ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মণিরামপুরে এসিল্যান্ডের নামে পুলিশের চাঁদাবাজি !

প্রকাশিত: ০৯:১২, ১১ মে ২০১৯

  মণিরামপুরে এসিল্যান্ডের নামে  পুলিশের চাঁদাবাজি !

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ মণিরামপুরে সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইয়েমা হাসানের নাম ভাঙ্গিয়ে থানার এসআই প্রশান্ত কুমারের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ করা হচ্ছে, এসিল্যান্ডের নামে তিনি নূর ইসলাম নামে এক চা বিক্রেতার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেছেন। এদিকে, গত ৭ মে এসআই প্রশান্তর কুষ্টিয়ায় বদলির আদেশ হয়েছে। ৮ মে সকালে তিনি মণিরামপুর থেকে ছাড়পত্র নিয়েছেন। এসআই প্রশান্ত মণিরামপুর ছাড়ার পর তার চাঁদাবাজির বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় প্রশাসনসহ উপজেলা জুড়ে তোলপাড় চলছে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইয়েমা হাসান তার নামে চাঁদা চাওয়ার বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন। তবে, এসআই প্রশান্ত অভিযোগটি ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন। জানা যায়, উপজেলার কাশিমনগর ইউনিয়নের শিরালী মদনপুর গ্রামের আমিন উল্লাহর ছেলে নূর ইসলাম পেশায় একজন চা বিক্রেতা। সাড়াপোল বাজারে তার চায়ের দোকান রয়েছে। মাসখানেক আগে সাড়াপোল বাজারের পাশে সরকারী জমি থেকে মাটি কেটে তিনি নিজের সীমানা ভরাট করেন। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় বঙ্কিম চক্রবর্তী নামে এক ব্যক্তি তার (নূর ইসলাম) বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেন। অভিযোগটির তদন্তের ভার পড়ে কাশিমনগর ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার এসআই প্রশান্তের ওপর। প্রশান্ত কুমার গত ৫ মে বিকেলে দু’পক্ষকে থানায় তলব করেন। কিন্তু বাদীপক্ষ সেদিন উপস্থিত হয়নি। অভিযোগ রয়েছে ওই দিনরাতে এসআই প্রশান্ত কুমার স্থানীয় হাবিবুর নামে এক দালালের মাধ্যমে নূর ইসলামকে থানায় ডেকে এনে তার পক্ষে প্রতিবেদন দেয়া এবং এসিল্যান্ড (সহকারী কমিশনার ভূমি) সাইয়েমা হাসানকে ম্যানেজ করতে এক লাখ টাকা দাবি করেন। কিন্তু চা বিক্রেতা নূর ইসলামের পক্ষে এত টাকা জোগাড় করা সম্ভব ছিল না। পরে ওই দালাল হাবিবের সঙ্গে তার ৫০ হাজার টাকায় চুক্তি হয়। সে মোতাবেক ধারদেনা করে পুলিশকে দিতে নূর ইসলাম ১৮ হাজার টাকা হাবিবের হাতে দেন। বাকি ৩২ হাজার টাকার জন্য এসআই প্রশান্ত এবং ওই দালাল হাবিব তাকে চাপ প্রয়োগ করেন। কিন্তু নূর ইসলাম টাকা ম্যানেজ করতে না পেরে দিশেহারা হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে বিষয়টি এসিল্যান্ড সাইয়েমা হাসান জানতে পারেন। পরে এসিল্যান্ড সাইয়েমা হাসান এসআই প্রশান্ত কুমারকে তার দফতরে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এসআই প্রশান্ত এ সময় নিজের অপরাধ স্বীকার করে এসিল্যান্ডের কাছে ক্ষমা চান। পরে এসআই প্রশান্ত সেই টাকা ফেরত দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এসিল্যান্ড সাইয়েমা হাসান জানান, নূর ইসলাম নামে এক ব্যক্তি সরকারী জমি থেকে মাটি কেটেছে জানতে পেরে স্থানীয় নায়েবকে বিষয়টি দেখতে বলা হয়েছে। এরইমধ্যে জানতে পারি থানার এসআই প্রশান্ত ওই ব্যক্তির কাছে আমার নাম করে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেছেন। তার মধ্যে কিছু টাকা ইতোমধ্যে তিনি ওই ব্যক্তির কাছ থেকে আদায় করেছেন। তিনি বলেন, এই বিষয়ে এসআই প্রশান্তকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন। বিষয়টি মণিরামপুর সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার রাকিব হাসানকে জানানো হয়েছে। এসআই প্রশান্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বিষয়টি আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক। যদিও তিনি অভিযোগ ওঠা এবং এসিল্যান্ড অফিসে তলবের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। সহকারী পুলিশ সুপার রাকিব হাসান বলেন, এসিল্যান্ডের কাছ থেকে এসআই প্রশান্তর বিরুদ্ধে মৌখিকভাবে অভিযোগ পেয়েছি। তিনি লিখিত অভিযোগ দিলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×