ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শামুক নিধন ও পাচার হচ্ছে, হুমকির মুখে জীববৈচিত্র্য

প্রকাশিত: ০৯:১০, ১১ মে ২০১৯

 শামুক নিধন ও পাচার  হচ্ছে, হুমকির মুখে জীববৈচিত্র্য

সমুদ্র হক ॥ শামুক নিধন হচ্ছে বেপরোয়াভাবে। হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ। পানি দূষণ রোধ, পরিশোধন জমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি ও পরিবেশের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ, জীববৈচিত্র্য ধরে রাখে জলজ প্রাণী শামুক। এই প্রাণী রক্ষার সরকারী ও বেসরকারী কোন উদ্যোগ নেই। পরিবশেবিদগণ নীরব হয়ে আছেন। ইতোমধ্যে সোনালী শামুকসহ কয়েক প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বন্য প্রাণী সুরক্ষা আইনে শামুক নিধন নিষিদ্ধ। জলাভূমিতে জন্মে প্রাকৃতিকভাবেই বেড়ে ওঠা শামুক সহজে চোখে পড়ে না। বৃষ্টির দিনে গ্রামের পথঘাটে বাড়ির উঠানে উঠে আসত খুবই ধীর গতিতে চলা শামুক। ধীরে চলা এই জলজ প্রাণী বাগধারায় প্রবেশ করেছে। কোন কিছু গতি না পেলে, কোন কিছু সময়মতো নির্দিষ্ট জায়গায় না পৌঁছলে বলা হয় শম্বুক গতি। দেশের সবচেয়ে বড় চলনবিলের শামুক শুধু নিধন নয় পাচারও শুরু হয়েছে। নিত্য বছর বর্ষা থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত জলাভূমি ও অধিকাংশ আবাদি জমি কম বেশি ডুবে থাকে। সেখানেই প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয় শামুক। দূর অতীতে এই শামুক নিধন করা হতো না। প্রয়োজনও পরত না। গ্রামীণ জীবনের সকলেই জানত এই শামুক মরে গিয়ে মাংস ও খোলস পঁচে আবাদি জমিতে প্রাকৃতিকভাবেই ফসফেট পটাশ ও ক্যালসিয়াম তৈরি করে। জমিতে প্রকৃতি যুক্ত করে দেয় শতভাগ খাঁটি জৈব পদার্থ। এই জৈব পদার্থ বা প্রাকৃতিক রসায়ন ফসলের উৎপাদন বাড়ায়। ধান গাছের শিকড় মজবুত করে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে উপকার করে আমন আবাদের। একই সঙ্গে জলাশয়ের দূষিত পানি পরিশোধন করে দূষণমুক্ত রাখে। দেশীয় মাছের অন্যতম খাদ্য শামুকের নরম ডিম। কৈ, শিং, মাগুর, ট্যাংরা, টাকি, শোল, পাবদাসহ অন্যান্য মাছের খাদ্যের বড় একটি অংশ আসে শামুকের ডিম থেকে। এই খাবার না পেলে মাছের পোনা মারা যায়। শামুক নিধনের দৃশ্য চোখে পড়ে চলনবিল এলাকায়। সেখানে প্রকাশ্যে কুড়িয়ে সংগ্রহ করা হচ্ছে শামুক। বিল পাড়ে যেখানে জলাভূমি আছে সেখানে নৌকা করেও শামুক সংগ্রহ হয়। প্রতি কেজি শামুক বিক্রি হয় ১শ’ ৫০ টাকা থেকে ৩শ’ টাকায়। ঢাকা চট্টগ্রাম খুলনা বরিশালের মহাজনরা এই শামুক সংগ্রহ করছে। শামুক ব্যসায়ী রোস্তম আলী জানালেন, চলনবিল এলাকা থেকে প্রতিমাসে ৬শ’ মেট্রিক টনেরও বেশি শামুক সংগ্রহ করা হয়। ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, পদ্মা, মেঘনা পাড়ে এবং ছোট নদীগুলো থেকেও শামুক আহরণ হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা শামুক সংগ্রহ ও প্রসেস করে চোরাই পথে পাচারও করছে। বিলপাড়ের লোকজন জানান প্রতিনিয়ত তারা ট্রাকে করে যেতে দেখেন। শামুক নিধন রোধে আইন আছে, তবে প্রয়োগে ভাটাও আছে। বর্তমান আইনে বন্যপ্রাণী শিকার, বধ করা, সংগ্রহ করা, নিধন ও ধ্বংস করা যাবে না। বেচাকেনা করা যাবে না। আইন অমান্যকারীদের শাস্তি ও জরিমানার বিধান আছে। জলজ প্রাণীর মধ্যে অন্যতম ব্যাঙ, শামুক, ঝিনুক, কাঁকড়া, কচ্ছপ ইত্যাদি। সূত্র জানায় অনুমতি সাপেক্ষে কিছু জলজ প্রাণী রফতানি করা যায়। তবে অনুমতি দেয়ার আগে দেখা হয় রফতানি হলে দেশের পরিবেশের কোন ক্ষতি করবে কি না। ক্ষতি হলে অনুমতি দেয়া হয় না। এই আইন বহাল থাকার পরও শামুক নিধন ও পাচার হচ্ছে। ফলে কৃষি জমি হারাচ্ছে উর্বরতা। জীব বৈচিত্র ও পরিবেশ হারাচ্ছে ভারসাম্যহীনতা।
×