৫ এমপি যাকে চাইবেন তিনিই দলীয় সংরক্ষিত আসনের এমপি হবেন। আর দল সিদ্ধান্ত নিয়ে একক প্রার্থী করলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন হবে। তবে শেষ পর্যন্ত কি হয় তা আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই জানা যাবে। এদিকে শেষ মুহূর্তে বিএনপির নির্বাচিত পাঁচ এমপি সংসদে যোগ দেয়ায় তাদের ভাগের একটি নারী আসনের জন্য ৮ মে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। এ তফসিল অনুযায়ী ২০ মের মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে। এ ছাড়া বাছাই ২১ মে, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৮ মে ও ভোট ১৬ জুন। জানা যায়, সংসদে যোগ দেয়া বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হারুন অর রশিদ চাচ্ছেন তার স্ত্রী পাপিয়াকে সংরক্ষিত একটি নারী আসনে এমপি করতে। এ জন্য তিনি দলের অন্য ৪ এমপিকেও অনুরোধ করেছেন। বাকপটু আশিফা আশরাফি পাপিয়া আগেও সংরক্ষিত আসনে নির্বাচিত হয়ে জাতীয় সংসদে দলের পক্ষে ভাল ভূমিকা রেখেছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন দলীয় কর্মকান্ড ছাড়াও বেসরকারী টিভি চ্যানেলগুলোর টকশোতে অংশ নিয়ে তিনি সর্বদাই প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে ছাড়েন। এ জন্য দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীর মধ্যে তার একটি গ্রহণযোগ্যতা আছে। তবে তাকে সংরক্ষিত একমাত্র আসনের এমপি নির্বাচিত করলে অন্যরা বেঁকে বসতে পারেন এমন আলোচনাও দলে রয়েছে। এ ছাড়া হারুন অর রশিদ বর্তমান সংসদের এমপি হওয়ায় তার স্ত্রীকে একমাত্র সংরক্ষিত এমপি করতে নারাজ দলের কোন কোন সিনিয়র নেতা। প্রসঙ্গত, ১৯৭২-এর সংবিধানে ৩০০ নির্বাচনী এলাকায় প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ৩০০ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার বিধান করা হয়। তখন একটি উপধারায় এ ঘোষণাও দেয়া হয় যে ‘সংবিধান প্রবর্তন হইতে ১০ বছরকাল অতিবাহিত হওয়ার অব্যবহিত পরবর্তীকালে সংসদ’ ভেঙ্গে না যাওয়া পর্যন্ত ১৫টি আসন কেবল নারী সদস্যদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে এবং তারা আইন অনুযায়ী পূর্বোক্ত সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত হবেন। সংবিধান প্রণেতারা যথার্থই ধারণা করেছিলেন, পরবর্তী দশ বছরে দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি ঘটবে, তখন আর সংরক্ষিত নারী আসন রাখার প্রয়োজন হবে না। নারীদের অনেকেই সরাসরি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন। পঁচাত্তরের পর সামরিক শাসনের মধ্যে সংবিধানের এই ধারায় পরিবর্তন আনা হয়। সামরিক ফরমান দ্বিতীয় ঘোষণাপত্র ৬ নম্বর সংশোধন আদেশ- ১৯৭৮ দ্বারা ১০ বছরকালের জায়গায় করা হয় ১৫ বছর এবং নারীদের সংরক্ষিত আসনের সংখ্যা ১৫ থেকে বাড়িয়ে ৩০ করা হয় । ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় সংসদে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীতে সংরক্ষিত আসনের সংখ্যা ৩০ রেখে সময় বাড়ানো হয়। ২০০৪ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদে সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনী পাস করার মধ্য দিয়ে সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনসংখ্যা ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৪৫ করা হয়। এ সংশোধনীর আগে জাতীয় সংসদে সরকারী দলই সব সংরক্ষিত নারী আসন পেতেন। এ সংশোধনী পাসের পর বিভিন্ন দলকে আনুপাতিক হারে সংরক্ষিত নারী আসন বণ্টন করা হয়। নবম সংসদে ২০১১ সালের ৩০ জুন সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করে সংরক্ষিত নারী আসন সংখ্যা ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০ করা হয়। আর সর্বশেষ দশম সংসদে ২০১৮ সালের ৮ জুলাই জাতীয় সংসদে সংবিধানের সপ্তদশ সংশোধনী বিল পাসের মধ্য দিয়ে সংরক্ষিত নারী আসন রাখার সময় আরও ২৫ বছর করা হয়। এর ফলে ২০৪৩ সাল পর্যন্ত সংরক্ষিত নারী আসন থাকবে। তবে সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যা বাড়ানোর দাবি থাকলেও আপাতত আর বাড়ানো হচ্ছে না। সংবিধান অনুসারে ৩০০ আসনের বিপরীতে ৫০ টি সংরক্ষিত আসন বণ্টন করা হয়। এ ক্ষেত্রে কোন রাজনৈতিক দলের যদি ৬ জন নির্বাচিত সংসদ সদস্য হন তাহলে ওই দল থেকে একজন সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ নির্বাচিত হবেন। এভাবে প্রতি ৬ জনের জন্য একজন করে আনুপাতিক হারে নারী সদস্য বণ্টন করা হয়। তবে স্বতন্ত্র সদস্যদের বেলায়ও ৬ জনের জন্য ১জন করে নারী সদস্য করা হয়। এভাবে যে দল যতটি নারী আসন পাবে নির্বাচনে ততজন করে প্রার্থী দিলে সবাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়। আর একাধিক প্রার্থী থাকলে তফসিল অনুসারে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচন করা হয়। বর্তমান জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী সাংসদ রয়েছেন আওয়ামী লীগের ৪৩ জন, জাতীয় পার্টির ৪ জন, স্বতন্ত্র ১ জন এবং ওয়ার্কার্স পার্টির ১ জন। বিএনপি থেকে এবার নির্বাচিত ৬ জনের মধ্যে ১ জন সংসদে যোগ না দিলেও ৫ জন যোগ দেয়ায় এ দলের জন্য খালি রাখা ১টি সংরক্ষিত নারী আসন তারা পাবে।
×